সাদাসিদে পোষাক সাদাসিদে অন্তঃকরণ
সাদাসিদে পোষাক সাদাসিদে অন্তঃকরণ
আমরা কি দামী আর রংচঙে কাপড় জামা পরলে বেশি শ্রদ্ধা পাবো? শুধু অজ্ঞলোকেই মনে করে যে পোষাক-আশাক, সোনাদানা থাকলে তারা অন্যের কাছে সম্মান পাবে। অবশ্যই, এমন জামা কাপড় পরা উচিত যা ধোপ-দুরস্ত, শোভনীয় । কিন্তু, এটা মনে করা ভুল যে দামী আর জমকালো পোষাকে অন্যের সম্মান আদায় করা যায়। প্রকৃতপক্ষে, খরচসাপেক্ষ কাপড় জামা, গহনা কিনে টাকায় যে ব্যয় হয়, তা অন্যের ভালোর জন্য খরচ করলে কাজে লাগে। জগতে এমন অনেক মহৎ লোক ছিলেন, যারা সবসময়ে সাদাসিদে পোশাকে থাকতেন, বিনীত ব্যবহার করতেন। বাস্তবিক, তাদের সাদাসিধে পোশাক ও আচার ব্যবহার তাদের মহত্ত্বকে আরো বাড়িয়ে ছিলো। এখানে দুটো উদাহরণ দেওয়া হলো:
ক) মাইকেল ফ্যারাডে
মাইকেল ফ্যারাডে বিখ্যাত একজন বৈজ্ঞানিক ছিলেন। তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদক যন্ত্র (ডায়নামো) আবিষ্কার করেছিল, যার ফলে আমরা ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক আলো ও কলকারখানায় বৈদ্যুতিক শক্তি পাচ্ছি। তার এই বিরাট অবদানের কোন বাহ্যিক প্রকাশ তার আচার ব্যবহারে কখনও দেখা যায়নি। বেশীর ভাগ সময়েই, তাদের সাদাসিদে পোষাক ও বিনীত ব্যবহার অন্যের কাছে তার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তাকে গোপন করে রাখতো। এক সময়ে, ইংল্যাণ্ডের রাজকীয় টাঁকশালের এক কর্মচারী ফ্যারাডের সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি রয়্যাল সোসাইটি অফ সায়েন্স’-এর অফিসে গেলে, সেখানে একজন তাঁকে একটা বড় ঘর দেখিয়ে দেন, সেখানে ফ্যারাডে তার বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে বাদামী পায়জামা ও সাদা শার্ট পরা এক বৃদ্ধ লোককে বেসিনে বোতল ধুতে দেখে, জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি এই সোসাইটির চৌকিদার? বৃদ্ধ লোকটি সুসজ্জিত আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে বললেন “হ্যাঁ”।
আগন্তুক জিগ্যেস করলেন, “তুমি কতদিন এখানে কাজ করছো? বৃদ্ধ নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিলেন, চার বছর। তৃতীয় বার প্রশ্ন এল, “এরা যা মাইনে দিচ্ছে, তাতে তুমি পুরোপুরি খুসী তা?” “নিশ্চয়ই আমি খুশি”, এই কথা বলতে বলতে বৃদ্ধ এবার হাসলেন।
ভদ্রলোক একটু কৌতূহল নিয়ে জিগ্যেস করলেন, “আচ্ছা তোমার নামটা কি ? বৃদ্ধের কাছ থেকে উত্তর এলো, “সবাই আমাকে মাইকেল ফ্যারাডে বলে ডাকে।”
আগন্তুক ভদ্রলোক তার এই সাংঘাতিক ভুলের জন্য অনুতপ্ত হলেন ও ফ্যারাডের কাছে ক্ষমা চাইলেন। তিনি মনে মনে বললেন, “এত বড় একজন মানুষ, কত সাদাসিধে! না কি এত সাদাসিধে অন্তঃকরণ বলেই তিনি এত বড় হয়েছেন?”
(খ) মহাত্মা গান্ধী
গান্ধীজী ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য জাতীয় আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই জনতা, ‘মহাত্মা গান্ধী কি জয়’, এই ধ্বনি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে।
রিচার্ড ক্রেগ নামে একজন আমেরিকাবাসী, বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে সাহসিক যুদ্ধের জন্য গান্ধীজী গুণমুগ্ধ ছিলেন। তিনি এই মহান দেশপ্রেমিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য সবরমতী আশ্রমে এসেছিলেন। আশ্রমের কার্যালয় তখনও খোলেনি। ক্রেগ একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, যে, গান্ধীজীর সঙ্গে কোথায় দেখা হবে। তাকে বলা হলে যে, সবার জন্য যে খাবার ঘর, সেই ঘরে তিনি আছেন। ক্রেগ কিছুটা ইতস্ততঃ করে বললেন, “আমি কি ওখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে পারি? উত্তর এলো, “হ্যা, হ্যা, নিশ্চয়ই। তিনি সে ঘরে একাই আছেন।
ক্রেগ সাবধানে খাবার ঘরে গেলেন। পাছে তিনি প্রাতরাশের সময়ে গিয়ে গান্ধীজীর অসুবিধে করেন। কিন্তু, এ কি দেখছেন তিনি ভারতের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী সকালের রান্নার জন্য তরকারির খোসা ছাড়াচ্ছেন।
তার পরনে হাঁটু পর্যন্ত একটা ধুতি আর কাঁধের উপর একটি ছোট শাল পিঠটাকে ঢেকে রেখেছে। গান্ধীজী এক গাল হেসে অতিথিকে আপ্যায়ন করলেন, “এসো, এসো। আমি এই ছোটখাটো জিনিষ নিয়ে ব্যস্ত আছি দেখে তুমি কিছু মনে করছে না তো!”
আমেরিকার অতিথি যা দেখলেন আর শুনলেন, তাতে তিনি বিচলিত হলেন। গান্ধীজীর সরলতা ও বিনয় তাকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করলো। পরমুহূর্তে তিনি গান্ধীজীর কাছে বসে তরকারীর খোসা ছাড়াতে সাহায্য করতে লাগলেন। এই রকম মহৎ লোকেরাই তাদের সঙ্গী সাথীদের জন্যে পৃথিবীকে সুখের আবাস করে তোলে।
প্রশ্নঃ:
- নিজের ভাষায় বর্ণ্না করঃ ভালো পোষাক
- খারাপ পোষাক
- এই দুটি গল্প থেকে তোমরা কি শিখলে?
- সুখী কে? যে আচার ব্যবহারে সরল ও বিনয়ী কিংবা যে গম্ভীর, চাপা ও গর্বিত? যুক্তি দিয়ে তোমার উত্তর বোঝাও।