কৈকেয়ীর দুটি বর
কৈকেয়ীর দুটি বর
পুত্র, পুত্রবধূ সহ রাজা দশরথ অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করলেন। চারিদিকে শুধু আনন্দ। চার ভাই বিশেষতঃ রাম হলেন অযোধ্যাবাসীর নয়নের মণি। রাম প্রজাদের কল্যাণের দিকে নজর রাখতেন। সকলকে সাহায্য করতেন কখনো রাগ করতেন না। এইভাবে কিছু দিন কাটল।
রাজার মনে ভবিষ্যতের চিন্তা– তার তো বয়স হয়েছে– এবার রামচন্দ্র সিংহাসনে বসবেন।গুরু বশিষ্ঠদেব এলেন, রাজার প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন। রামের রাজ্যাভিষেক ঘোষিত হল। সেই সময় ভরত এবং শত্রুঘ্ন তাদের মামার বাড়ি গিয়েছিলেন। তিন রাণী আনন্দে আত্মহারা হলেন।কৈকেয়ী রামকে নিজের সন্তানের মত ভালবাসতেন। কিন্তু কৈকেয়ীর দাসী মন্থরা অখুশি হল। সে চাইত ভরত রাজা হোক। সে কৈকেয়ীকে রামের বিরুদ্ধে কুপরামর্শ দিতে লাগলো। সে কৈকেয়ীর মন বিষিয়ে দিল। সে বোঝালো, রাম যদি রাজা হয় কৌশল্যা সকল ক্ষমতার অধিকারিনী হবেন এবং কৈকেয়ীকে তার দাসী করে রাখবেন। কৈকেয়ী ধীরে ধীরে মন্থরার বশীভূত হলেন।
গুরুরা শিশুদের বোঝাবেন:
কৈকেয়ী ছিলেন সুন্দর স্বভাববিশিষ্ট। কিন্তু তিনি যাকে বিশ্বস্ত অনুচরী হিসেবে গণ্য করতেন সেই মন্থরার কুপরামর্শ তার মনকে বিষময় করে তুলেছিল। এই কারণে আমাদের উচিত সর্বদা অসৎ সঙ্গ এড়িয়ে চলা। নিজেদের বিচার বুদ্ধি দিয়ে ভেবেচিন্তে যেটা ভালো,যা সকলের পক্ষে মঙ্গলজনক তাই করা উচিত।
We must use our own discrimination and decide upon what is really good for us and for everyone around us.
শিক্ষণীয় মূল্যবোধঃ জীবনের: A B C হল, AVOID BAD COMPANY, অসৎ সঙ্গ এড়িয়ে চলা, ALWAYS BE CAREFUL, সদা সর্বদা সতর্ক থাকা। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করা।
মন্থরা কৈকেয়ীকে মনে করিয়ে দিল, যুদ্ধে যখন কৈকেয়ী রাজা দশরথের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন, তখন তিনি তাঁকে দুটি বর দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। দশরথ রামের রাজ্যাভিষেকের সংবাদ জানাতে গিয়ে দেখলেন কৈকেয়ী রাগে-দুঃখে অস্থির হয়ে রয়েছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে, তিনি দশরথের কাছ থেকে বর দুটি চেয়ে নিলেন। প্রথম বরে, তাঁর পুত্র ভরত হবেন অযোধ্যার রাজা। আর দ্বিতীয় বরে রামকে চোদ্দ বছরের জন্য বনে যেতে হবে। এই কথা শুনে দশরথ এতটাই মর্মাহত হলেন যে তিনি জ্ঞান হারালেন। মন্ত্রী সুমন্ত্র রাজাকে জানাতে এলেন যে রাজ্যভিষেকের আয়োজন সুসম্পন্ন হয়েছে। দশরথের অবস্থা দেখে তিনি স্তম্ভিত হলেন। কৈকেয়ী রামকে ডেকে পাঠালেন। রাম এসে পিতার অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হলেন। পিতার কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পেলেন না। কৈকেয়ী তাঁকে দশরথের প্রতিজ্ঞার কথা জানালেন। শান্তভাবে রাম জানালেন পিতৃসত্য পালনে তিনি প্রস্তুত। তিনি কৈকেয়ীকে অনুরোধ করলেন ভরতের রাজত্বে যেন পিতার সুখী থাকেন, সেই দিকে দৃষ্টি রাখতে।
গুরুরা শিশুদের বোঝাবেন,
প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। পিতৃসত্য পালনে রাম তৎক্ষণাৎ অযোধ্যা ছেড়ে চলে গেলেন।
কৈকেয়ীর বরের কথা শুনে রাম এতোটুকু বিচলিত হলেন না। অত্যন্ত দুঃসময়ে, যখন সকলেই ব্যাকুল, রামের চিত্ত তখন শান্ত, সমাহিত। কথা দিলে তা রাখতে হবে কোন মতেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা যাবে না। খেলায় হেরে গেলে রেগে যাবে না। সব সময় আরো ভালো হওয়ার চেষ্টা করবে। মূল্যবোধঃ প্রতিশ্রুতির মূল্য। সুখে-দুঃখে সমমনস্কতা।
রামচন্দ্র তারপর দশরথ ও কৈকেয়ীকে কে প্রণাম করে কৌশল্যার কাছে গেলেন। লক্ষণ ভীষণ রেগে গেলে তাকে বোঝালেন, পিতৃসত্য রক্ষা করা সন্তানের কর্তব্য।
গুরু শিশুদের বলবেন
রাম ছিলেন অত্যন্ত বাধ্য সন্তান। তিনি শুধু নিজে বাধ্য ছিলেন তা নয় লক্ষণকেও সুপুত্র হয়ে ওঠার শিক্ষা দিলেন। মূল্যবোধঃ গুরুজনকে শ্রদ্ধা ও মান্য করা। ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও’। আগে হও, তারপর করো এবং তারপর বল (BE, DO AND THEN TELL)
কৌশল্যা রামের সঙ্গে বনে যেতে চাইলে রাম তাঁকে বোঝালেন, তাঁর কর্তব্য স্বামী দশরথের সেবা করা। ভরত রাজা হবে, এতে কৌশল্যার খুশি হওয়া উচিত। লক্ষণ রামের সঙ্গে বনবাসে যেতে চাইলে তিনি তা স্বীকার করলেন। সীতার সঙ্গে যেতে চাইলে, তিনি তাঁকে বনবাসের কষ্টের কথা বোঝাবার চেষ্টা করলেন। শেষ পর্যন্ত সীতা রামের সঙ্গী হলেন।