ঈশ্বর সবচাইতে ভাল জানেন
ঈশ্বর সবচাইতে ভাল জানেন
ঈশ্বর চন্দ্র, সূর্য, গ্রহতারা সৃষ্টি করেছেন। আমরা যার উপরে বাস করছি, সেই সুন্দর পৃথিবী তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের সর্বশক্তিমান পিতা। আমরা তার প্রিয় সন্তান। সুতরাং, আমরা যখন বিশ্বাস ও ভালবাসা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি, তিনি তখন খুসী হন। তিনি আমাদের নিঃশব্দ প্রার্থনা শুনতে পান। কিন্তু মনে রেখো, আমাদের প্রার্থনা আন্তরিক হওয়া চাই। আমাদের প্রার্থনাও ন্যায্য জিনিষের জন্য করতে হবে । তা নাহলে ঈশ্বর অসন্তুষ্ট হবেন, আমরাও অসুখী হবো।
মোহুর গ্রামে শম্ভু নামে একজন মুচী ছিল। সৎ কর্মী ও ধর্মভীরু হিসেবে সে পাশাপাশি গ্রামে পরিচিত ছিল। নতুন জুতা সেলাই আর পুরোনো জুতো সারানোরর কাজ নিয়ে সে সারাদিন ব্যস্ত থাকতো। এতে তার পরিবার চালানোর মতো যথেষ্ট রোজগার হতো।
একদিন মোহুরের জমিদার (ইনি কাছাকাছি আরো কয়েকটা গ্রামেরও জমিদার ) শম্ভুর ছোট কুঁড়ে ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। শম্ভু দেখলো যে, জমিদার দামী জামা কাপড় পরে, ঘোড়ায় চড়ে রাজার মতন চলেছেন। শম্ভু নিজের মনেই বলল, “এইতো, আমাদের জমিদার চলেছেন। ইনি কুড়িখানা গ্রামের মালিক। এঁর যা টাকাপয়সা আছে তা দিয়ে সোনার খনি কিনে নিতে পারেন। কি সুখের আর আরামের জীবন। এদিকে আমি সারাদিন চামড়া কেটে আর সেলাই করে খেটে খেটে মরছি। ঈশ্বর আমার উপর এত নির্দয় কেন”?
ঈশ্বরের চিন্তা মনে হতেই তার চোখ পড়লো দেওয়ালে টাঙানো পান্ধারপুরের বিঠ্যল দেবের ছবির উপরে। সরল মনে, সে তার প্রিয় দেবতার সঙ্গে কথা বলতে লাগলো, “হে ঠাকুর, তুমি আমার সর্বশক্তিমান পিতা। আমার স্নেহময়ী জননী তুমি। তুমি তো দেখো যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি কি ভাবে খেটে চলেছি। তোমার কি একটুও দয়া হয় না। আমার থাকার জন্যে মস্ত একটা বাড়ী দাও না, আর জোয়ার বোনার মতন ক্ষেত? তা ছাড়া বেশ কিছু টাকা যদি দাও তো আমার আর আমার স্ত্রী পুত্র পরিবারের জন্য ভালো ভালো জিনিষপত্র কিনতে পারি।”
শম্ভু যখন এই কথাগুলো বলল, তার মনে হলো যেন ছবির ভগবান বিঠোবা তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। শম্ভু নিজের মনেই বলল, “নিশ্চয়ই ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। কিন্তু তিনি হাসলেন কেন ? আমি কি খুব বেশী চেয়েছি?”
সেই রাত্রে ভগবান বিঠোবা, স্বপ্নের ভিতরে জমিদারকে দর্শন দিয়ে বললেন, “মোহুরের শম্ভু। মুচী আমার ভক্ত। তুমি তাকে সাহায্য কর। তাকে একটা বড় বাড়ী তৈরী করে দাও; একটা পাত্র ভর্তি মোহর দাও; তার নামে দুই একর জমি দিয়ে দাও। তুমি আমার আশীর্বাদ পাবে”।
জমিদার বিঠোবা দেবের আদেশ পালন করলেন। শম্ভু তার নিজের এই সৌভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। সে চামড়া আর জুতো নিয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিল। তার গোটা পরিবার ক্ষেতে লাঙ্গল চষা, বীজ বোনার কাজ আরম্ভ করে দিল। তাদের মনে হলো যে ঈশ্বর তাদের আকাক্ষিত সব কিছুই দিয়েছেন।
কিন্তু, কিছুদিনের ভেতরেই শম্ভু গোলমালে পড়ে গেল। কাছের, দূরের যত আত্মীয় দলে দলে তার নতুন বাড়ীতে এসে জুটতে লাগল, প্রত্যেকদিন তাদের নিজেদের মধ্যে কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। শম্তু তার বাড়ীর ভিতরে মোহরভতি ঘড়া রাখার মত নিরাপদ জায়গা দেখতে পেল না। ক্ষেতের মধ্যে এক কোণায় সে ওটাকে পুঁতে রাখল। কিন্তু, চোরেরা ঐ সম্পত্তি চুরি করে নিতে পারে—এই চিন্তায় তার মনের শান্তি, এমন কি রাতের ঘুম পর্যন্ত চলে গেল। এ বছর ফসলও হলো না ; তার ফলে, শম্ভুর পরিবার ক্ষেত থেকে এক দানাও জোয়ার পেল না।
এইভাবে শম্ভু তার জীবনের সুখ-শান্তি সব হারালো। দিনে দিনে সে বিষন্ন আর নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগল। দেখা দিলো। শেষ পর্যন্ত তার সুবুদ্ধি দেখা দিলো। একদিন সে বিঠোবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বললো, “ঠাকুর, এখন আমি বুঝেছি যে, আমি যেদিন বাড়ী, সম্পত্তি, জমি জায়গার জন্যে প্রার্থনা করেছিলাম সেদিন কেন তুমি হেসেছিলে । আসলে, এরা আমার শান্তি, সন্তুষ্টি, ঘুম, স্বাস্থ্য, আনন্দ সমস্ত কেড়ে নিয়েছে। আমার স্বার্থপরতা আর লোভের জন্যে আমায় ক্ষমা কর। আমার সেই শ্রমসাধ্য, সৎ কাজ আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমার ভাইবোনেদের জন্য জুতা সেলাই করে আমি তাদের কাজে যেন আসতে পারি। আমার হৃদয়কে ভক্তি আর ভালবাসায় ভরে দাও। এখন থেকে, আমি আমার কর্তব্য করে যাব, বাকীটা তোমার উপরে ছেড়ে দেব। ও আমার প্রাণের ঠাকুর, তোমার প্রিয় সন্তানের পক্ষে কি মঙ্গল, তা তুমিই ভাল জানো।”
প্রশ্ন :
- আমাদের কেন ঈশ্বরকে ভালবাসা উচিত?
- শম্ভু মুচী যা চেয়েছিলো, ভগবান তাকে তা দেওয়া সত্ত্বেও সে সুখী হলো না কেন?
- ঈশ্বর যদি তোমাকে প্রশ্ন করেন, “তুমি কী পছন্দ কর তোমার উত্তর কি হবে?