- Sri Sathya Sai Balvikas - https://sssbalvikas.in/bn/ -

গণেশ চতুর্থী

Print Friendly, PDF & Email [1]
[vc_row][vc_column el_class=”bn-hind-siliguri”][vc_column_text el_class=”bn-hind-siliguri”]
গণেশ চতুর্থী

ভারতীয়দের দ্বারা যেসব পবিত্র উৎসব উদযাপিত হয় তার সবগুলির‌ই সামাজিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রতিটি উৎসবকেই গণ্য করা হত দেবত্বে সংপৃক্ত পবিত্র ঘটনা বা অনুষ্ঠান হিসেবে।এই রকম পবিত্র দিনে, প্রতিটি গৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়, প্রত্যুষে পণ্য স্নানে শরীরকে শুদ্ধ করে, বিশেষ পূজা আচার অনুষ্ঠিত হয়, দেবতাকে নারকেল নিবেদন করা হয় এবং সারাদিন ধরে মন্ত্রপাঠ ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরবন্দনা করা হয়।

বিভিন্ন ব্যক্তিগণের দ্বারা বিভিন্ন ভাবে গণেশ চতুর্থীর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়‌। গণেশের রূপ বা প্রতিকৃতির তাৎপর্য হল; গণেশকে হাতির মাথায় ভূষিত করা হয়েছে কারণ গণেশ তার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও জ্ঞানের জন্য সুবিদিত। হাতি সদা সতর্ক এবং তার পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অতিমাত্রায় সচেতন। এদের স্মৃতিশক্তি অতিশয় প্রখর ও গভীর। গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সে রাজকীয় চালে হেঁটে যায়; তার সেই গমনপথ ঘন জঙ্গলের বুক চিরে পথ তৈরি করে দেয় যার মধ্যে দিয়ে হরিণ প্রভৃতি প্রাণীরা যাতায়াত করতে পারে। নিজের অজান্তেই সে পথ তৈরি করে দেয় যা অন্য প্রাণীদের সাহায্য করে। এই রকমই তার স্বভাব। গণেশ প্রতিটি মানুষকে পরিচালনা করে। গনপতিকে বর্ণনা করা হয় ”বুদ্ধি বিনায়ক” এবং ”সিদ্ধি বিনায়ক” (জ্ঞানী বিনায়ক ও বহু গুণে গুণান্বিত সুশিক্ষিত সিদ্ধিদাতা বিনায়ক) হিসেবে। ”বিনয়” শব্দটাই বলে দেয় তিনি একজন বিনিত নম্র বাধ্য নেতা বা পথপ্রদর্শক যিনি কখনোই কাউকে অতিক্রম করে যাননা বরং সাহায্য করেন গন্তব্যে পৌঁছতে। (অসাধারণ, ব্যতিক্রমী, নায়ক- পরিচালক বা কর্ণধার)। তিনি হলেন মানবগনের বা জনগনের (যারা সনাতন আত্মা সকলের নিয়ন্ত্রক) প্রধান এবং এই কারণেই তিনি গণপতি নামে পরিচিত। তিনি রুদ্র বদ্র ও আর সকল গনদেবতাদের অধিশ্বর। তিনি মানব শরীরের ভিতরের ও বাহিরের দৈবশক্তির অধিশ্বর।

যখন ব্যাসদেব গণেশকে মহাভারত লিপিবদ্ধ করতে অনুরোধ করলেন, তিনি লেখনী সমগ্র জোগাড় না করেই তৎক্ষণাৎ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। তিনি তার তীক্ষ্ণ ছুঁচোল একটা দাঁত ভেঙে ফেললেন ও লেখার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। এভাবেই তিনি অন্যদের সাহায্য করতে সদা প্রস্তুত।

বিনায়ক হলেন বুদ্ধিমত্তা এবং সাফল্য ও কৃতিত্বের প্রতিরূপ। গণেশ পুজোর তাৎপর্য কি ? জীবনের যাত্রাপথে মানুষকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা বন্দনা করি ও পূজা করি সেই গণপতিকে যিনি বাধাবিঘ্ন দূর করা ও সবরকম অন্তরায় লাঘব করার জন্য বিঘ্নেশ্বর নামে বিদিত ।সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই গণেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। তিনি হলেন সেই দেবতা যাকে যেকোনো ধর্মানুষ্ঠানের প্রথমে বন্দনা করা হয়। মহাবিশ্ব প্রদক্ষিণ করার পরিবর্তে কেবল পিতামাতাকে প্রদক্ষিণ করে তিনি এই সত্য সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করেছেন যে মহাবিশ্বের সবকিছু স্বয়ং শিবের দ্বারা পরিমন্ডিত এবং সেই সঙ্গে তার ভাই সুব্র্যমণ্যমের সাথে পৃথিবী পরিক্রমার প্রতিযোগিতায় নিজেকে জয়ী বলে ঘোষনা করেছিলেন।

যখন অন্যান্য দেবতারা পূজিত অভিষিক্ত ও বন্দিত হন তখন তা গণেশ বন্দনা ও পুজোর মাধ্যমেই শুরু হয়। এই উৎসবের মধ্যে দিয়েই শুরু হয় ঈশ্বরের বহুরূপের বন্দনা ও উৎসব – নবরাত্রি , দীপাবলি, সংক্রান্তি, শিবরাত্রি। বর্তমানে আমাদের কর্তব্য হল গণেশের মাঝে মূর্ত বিশ্বজনীন ও শাশ্বত সত্যে ধ্যানস্থ হ‌ওয়া ও তার অনুশীলন করা এবং পবিত্রতা ও বিশ্বাস নিয়ে তার দয়া ও করুণা প্রার্থনা করা যা আমাদের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে আমাদের সব রকম চেষ্টার অগ্রগতিকে উন্নীত করে আমাদের চুড়ান্ত উৎকর্ষতায় পৌঁছে দেয়।

গণেশ চতুর্থী উৎসবের সপক্ষে জ্যোতির্বিজ্ঞানেও উল্লেখ রয়েছে। ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। হাতির মাথার ন‍্যয় দেখতে নক্ষত্র পুঞ্জ সেদিন রাতের আকাশে উজ্জ্বল ভাবে দৃশ্যমান হয়।

তিনটি প্রবনতা দ্বারা মানুষ আবদ্ধ। প্রথমটি হল সবকিছু নিজের বলে আঁকড়ে ধরার বাসনা, কামনা বা আকাঙ্খা। যখন কামনা বা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়না তখন ক্রোধ ফণা তোলে। আর যখন কামনা পূরণ হয়, আকাঙ্খিত বস্তু হস্তগত হয়, তখন তৃতীয় প্রবনতা, লোভ তাকে গ্রাস করে। যদি কারো চাওয়া বা কামনা হিতকর হয় বা সার্বিক মঙ্গলের জন্য হয়, ঈশ্বর তার ওপর করুণা ও আশির্বাদ বর্ষণ করেন। গণেশের কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, রাগ নেই, লোভ নেই। যেসকল মানুষেরা জীবনে ভালো ও মঙ্গলময় কিছু চায় ও যাদের জীবনের লক্ষ্য ধর্মপথে ঈশ্বরের করুণা লাভ, গণপতি দেবের আশির্বাদ তাদের সকলের ওপর বর্ষিত হয়।

তার নির্বাচিত বাহনের দিকে তাকাও, তা হল ইঁদুর। ইঁদুর হল সেই প্রাণী যে তার বাসনার(ঘ্রাণশক্তি দ্বারা দ্রব্য খুঁজে পাওয়া) দ্বারা নিজের ধংস‌ও ডেকে আনতে পারে। মানুষেরা সকলেই এই বাসনার (আমাদের অতীত জীবনের পছন্দ ও পক্ষপাতিত্ব আমাদের মনের মধ্যে মুদ্রিত হয়ে থাকে।) বলি হয়। যে বাসনাগুলি মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে ও দুর্ভাগ্যের শিকার করে তোলে, গণেশ সেই বাসনাগুলি অবদমন করে ও প্রশমিত করে । আবার আমরা দেখি গণেশের মত বিশালাকার দেব ইঁদুরের মত ছোট্ট প্রাণীর ওপর আরোহণ করেছে তাকে নিষ্পেষিত না করে। এই বিষয়টা বলে দেয় জীবন ও আত্মা সবার মধ্যে এক‌ই ভাবে বিরাজমান। সুতরাং দেহের আকার কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আবার ইঁদুর হল রাগ অহংকার, স্বার্থপরতা প্রভৃতি দোষ বা খারাপ স্বভাবের প্রতীক। ইঁদুরের ওপর আরোহণ করে গণেশ দেখাতে চাইছেন মানুষও তার স্বভাবের দোষত্রুটিকে সংযত ও দমন করতে পারে ও তা তার করা উচিৎ। যেহেতু ইঁদুরকে এভাবে সম্মানিত করা হয়েছে, গণেশকে যে পূজো নিবেদন করা হয় তার ভাগ সেও পায়। বাহন, গয়না, আনুসাঙ্গিক উপকরণ হিসেবে ঈশ্বরের সাথে যুক্ত থাকলে বা ভৃত্য হয়ে তার সাথে থাকলে, মানুষ, পশুপাখি, বা জিনিসপত্র‌ও একটা বিশেষ পবিত্র মর্যাদায় অলংকৃত হয়। হাতি, সিংহ, ঈগল, সাপ, এবং অন্যান্য আরও প্রাণীর ওপ‍র দেবত্ব আরোপিত হয়েছে।

হাতির বিশাল মাথা ঈশ্বরের বিশাল হৃদয়কেই নির্দেশ করে, যে ঈশ্বর সদা সহনশীল এবং ভক্তদের কাজ ও ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল।

গণেশের চারটি হাত ঈশ্বরের অতিজাগতিক শক্তির পরিচায়ক। দুটি দৃশ্যমান হাতের পাশাপাশি গণেশের আরো দুটি অদৃশ্য হাত রয়েছে যা তিনি তার ভক্তদের আশীর্বাদ করার জন্য ও বিপদ থেকে মুক্তির‍ পথ দেখানোর জন্য ব্যবহার করেন। এক হাতে তিনি ধরে থাকেন পাশ বা ফাঁস লাগনো দড়ি তার ভক্তদের মনকে আকর্ষণ করার জন্য যাতে তিনি তাদের সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে ঈশ্বরে উপনীত হতে সাহায্য করতে পারে। অপর হাতে তিনি ধরে আছেন অঙ্কুশ, যে অস্ত্র দিয়ে তিনি তার ভক্তদের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করতে পারেন এবং তাদের অনুপ্রাণিত করে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। অন্য হাতে ধরে রয়েছেন মিষ্টি বা লাড্ডু যা ভক্তদের শারীরিক ও মানসিক সাস্থ্য রক্ষা করবে, এটা সেইসব ভক্তদের জন্য পুরষ্কার যারা অখন্ড আনন্দ, পরমানন্দ পাবার জন্য তার কাছে উপনীত হয়। চতুর্থ হস্তে তিনি ঈশ্বরের সব ভক্তদের আশীর্বাদ করেন ও মনকামনা পূর্ণ করেন ও তাদের প্রাপ্য অনুগ্রহ মঞ্জুর করেন।

যাতে গণেশ সব ভক্তদের প্রার্থনা শুনতে পারেন ও সত্য ও মিথ্যার মধ্যে প্রভেদ নিরুপণে সমর্থ হন সেই কারণেই তার কানদুটো খুব বড়। তার স্ফিতোদর বলে দেয় যে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ড তার সাথে রয়েছে।

শিব যখন চূড়ান্ত আনন্দ পরমানন্দে বিভোর এবং তা প্রকাশিত হয়েছে নটরাজ রূপে মহাজাগতিক নৃত্যের মধ্য দিয়ে, গণেশ, যিনি সুর, সুরছন্দের মেলবন্ধন ও সময়ের প্রভূ, তিনি অন্যান্য দেবতাদের নির্দেশ দিচ্ছেন সময়কে মৃদঙ্গ বাদনে ছন্দোবদ্ধ ও চিহ্নিত করতে।তাই এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে অন্য সব দেবতারা খুশিই হন যখন তাদের পুজো করার আগে গণেশ পুজো করা হয়।

[সূত্র– বালবিকাশ গুরু হ্যান্ডবুক, শ্রী সত্য সাই বুকস্ এন্ড পাবলিকেশন ট্রাস্ট, ‘ধর্মক্ষেত্র’ মহাকালি কেভ রোড, আন্ধেরি, মুম্বাই।]

[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]