- Sri Sathya Sai Balvikas - https://sssbalvikas.in/bn/ -

Omkar and Pranayam

Print Friendly, PDF & Email [1]
[vc_row][vc_column el_class=”bn-hind-siliguri “][vc_column_text el_class=” bn-hind-siliguri “]

“তোমার হৃদয়ের গভীরে এবং সমগ্র জগতে যাহা অবিরত প্রতিধ্বনিত হইতেছে, সেই আদি প্রণব ধ্বনি ওম্‌ শ্রবণ কর।”

ওম্‌ হিন্দুদের নিকট অতি পবিত্র শব্দ। এই ওম্‌ তাদের নিকট পরম ব্ৰহ্ম স্বরপ, যিনি অব্যক্ত এবং ব্যক্ত, নিরাকার ও সাকার দুই-ই। এটি সর্ববোধ্য প্রতীক এবং ভগবানের নাম। এটি মহামন্ত্ররূপে ব্যাখ্যাত কারণ এটি ঈশ্বরকে অনুভব করার জন্য মানুষের সবচেয়ে বড়ো সহায়ক। শ্রী সত্য সাই সর্বধর্ম প্রতীকে হিন্দুধমের প্রতীক ওম্‌।

আদি সৃষ্টিতে একমাত্র ছিলেন ব্ৰহ্মন্‌ ; চারধারে বিরাজিত ছিল এক অভূতপূর্ব নৈঃশব্দ। ক্রমশ: নৈঃশব্দ থেকে উদ্ভূত হল ঈশ্বরের শব্দরূপ ও অভিব্যক্তিরূপী নাদব্রহ্ম। তাই আদি শব্দ ওম্‌কার। এই আদি বা মূলশব্দ থেকে ক্রমে ক্রমে পাঞ্চভৌতিক সকল বস্তু – আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মৃত্তিকা প্রকাশিত হল। ওমকার সমগ্র সৃষ্টিতে পরিব্যাপ্ত ; এটি সৃষ্টির প্রাণশক্তি। সেজন্য ওম্‌ শব্দকে বলা হয় প্রণব অর্থাৎ যা প্রাণের মধ্যে প্রবাহিত, সমগ্র প্রাণকে পরিপূর্ণ করেছে। এই বৈদিক মন্ত্রের তাৎপর্য সম্পর্কে বর্তমানে যে সাহিত্যসম্ভার আছে তার পরিমাণ বিপুল। সমগ্র পৃথিবীতে এর মতো গভীর অর্থবহ ও তাৎপর্যতপূর্ণ পবিত্র প্রতীক আর দেখা যায় না। সমগ্র বেদের বিশিষ্ট প্রকাশের মধ্যে ও উপনিষদের ঘোষণাগুলির মধ্যেই মিশিয়ে আছে এই শব্দের ইতিবৃত্ত।

বেদে নিম্নোক্ত শ্লোকটি উল্লিখিত আছে –

“প্রজাপতির্বৈ ইদম্‌ অগ্র আসীৎ
তস্য বাক্‌ দ্বিতীয় আসীৎ
বাগ্‌ বৈ পরমং ব্রহ্ম”

“সৃষ্টির আদিতে ছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা, তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল বাক্‌, এবং এই বাক্‌ই পরম ব্রহ্ম।”

নিউ টেস্টামেন্টে (বাইবেল) সেন্ট জনের সুসমাচারে আছে এই কথাই: ‘সৃষ্টির আদিতে ছিল শব্দ এবং শব্দ ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং শব্দই ঈশ্বর।’

ওম্‌ সাকার ঈশ্বরের সকল নাম ও রূপের দ্যোতক। অন্যান্য ধর্মেও ওম্‌ এর অনুরূপ পবিত্র শব্দ আছে যদিও সেগুলি রূপগত ও গুণগতভাবে যৎসামান্য পরিবর্তিত। খ্রীষ্টানদের কাছে তা আমেন, মুসলমানেরা বলে আমিন,তবু ঐ গুলির ব্যাখ্যা বা ব্যবহার এর সদৃশ নয়।

সকল উপনিষদে ঈশ্বর অব্যক্ত; কিন্তু ঈশ্বরই সাধারণত প্রচলিত ধর্মের ভিত্তি। কারণ আমাদের অধিকাংশের পক্ষে নিরাকার ব্রহ্মে মনঃসংযোগ খুবই কষ্টসাধ্য; সেজন্য অব্যক্ত বা নিরাকার ঈশ্বর অসীম করুণার বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন আকার ও নাম গ্রহণ করে যুগে যুগে অবতাররপে পথিবীতে এসেছেন মানুষকে ঐশী মহিমা অনুভব করানোর উদ্দেশে। তাই অননুভবনীয় অনুভবনীয় হলেন শুধুমাত্র মানুষের জ্ঞানগম্য ও বোধগম্য হওয়ার জন্য। এইভাবেই কিংবদন্তী পরম্পরায় আমরা সন্ধান পেলাম ইষ্টদেবতার – আমাদের সেই পরম প্রিয়ের। এইভাবে বিভিন্ন ঐশ্বরিক রূপ, শিব, বিষ্ণু, রাম, কৃষ্ণ, দেবী, গণেশ ইত্যাদির প্রকাশ হল। প্রকতপক্ষে মানুষের মনপ্রাণ যা চায়, ঈশ্বরের সেইসব নাম ও রূপ পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে ওম্‌ দ্বারা।

প্রত্যেক নামের একটি করে মূল শব্দ আছে- বীজ-অক্ষর। সেই অনুসারে ‘অ’ ব্ৰহ্মার দ্যোতক, ‘উ’ বিষ্ণর দ্যোতক এবং ‘ম’ মহেশ্বর বা শিবের দ্যোতক। ব্ৰহ্ম শব্দের শেষ অক্ষর ‘অ’, বিষ্ণু শব্দের শেষ অক্ষর ‘উ’, মহেশ্বরের প্রথম অক্ষর ‘ম’— প্রধান বা বীজ-অক্ষর। ওম শব্দের উচ্চারণ পদ্ধতি অ উ ম। এর দ্বারা ত্রিমূর্তি অথাৎ হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী ঈশ্বরের ত্রয়ীরূপ বোঝায়। এখন দেখা যাক ভগবানের অন্য নাম- লক্ষ্মী, পার্বতী, গণেশ, মারুতি বা অন্যান্য নাম-রূপ-যা ইষ্টদেবতা রপে হিন্দুদের অন্তরে বিরাজমান, তাঁরা সকলেই ওম্‌, দ্বারা কিভাবে প্রকাশিত হন।

‘অ’ ব্রহ্মকে বোঝায়। সরস্বতী কোথায় বাস করেন? উত্তরে বলা যায়, ব্ৰহ্মার জিহ্বাতে। সরস্বতী হচ্ছেন ব্রহ্মার অভিব্যক্তি, তাঁর (ব্রহ্মার) বাক্য-শক্তি। এই সরস্বতী ব্রহ্মা হতে অভিন্ন। সরস্বতী ব্রহ্মার জ্ঞান ও বুদ্ধির দ্যোতক। সুতরাং ‘অ’-এর মধ্যে দেবী সরস্বতীর গুণাবলী বিদ্যমান। বিষ্ণুর বক্ষস্থলে লক্ষ্মীর আবাস। তিনি এবং বিষ্ণু অভিন্ন। বিষ্ণুর করণার দ্যোতক তিনি। সুতরাং ‘উ’ অক্ষর বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর পরিচায়ক।

এরপর আসেন পার্বতী। শিব ভিন্ন পাবতীর স্বতন্ত্র কোনো সত্তা বা বাসস্থান নেই। তিনি শিবের অপরিহার্য অংশ, অর্ধাংশ– অর্ধনারীশ্বর নামে পরিচিত শিবমূর্তির তাই অর্ধাঙ্গ পুরুষ, অর্ধাঙ্গ নারীরূপ। পার্বতী শিবের মহতী ক্ষমতার প্রকাশ – তাঁর শক্তি। পার্বতী বিহনে শিব সংসারত্যাগী শ্মশানচারী। পার্বতী সহ তিনি শুভদ । মহেশ্বর-পরিচায়ক ‘ম’ অক্ষর তাই মাতা পার্বতীরও পরিচায়ক।

এই ভাবে বোঝা যায় যে, ঐশ্বরিক কোনো নাম বা রূপ ওম্,কারের গন্ডির বাইরে নয়। সুতরাং ওম্‌, শব্দটি ঈশ্বরের প্রতিটি নাম ও রূপকে পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং ঐশ্বরিক অনুভূতি লাভের জন্য একক বা সার্বিক আকুলতাকে তৃপ্ত করে। ওম্‌কার উচ্চারণে সকল দেবতা সাড়া দেন। এইজন্য বলা হয় যে, ওম্‌ধ্বনি বাবার সরাসরি দূরভাষ (টেলিফোন) সংখ্যা। যে মুহূর্তে আমার, ওম্‌ উচ্চারণ করি সেই মুহূর্তেই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে তা তিনি পুট্টাপর্তী, অনন্তপুর বা বৃন্দাবনে থাকুন বা ভ্রমণে রত অন্য কোথাও।

বাবাও বলেছেন যে ওম্‌কার ও রামনাম এক। রাম প্রণব দ্বারা সূচিত হন এবং সাহায্যকারী-ধবনি অ-উ-ম দ্বারা যথাক্রমে লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন সূচিত হন।

সমগ্র শব্দময় জগতের (বাক্যের), বিজ্ঞানের ভিত্তির এবং ধ্বনি প্রপঞ্চের মূল এবং স্ফোট হচ্ছে ওম্।

প্রণব শব্দে সকল ধবনি ও শব্দের মূল নিহিত। যে—োনো ধ্বনি, যা অন্য অক্ষর বা বর্ণসহযোগে উদ্ভূত (ধ্বণিত) বা উচ্চারিত হয়, সে সবই অ-উ-ম এই তিনটি অক্ষরের স্বরধ্বনির অন্তর্গত। উদাহরণ স্বরূপ দেবনাগরী অক্ষর ক, খ, গ, ঘ, (অ-এর মতো)-যার উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ; চ, ছ, জ, ঝ, (উ এর মতো) যার উচ্চারণ স্থান তালু,; ত, থ, দ, ধ উচ্চারিত হচ্ছে জিহ্বার অগ্রভাগ দ্বারা এবং প, ফ, ব, ভ, ম (‘ম’-এর মতো)— ওষ্ঠ সাহায্যে উচ্চারিত হয়। যেহেতু প্রণব শব্দ সব প্রকার উচ্চারিত শব্দের মূল, সেজন্য ওম্‌কে বেদের সার বলা হয়। যেহেতু সমস্ত নাম প্রণবের অন্তর্গত, সেহেতু ভগবানের আরাধনা ও নামস্মরণের প্রধান সোপান প্রণব।

আমাদের সকল প্রকার দৈহিক ও আধ্যাত্মিকবোধ, এবং দেহজ স্তর থেকে দৈবীস্তরে উত্তরণ সম্বন্ধে চেতনতা জাগায় ওম্।

উপনিষদসমূহ ঘোষণা করে ওম্‌ দ্বারা সেই আত্মা, সূচিত হন, যিনি অদ্বৈত ব্রহ্মচৈতন্য স্বরপ ব্ৰহ্ম বা আত্মা। এই ব্রহ্মস্বরূপ আত্মার চার রকম অবস্থা আছে। আমাদের প্রত্যেকের এই তিনটি চেতনস্তরের কথা জানা আছে

১) জাগ্রত,

২) স্বপ্ন এবং

৩) সুষপ্তি (গভীর-নিদ্রা)। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকের পর্যায়ক্রমে এই চেতনা স্তর সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাও আছে।

৪) তুরীয় অবস্থা (যোগীরা চৈতন্যের যে উচ্চস্তরে অবস্থান করেন, সেই অতীন্দ্রীয় পরম চৈতন্যময় অবস্থাকে তুরীয়াবস্থা বলে।)

ওম্‌ চৈতন্যের এই চার অবস্থাকে প্রকাশ করে।

ওম্‌কারের,

‘অ’ জাগরিত অবস্থা (এবং আমাদের স্থুল দেহ),

‘উ’ স্বপ্নের অবস্থা (এবং আমাদের সুক্ষ্ম শরীর) ও

‘ম’ সুষুপ্তি অবস্থা (এবং আমাদের কারণ শরীর) বোঝায়।

আরো বলা যায় যে, ওম্‌ উচ্চারিত হওয়ার পর বিরাজ করে এক নিঃশব্দতা বা অশব্দ অবস্থা, যখন আমাদের ওষ্ঠ পরম্পর সন্নিবদ্ধ থাকলেও ওমের অবশিষ্ট অ-শব্দায়িত প্রতিধ্বনি আমাদের কানে অনুরণিত হতে থাকে। নৈঃশব্দের সেই অনুরণনে, মাত্রাসহ ওমকার বা অমাত্রা ওম দ্বারা একমাত্র সেই চিরন্তন আত্মা যিনি জাগরণ, স্বপ্ন ও সুষুপ্তির অতীন্দ্রিয় বোধের মধ্যে মিশে আছেন তিনিই প্রতীয়মান হন। এটি আমাদের স্থুল, সুক্ষ্ম ও কারণ দেহ অতিক্রম করে আরো গভীরে, আমাদের জীবসত্তার অস্তিত্ব জ্ঞাপন করে। এটিই অন্তর্লীন ব্যক্তিসত্তা।

ওম্‌, যথাসাধ্য ধীরে উচ্চারণ করতে হবে। ‘অ’ উচ্চারিত হবে কণ্ঠ থেকে আরম্ভ হবে নাভিদেশ থেকে), ‘উ’ জিহ্বায় আবর্তিত হতে থাকবে, যতক্ষণ ক্রমবর্ধমান ধ্বনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে (উচ্চগ্রামে) না ওঠে, এবং শেষ হয় ‘ম’ দ্বারা ওষ্ঠে এসে। ওষ্ঠ এই সময় বক্ররেখায় ‘ম’ ধ্বনিকে ধীরে ধীরে নামিয়ে আনবে ঠিক যেমন উর্ধে (উচ্চগ্রামে) ওঠার সময় উঠেছিল (ততটুকু সময় নিয়ে) এবং অমাত্রা (মাত্রাহীন) ওম্‌-এর সঙ্গে ক্রমশ নিঃশব্দ হয়ে হৃদয়ের গভীরে অনুরণিত হতে থাকবে।

যার শ্রবণশক্তি খুবই সুক্ষ্ম, সে ওম্‌ শব্দ শুনতে পায়- যার প্রতিটি, ধ্বনিতে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান ঘোষিত হয়। পঞ্চভূতের প্রত্যেকটি এর দ্বারা অনুরণিত হয়। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ভগবানকে আহান করা ছাড়াও প্রতিটি ধ্বনিতে ওম্‌ শব্দের মাধ্যমে, সর্ব শক্তিমান ভগবানের উপস্থিতি ঘোষণা করে। মন্দিরের ঘণ্টার ওম্‌ ধবনির মতে মানুষের বুকের মধ্যে, ওম্‌ ধ্বনি নিঃশব্দে অহরহ বেজে চলেছে। সুষম্না নাড়ীতে অবিরাম যে অনাহত ওম্‌, ধ্বনির অনুরণন হয়ে চলেছে, আমাদের স্থুল অনুভূতি তা শুনতে পায় না। অবিরাম “সোহম”, “সোহম”, ধ্বনি পর্যবসিত হচ্ছে ওমের প্রতিধ্বনিতে। এটি আমাদের শ্বাসক্রিয়ার সুক্ষ্ম ধ্বনি। সঃ (উচ্চারণকালে ‘সো’) অর্থে তিনি (ঈশ্বর) এবং ‘হম’ অর্থে ‘অহম’- আমি ব্যক্তিসত্তা। এটি মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের মিলনের যোগসূত্র।

যদিও ঈশ্বরের নামসমূহ স্বভাবতই উচ্চ শক্তিশালী, তবু তাদের পুরোভাগে ওম্‌ ধ্বনিত হওয়া প্রয়োজনীয়। প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে সর্বাগ্রে গণেশ পূজা ব্যতীত কোনো ধর্ম, কর্ম এমন-কি, গণেশের মাতা-পিতা অর্থাৎ পার্বতী ও শিবের পূজাও ফলদায়ী হয় না। ঠিক সেইমত কোনো মন্ত্র উচ্চারণ, কোনো নাম স্মরণ বা কীর্তনের পরে (প্রথমে) ওম্‌, সংযোজন ব্যতীত আরম্ভ করা অনুচিত। সকল পবিত্র আবৃত্তির পরে, ওম্‌, উচ্চারণ করতে হবে ; এমন-কি, যিনি স্বয়ং প্রণবাকার সেই গণেশের নাম স্মরণের পূর্বেও আমাদের বলতে হবে, ওম্‌ গণেশায় নম:। সেই জন্য বোঝা উচিত যে, আদিতে ওম্‌কারের সংযোজন, মন্ত্র বা নামের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে।

ওম্‌কার উচ্চারণ পদ্ধতি

প্রথম স্তর উচ্চৈ:স্বরে মন্ত্রোচ্চারণ। জাপক উচ্চৈঃস্বরে ওমকারের পুনরাবৃত্তি করে যাতে ঐ শব্দে (ওম্‌) মনঃসংযোগ হয়। প্রথমাবস্থায়, যতদিন মন জপে না অভ্যস্ত হবে, ততদিন এই পদ্ধতি শ্রেয় । এই শব্দ উচ্চারণ পদ্ধতিকে বৈখরী বলা হয়।

দ্বিতীয় স্তর মধ্যমা যেখানে উচ্চারণ শব্দ শোনা যায় না, মন্ত্র বা পবিত্র শব্দ উচ্চারণের সময় কেবল মাত্ৰ ওষ্ঠ নড়ে। এটি শব্দ ও নিঃশব্দের (অশব্দ) মাঝামাঝি অবস্থা।

তৃতীয় স্তরে উচ্চারণকে বলা হয় পশ্যন্তি— যখন কোনো শব্দ থাকে না। কোনো শব্দ উচ্চারণ করা হয় না- কিন্তু মনে মনে বিনা আয়াসে জপের আবৃত্তি (উচ্চারণ) চলতে থাকে।

চতুর্থস্তরে উপনীত হলে মন্ত্রের বিস্মরণ হয়। শুধুমাত্র চেতন মনে তার অনুভূতি (প্রভাব) রয়ে যায়। এটি জপের পরা অবস্থা। এই অবস্থা তুরীয় অবস্থা,যেখানে বিরাজ করে কেবল প্রশান্তি, সুখ ও আনন্দ তরঙ্গ।

ওম্‌কার আবৃত্তি করতে হলে আমাদের সচেতন সাধনা করতে হবে। আমাদের হৃদয়গ্রাহী করার জন্য, ওম্‌কারের সঙ্গে আমাদের ইষ্টদেবতার নাম যুক্ত করতে হবে। এইভাবে জপ আমাদের প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই নিত্য নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হবে।

ওম্‌কার অমরত্ব ও মোক্ষদান করে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে চিরন্তন মিলন ঘটায়। গীতার অষ্টম অধ্যায়ের অক্ষর পর-ব্রহ্ম যোগ-এ শ্রীকষ্ণ বলেছেন,

“ওমিতেকাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্‌ মামনুস্মরন্‌,

য: প্রয়াতি ত্যজন্ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্‌।”

‘…একাক্ষর ওম্‌, উচ্চারণপূর্বক আমাকে স্মরণ করিতে করিতে যিনি দেহত্যাগ করিয়া প্রস্থান করেন, তিনি পরমগতি প্রাপ্ত হন।’

আমাদের নিদান (মৃত্যু) কালে যদি আমরা ওম্‌, উচ্চারণ বা স্মরণ করি, তবে আমরা জন্ম-মৃত্যু রহিত হই। আধ্যাত্মিক উন্নতি ছাড়াও ওম্‌কার উচ্চারণ আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের বিশুদ্ধতা ও সুস্বাস্থ্য প্রদান করে।

ওম্‌কার জপ আমাদের সর্বক্ষণের অনুরাগের বিষয় হওয়া উচিত। এই অনুরাগ যেন অভ্যাসে পরিণত হয়। এই অভ্যাস নিয়মিত হলে, ক্রমশ আমাদের প্রকৃতিতে স্থায়ী আসন করে নেবে।

ওম্‌কার উচ্চারণকে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সমলয়-বিশিষ্ট ও নিয়মিত করতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের এই সমতা ও নিয়ম, অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জাপককে (অভ্যাসকারীকে) দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য, মানসিক পবিত্রতা, ধীশক্তির ঔজ্জ্বল্য, হৃদয়ের উন্মীলন, আধ্যাত্মিক বিকাশ প্রভৃতি প্রদান করে।

আজ থেকে ওম্‌ যেন আমাদের সর্বক্ষণের সহচর হয়, আমাদের মন যেন উহাতে যুক্ত থাকে। একবার ওম্‌, উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এক ধাপ অগ্রসর হয়ে, বাবার নিকট হতে নিকটতর হতে পারব— অবিলম্বে বা বিলম্বে, পাদপদ্মে পৌঁছাব— তার নিকটতম ও প্রিয় হতে।

“বিন্দুযুক্ত ওম্‌কার (শাশ্বত পুরুষ) বোঝায় যে ওম্‌ থেকে আমাদের উৎপত্তি, আমরা তার বিন্দু, স্বরূপ। যোগীরা সর্বদাই সত্যকে স্মরণে রেখে এর ধ্যান করেন। প্রণব আবৃত্তি ও বোধগম্যতার দ্বারা পরম শান্তি ও মোক্ষ লাভ হয়। আমি প্রণবকে (শাশ্বত পুরুষকে) প্রণাম জানাই।”

জয়গুরু ওম্‌কার জয় জয় সদ্‌গুরু ওম্‌কার।
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]