তৃতীয় নয়নের তাৎপর্য

Print Friendly, PDF & Email

তৃতীয় নয়নের তাৎপর্য

শিব হলেন ঈশ্বরের সেই রূপ যা বিঘটন ও লয়ের প্রতীক।

বিষ্ণু ও শিব উভয়েই সেই অদ্বিতীয়, পরম বিশ্বসত্ত্বা। শিব হলেন বৈরা গ্যের প্র তীক…. সম্পূর্ণ নিরাসক্ত ,যিনি নিজের ইচ্ছায় নিখুঁতভাবে মহাজগৎকে গড়েছেন, কিন্তু নিজের সৃষ্টির এক কণার তাঁর আকাঙ্খা নেই। শিব—-মঙ্গল। মন্মথ বা মানুষের ষড়রিপুকে তিনি ভস্মীভূত করেন(ষড়রিপু … মোহ, লোভ মদ,মাৎসর্য,কাম ও ক্রোধ) I

কৈলাসরানা

আলোক, পবিত্রতা ও আনন্দের বাসভূমির অধীশ্বর।

চন্দ্রমৌলি

যিনি চন্দ্রের দ্বারা শোভিত। প্রতিটি মাসেই একটি শিবরাত্রি আছে, যা শিবের প্রতি উৎসর্গীকৃত, শিবপূজার জন্য নির্দিষ্ট। সেই রাত্রে চন্দ্রের আধিপত্য থাকে। চন্দ্রের ষোলোটি কলা। প্রতিদিন তার ক্ষয় হয় ,এক কলা করে সে হ্রাস পায়, যতক্ষণ না তার সম্পূর্ণ লয় হয়; সেই দিনটিকে বলা হয় নবচন্দ্র বা প্রতিপদ।

চন্দ্রের হ্রাস, মনের হ্রাসের প্রতীক; কারণ মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, হ্রাস করে, শেষে ধ্বংস করাই লক্ষ্য। সকল সাধনারই এটিই পরম অভীষ্ট। প্রতিটি মাসের কৃষ্ণপক্ষে, চন্দ্র যা মানুষের মনের প্রতীক, তা প্রতিদিন হ্রাস পায়, প্রতিদিন তার এক এক কলার ক্ষয় হয়ে থাকে। তার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং শেষে চতুর্দশ রজনীতে, এতটুকু মাত্র পড়ে থাকে। সাধকের যদি একটু বেশী প্রচেষ্টা থাকে, তাহলে সেইদিন সে সেইটুকুও মুছে ফেলতে পারেএবং তার মনোনিগ্রহ সম্পূর্ণ হয়। ওই রাত্রিতে জপ্ ও ধ্যান করে শিবের উপাসনা করা উচিত; আহার ও নিদ্রার চিন্তা ত্যাগ করে সদা সতর্ক থেকে আরাধনা করা উচিত।

ফনীন্দ্র মাথা

গোখরো সাপের উত্থিত ফণা।

সর্পের প্রতীকতা

সর্প ষট্চক্র ও সহস্রার (উত্থিত ফণা )সহ কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক। সুব্রহ্মনিয়াম সর্পরূপে মন্দিরে পূজিত হন। সর্প সেই জীবনরক্ষক, আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক, যা মানুষের স্নায়ুকেন্দ্রে সুপ্ত আছে; সে অপেক্ষা করে আছে, কবে তাকে জাগ্রত করা হবে ও সাধনায় অগ্রগতির জন্য ব্যবহার করা হবে।

ষাঁড়ের তাৎপর্য

শিবের বাহন হলো ষাঁড়;এটি সনাতন ধর্মের প্রতীক। সে যে চারপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তা হলো সত্য, ধৰ্ম, শান্তি ও প্রেম।

শম্ভু

অর্থাৎ “স্বয়ম্ভূ” I তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেনি।

স্ত্রীলিঙ্গে শম্ভাবী

শিব হলেন বৈরাগ্যের মুখ। যে ঈশ্বর নিজের ইচ্ছায় এই বিশ্বকে বিক্ষেপ করেছেন তার একটি কণার প্রতিও তাঁর কোন আকর্ষণ নেই।

ডমরুর তাৎপর্য

শ্রাব্য স্তুতি ও সংগীতের দ্বারা শিবের কাছে পৌঁছনো যায়।

ত্রিশূলের তাৎপর্য

তিনি ত্রিকাল অর্থাৎ অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রভু এবং তাঁর ভক্তদের ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তৃতীয় নয়নের তাৎপর্য –এটি জ্ঞানচক্ষু। ঈশ্বর ‘সর্বজ্ঞ ‘ও’সর্বসাক্ষী’. তিনি অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা।

কারুণ্য সিন্ধু

ঈশ্বর ‘কারুণ্য সিন্ধু’. ঈশ্বরের কৃপা সাগরের মতন, বিশাল ও অনন্ত।

তোমাদের সাধনা, তোমাদের জপ্, ধ্যান ও নিয়মিত ধর্মাচরণের ফলে তাঁর কৃপা মেঘের আকার ধারণ করে সাধকের ওপর প্রেমের বারি বর্ষণ করে; সেই বারিধারা আনন্দের ঝর্ণা ও আনন্দের স্রোতস্বিনীর আকার নেয়।

ঈশ্বর ভবদুঃখহারী

তোমরা জানো সর্প গরুড়ের ভক্ষ্য। একবার বিষ্ণুর বাহন গরুড়, শিবকে তার শ্রদ্ধা নিবেদন করার উদ্দেশ্যে কৈলাসে যায়। এদিকে শিব কণ্ঠে, হস্তে, করমুলে, কোমরে এবং পায়ে সর্প ধারণ করেন। কিন্তু সেই সাপেরা গরুড়কে দেখে ভয় পেলোনা। এমনকি তারা তাদের চেরা জিহবা বার করে গরুড়কে তাদের কাছে আসতে বলার স্পর্ধা প্রদর্শন করলো। ঈশ্বরের সান্নিধ্য তাদের সাহসকে এতটাই প্রসারিত করেছিল।

তেমনি আমরা যখন নিয়মিত প্রার্থনা করি, তাঁর কথা মেনে চলি, তখন কোনো দুশ্চিন্তা বা দুঃখ বা ভয় আমাদের ক্ষতি করতে পারেনা।

[Source : Sri Sathya Sai Balvikas Guru Handbook]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: