শ্রী সত্য সাই বালবিকাশের উদ্দেশ্য মানবিকতার উৎকর্ষসাধন। ভারতবর্ষে এর গোড়াপত্তন হয় ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবার পিতামাতাদের প্রতি এই আহ্বানের জবাবে যাতে তিনি পিতামাতাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তা, চরিত্রগঠন এবং মানবজাতির একত্বের বার্তাবহ ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য সচেতন করেছিলেন। .
ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবা বিশ্বব্যপী প্রতিটি মানুষকে সক্রিয় নৈতিক জীবনযাপনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে শ্রী সত্য সাই বালবিকাশ কর্মসূচির প্রবর্তন করেন। এই লক্ষ্যের কথা স্মরণে রেখে সপ্তাহে অন্তত এক ঘন্টা কয়েকটি সহজ অথচ কার্যকর শিক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে বালবিকাশ ক্লাস পরিচালনা করা হয়। এই পদ্ধতি গুলি হলঃ
প্রার্থনা
সমবেত সঙ্গীত
নীরব উপবেশন
গল্প বলা
দলগত কার্য
শিক্ষাক্রমের বিশেষত্ব
পাঁচ থেকে পনেরো বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনটি বিভাগে বিভক্ত মোট নয় বছরের শিক্ষাক্রম
সত্য ধর্ম শান্তি প্রেম ও হিংসা এই পাঁচটি মৌলিক মূল্যবোধ জীবনে অনুশীলন করতে শেখার জন্য পরিকল্পিত
শিক্ষাক্রমের লক্ষ্যনীয় বিষয়
প্রথম বিভাগ ৬ থেকে ৯ বছর শুরুর সময়টাই চিরদিনের জন্য ছাপ রেখে যায়
বিভিন্ন দেব দেবীর স্তোত্র
মূল্যবোধের গল্প
নামাবলী ভজন/ মূল্যবোধের গান
ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবার জীবনী পাঠের সূচনা
কর্মসূচীর বৈশিষ্ট্য
ক্লাশের বাহ্যিক শৃঙ্খলা যেমন নির্দিষ্ট পোষাকে ক্লাশে আসা,ছেলে ও মেয়ে পৃথক বসার ব্যবস্থা, অনুসরণ করা
ক্লাসের বাইরে জুতা গুলি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা
এই শৃঙ্খলা বাল বিকাশ ক্লাস ছাড়া অন্যত্র বজায় রাখতে সচেষ্ট হওয়া
পিতা মাতাকে শ্রদ্ধা করা এবং প্রার্থনার( সকালে, খাবার আগে, রাত্রে) মাধ্যমে সারাদিন ঈশ্বরকে স্মরণ করা
প্রত্যেকের প্রতি যত্নশীল, হওয়া ভাগ করে নেওয়া এই মূল্যবোধ গুলি পালন করা।’ ঈশ্বরই একমাত্র বন্ধু’ এই সত্যকে উপলব্ধি করা
রামায়ণ,মহাভারতের নির্বাচিত অংশ।নামাবলী ভজন/মূল্যবোধের গান
সাধক/মহাপুরুষদের জীবনী,সর্বধর্ম সমন্বয়ের গল্প
ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবার জীবনী ও বাণী
শ্রী সত্য সাই বাল বিকাশের দ্বিতীয় বিভাগ সম্পূর্ণ হওয়ার পর
ভগবত গীতার শিক্ষা প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োগ করা। সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা করা এবং সকল ধর্মের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলিকে জানা। সকল উৎসব পালন করা
বিবেকের বাণী অনুসরণ করা ভালো এবং মন্দের মধ্যে বিচার করা
দৈনন্দিন জীবনে পাঁচটি অর্থাৎ ভক্তি, ভালো মন্দের বিচার, নিয়মানুবর্তিতা, কর্তব্য এবং দৃঢ়সঙ্কল্পের ভূমিকা
ঈশ্বর আমাদের সর্বদা পর্যবেক্ষণ করেন এবং পথনির্দেশ দেন। তাঁকে গুরু এবং পরামর্শদাতা হিসেবে গ্রহণ করা
তৃতীয় বিভাগ 12 থেকে 15 বছর কৈশোর বয়স পিচ্ছিল ঠকে যাবার বয়স
ভজগোবিন্দম এবং ভগবদ গীতার নির্বাচিত শ্লোক
মহাপুরুষ, যেমন রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের জীবনী
ভজন/মূল্যবোধের গান ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতা
শ্রী সত্য সাই বালবিকাশ কর্মসূচীতে মাতাপিতার ভূমিকা
তৃতীয় বিভাগ সম্পূর্ন হওয়ার পরে
প্রত্যেকের মধ্যে দিব্যত্বকে দর্শন করা, জীবনের সারকথা এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অবহিত হওয়া। (ভজ গোবিন্দ ব্যবহারিক প্রয়োগ)
জীবনে উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পন্থা অনুসন্ধান করা এবং তা অনুসরণ করা( ভগবদ গীতার ব্যবহারিক প্রয়োগ)
দেশকে ভালবাসা,মাতৃভূমি্র প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি;সমাজসেবার মাধ্যমে সামাজিক চেতনা জাগ্রত করা
আমাদের দেশের বিভিন্ন রীতিনীতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের মধ্যে যে ঐক্য/ দিব্যত্ব তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য্য উপলব্ধি করা; বাসনার সীমিতকরণ করতে শেখা
চিন্তা, শ্বাস প্রশ্বাস এবং সময়ের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের গঠন ও বিদ্যালয়,গৃহ এবং সমাজে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার দক্ষতা অর্জন।
সুষ্ঠভাবে সমস্যার সমাধান করা,নেতৃত্ব দেওয়া অথবা কোন কাজ সুচারু ভাবে পরিচালনা করার দক্ষতা অর্জন করা। জীবন হল এক খেলা,এতে অংশ নাও জীবন হল এক প্রতিযোগীতা,এর সম্মুখীন হও। ভগবান বাবার এই বাণী্টি অনুধাবন করা। বৈ্দিক মহাবাক্যগুলির তাৎপর্য্য হৃদয়ঙ্গম করে ‘অহম ব্রহ্মাস্মি’ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।
উপরিলিখিত উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি নিছক একটি তালিকা নয়। এগুলি এই দিব্য, সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসবার জন্য প্রয়োজনীয মূল শিক্ষণীয় বিষয়গুলিকে চিহ্নিত করে। শ্রী সত্য সাই বালবিকাশের সার্বিক উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং সেই মূল্যবোধগুলি দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনে অভ্যাস করার দক্ষতা অর্জন করতে শেখা যার সাহায্যে ব্যক্তিগত,পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় জীবনে সম্প্রীতি নিয়ে আসা সম্ভব।
আজকের সমাজের বর্তমান সমস্যাগুলির উৎস হল শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যবোধকে অবহেলা করে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া। শ্রী সত্য সাই বালবিকাশ এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এর প্রভাব থেকে যুব প্রজন্মকে মুক্ত করবার প্রয়াস করে। বালবিকাশ কর্মসূচিতে পিতামাতার একটি মুখ্য ভূমিকা আছে। পেরেন্টিং কর্মসূচিতে পিতামাতাকে অনুরোধ করা হয়, যাতে তারা সন্তানদের গণমাধ্যম এবং ভোগবাদের কুপ্রভাব থেকে দূরে রাখেন, প্রকারান্তে তাদের মূল্যবোধের শিক্ষা দেন।সুতরাং বালবিকাশ কর্মসূচির সাফল্যের জন্য পিতামাতার পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত বিষয় গুলি যথাসাধ্য পালন করার অঙ্গীকার করা একান্ত প্রয়োজন।
শ্রী সত্য সাই বালবিকাশ কর্মসূচীতে মাতাপিতার ভূমিকা
৯ বছরের কর্মসূচির প্রতি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ থাকা
নিয়মিত নির্ধারিত সময়ে ছেলে মেয়েদের বাল বিকাশ ক্লাসে নিয়ে আসা
মূল্যবোধ ভিত্তিক বাল বিকাশ কর্মসূচির উপর সম্পূর্ণ আস্থা
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে লব্ধ এই সেবার মহত্ব উপলব্ধি করা
নিয়মিত অভিমত জানানো
পিতা-মাতার সঙ্গে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে যোগদান এবং শিশুর উন্নতির পর্যালোচনা করা
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি বিধান সহজতর করার উদ্দেশ্যে পেরেন্টিং অনুষ্ঠানে যোগদান
ব্যক্তিত্বের সামগ্রিক ও সম্পূর্ণ বিকাশ
শ্রী সত্য সাই বাল বিকাশ এইভাবে একজন শিশুর ব্যক্তিত্বের পঞ্চমুখী বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে
দৈহিক
বৌদ্ধিক
আবেগজনিত
মানসিক এবং
আধ্যাত্মিক
শ্রী সত্য সাই বালবিকাশের মতো একটি বহুমুখী উদ্যোগ এইভাবে প্রতিটি শিশু/ছাত্রছাত্রী/যুবক যুবতীকে অন্তর্নিহিত সুপ্ত মূল্যবোধকে উপলব্ধি করতে শেখায়,সেগুলিকে দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাস করতে শেখায় এবং তারা প্রত্যেকে দিব্য, এই সত্যকে অনুধাবন করতে সাহায্য করে। এক কথায় তাদের মানবিক উৎকর্ষতা সাধনের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটাই হল শ্রী সত্য সাই এডুকেয়ারের মাধ্যমে শ্রী সত্য সাই বাবার বার্তা।
ব্যক্তিত্বের সামগ্রিক ও সম্পূর্ণ বিকাশ
আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস হবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা এবং জীবনের সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে তাদের সাহায্য করা আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস হবে ছেলে মেয়েদের অন্তর্বাসী ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে এবং সদা সর্বদা সঠিক পথ অবলম্বন করতে সাহায্য করা আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস হবে ছেলেমেয়েদের প্রগতিশীল আত্মবিশ্বাসী সৃষ্টিশীল স্পষ্টবাদী এবং সুখী করে গড়ে তোলা আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস হবে ছেলেমেয়েদের সাহায্য করা যাতে তারা পরিবার সমাজ এবং দেশের সেবায় প্রতি হয় আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস হবে ছেলেমেয়েদের ভারতের আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা