- Sri Sathya Sai Balvikas - https://sssbalvikas.in/bn/ -

ভারতীয় সংস্কৃতি

[1] [2] [3] [4] [4] [4]
Print Friendly, PDF & Email[1]
[vc_row][vc_column el_class=”bn-hind-siliguri”][vc_column_text el_class=”bn-hind-siliguri”]
ভারতীয় সাংস্কৃতিক রীতিনীতির সংক্ষিপ্ত রূপরেখা

কোনো জাতির সাংস্কৃতিক রীতি ও আচার ব্যবহারের মূল নিহিত থাকে তার আদর্শ ও মূল্যবোধের মধ্যে, যা সে জাতি সযত্নে বর্ধিত ও লালিত পালিত করেছে ঐতিহাসিক ভাবে। সেই আদর্শ ও মূল্যবোধ- যা জাতির কাছে প্রিয় এবং জীবনে যথাযথ প্রয়োগের জন্য আগ্রহী তার প্রকাশ হয় ঐ জাতির অভ্যাস, ব্যবহারশৈলী ও মনোভাবের দ্বারা। এইগুলিই হল একটি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। ঐতিহাসিক ঘটনাবলী অবশ্য একটি জাতির জীবনে তার অবশ্যম্ভাবী ও অপরিহার্য’ প্রভাব বিস্তার করে থাকে- আমাদের জাতীয় জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতে বহু আলোড়ন হয়েছে, কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাণ প্রাচুর্যের জন্য তার চিরকালীন বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা পুরোমাত্রায় প্রাণবন্ত রয়েছে। ইতিহাসের নানাবিধ উত্থান পতনের আবর্তে’র মধ্যেও ভারতীয় সংস্কৃতি তার মূল নীতিকে পূর্ণমাত্রায় বজায় রেখেছে। পাঁচ হাজার বৎসর আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে প্রেরণায় উদীপ্ত হয়েছিলেন তা আজও আমাদের উদ্বুদ্ধ করছে এবং আমাদের অস্তিত্বকে অর্থবহ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ করে তুলছে।

এই বিশাল উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের জীবনযাত্রা প্রণালী যদিও অনুসৃত হয়, তবুও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী অবধি সকল অধিবাসীদের সংস্কৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল ‘আধ্যাত্মিকতা’। অনন্তের ধারণা অথবা বিশ্বের চিরন্তনত্ব সম্বন্ধে সচেতনতা ভারতীয়দের সহজাত জ্ঞান। বাবা বলেন যে ভারতীয় সংস্কৃতি হৃদয়জাত বস্তু; যারা দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, ভগবদ্‌প্রেম এবং ভগবানের সমগ্র সৃষ্টিকে ভালবাসা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভারতীয় ঐতিহ্যে আধ্যাত্মিকতার স্থান সকল বস্তুতান্ত্রিকতার উর্ধ্বে’ এবং তাদের বিশ্বাস যে, অতীন্দ্রিয় (ভগবান)কে না জানলে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎকে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত হওয়া যায় না। সেজন্য সত্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাগতিক সকল কার্যাবলী নির্ধারিত হবে- এইটাই ভারতীয় চিন্তাধারা। সকলের সঙ্গে আধ্যাত্মিক আত্মীয়তাবোধ, সকলের সঙ্গে ঐক্যতাবোধ, সৃষ্ট সকল বস্তুতে সমত্ববোধ এবং ঈশ্বরের সর্বব্যাপিত্ব- এই চিরন্তন শাশ্বত সত্যগুলি যুগ যুগান্ত ধরে ভারতীয় কৃষ্টিকে পরিবর্ধিত, পরিশাসিত ও পরিচালিত করে আসছে। বাবা প্রশ্ন করেন, ‘হঠাৎ যদি তোমার পা কারো শরীরে লেগে যায় তবে তুমি তার শরীরের সেই অংশকে নমস্কার কর কেন?’ বাবা এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ভারতীয়দের বিশ্বাস যে ঈশ্বর সর্বত্র বিদ্যমান এবং সকল বস্তুই পবিত্র ও বিশুদ্ধ।’

সংস্কৃতি সম্বন্ধে সাধারণ ভাবে বলা গেলেও, ‘সংস্কৃতি’ শব্দটির সম্যক উপলব্ধিগত অর্থ’ নির্ধারণ করা সহজসাধ্য নয়। ডঃ ভি. কে. গোকক আমাদের যে সুপ্রযুক্ত সংজ্ঞাটি দিয়েছেন তা হল জীবনের সকল আচরণকে নিখুঁত করার অভীপ্সা। ডঃ গোকক বলেন, সংস্কৃতিতে ব্যক্তিগত অভ্যাস, মনোভাব ও আচার-ব্যবহার ছাড়াও সামাজিক পরিমণ্ডলও সংশ্লিষ্ট থাকে। তিনি বলেন, ‘এইটি এমন একটি মৌলিক বৃত্ত যার মধ্যে রয়েছে জ্ঞান, বিশ্বাস, নানাবিধ প্রথ্য এবং সেই সঙ্গে রয়েছে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ।’ এই হিসাবে ভারতীয় সংস্কৃতি এতই বিশাল যে সে তার অধিবাসীদের বিভিন্ন জীবনযাত্রার দৃষ্টিভঙ্গিকে অনায়াসে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যদিও ভারতীয় সংস্কৃতি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য যুগ যুগ ধরে অক্ষুণ্ণ রেখেছে, তথাপি ভারতে আগত অভারতীয় বৈদেশিক সংস্কৃতির প্রবাহকেও গ্রহণ করেছে। মুসলমান, পর্তুগীজ, ফরাসী এবং বিশেষ করে ইংরেজ প্রভাবকে আমরা আত্মভূত করেছি। ধর্ম ও সংস্কৃতি ভিন্ন হলেও ভারত কখনো বিজাতীয় বহিরাগতদের গ্রহণে পরাখে হয় নি। ভারত তার মাটিতে বিভিন্ন ধর্মমতের প্রসারকে বাধা দেয় নি; পরন্তু সে যে-কোনো ধর্মমতের প্রচারককে সাদরে স্থান দিয়েছে। ইহুদী ও জোরাস্ট্রিয়ান- যারা জগতের অন্যান্য স্থানে নির্যাতন ভোগ করেছিল- ভারতীয়রা তাদেরও সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছে। ভারতের সংস্কৃতি মূলত ভারতীয় হলেও বর্তমানে এই সংস্কৃতির বিস্তীর্ণ অবয়বে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ভাবধারার সমন্বয় ঘটেছে।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মিশ্রণের প্রভাব পূর্ণ’ মাত্রায় পরিলক্ষিত হয় ভারতীর চারুকলা, ভাষা এবং ভারতীয়দের আচার-অনুষ্ঠান ও পূজার্চনার মধ্যে।

আমাদের দেশের বিস্তীর্ণ’ সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত প্রাকৃতিক গঠনই বুঝিয়ে দেয় যে ভারতীয়দের প্রদেশগত ভাবে খাদ্য ও পোশাক পরিচ্ছদ কেন এত বিভিন্ন। পৃথিবীর মধ্যে আয়তনে ভারতবর্ষ’ সপ্তম বৃহত্তম দেশ। এর বিস্তৃতি প্রায় ৩২,৮৭,৭৮২ বর্গ মাইল। ভারতের উপকুলরেখা ৬১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। সমগ্র ভারতবর্ষ’ চারটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভক্ত- উত্তর ও উত্তরপূর্বে’ বিস্তৃত পর্বতাঞ্চল; সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমতলভূমি: মরুভুমি অঞ্চল; এবং দাক্ষিণাত্যের উপদ্বীপ। প্রধান প্রধান নদীসমূহ হল- হিমালয় পর্ব’ত থেকে উৎপন্ন প্রধান নদীসমূহ, দাক্ষিণাত্যের নদীসমূহ, উপকুলবর্তী নদীসমূমূহ এবং অন্তর্দেশীয় নদীসমূহ। ভারতবর্ষে’র জলবায়ু ও প্রাকৃতিক অবস্থার মধ্যে বিস্ময়কর বৈপরীত্য বিদ্যমান। ভারতে বহু ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে। ১৯৭৮ সনের মার্চ মাসের হিসাব অনুযায়ী ভারতবর্ষে’র মোট জনসংখ্যা ৬৩.৮৩ কোটি। জনসংখ্যার প্রায় ৮৩% হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বাকি অধিবাসীরা নানা ধর্মাবলম্বী যথা, মুসলমান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রীস্টান ও পার্শী। ইহুদীরা আমাদের জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্রাংশ। প্রকৃতপক্ষে ভারতের বিপুল জনসংখ্যার নিতান্ত ক্ষুদ্র অংশই সহরে বাস করে। শহরবাসীরা জন- সংখ্যার যে সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নয় তা হল আমাদের ৭০% ই গ্রামে বাস করে। যখনই আমরা ভারতীয়দের সংস্কৃস্কৃতিগত অভ্যাস এবং আচরণ আলোচনা করব তখনই ভারতবর্ষে’র ভৌগোলিক সংস্থান ও অধিবাসীদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।

[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]
Endnotes:
  1. [Image]: #