অহংকার
অহংকার
যেমন লোকই হোক না কেন, অহংকার যদি একবার তারমধ্যে প্রবেশ করতে পারে তবে তার সমস্ত শক্তিকে এমনকি চিন্তা করার শক্তিকেও পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়।
একবার স্বর্গের দেবলোকে, দৈত্যদের সঙ্গে দেবতাদের লড়াই হয়েছিল। অসুরদের পরাজিত করে স্বর্গের দেবতারা দারুণ খুশী, দারুণ উল্লাস। তাদের ধারণা হলো যে এই যুদ্ধ জয়ের কৃতিত্ব সমস্তটাই তাঁদের, তারাই জয়ী হয়েছিল। সেইজন্য তারা দারুণ উৎসব পালন করতে লাগলেন।
তাদের এইসব ব্যাপার দেখে, যিনি সেই পরম দেবতা, তিনি ভাবলেন যে এঁদের সত্যটাকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। সেখানে তিনি আবির্ভূত হলেন। দেবতারা হঠাৎ দেখলেন, যে, তাদের উৎসবের মাঝে একজন জ্যোতির্ময় মূর্তি এসে দাঁড়িয়েছে। তখন তারা তাদের মধ্যে অগ্নিকে বললেন, যে, “তুমি যাও, আমরা তো প্রায় সবই জানি কিন্তু একে তো জানি বলে মনে হচ্ছে না। যাইহোক তুমি সর্বজ্ঞ, তুমি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে এসো, এই জ্যোতির্ময় পুরুষটি কে?”
তখন অগ্নি গিয়ে এই পুরুষটির সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কে? আপনার কি পরিচয়?” এই জ্যোতির্ময় পুরুষ বললেন, “আমি সেটা পরে বলছি। আগে আপনি বলুন, আপনার কি পরিচয়?”
তিনি বললেন, “আমার পরিচয়, আমাকে সবাই অগ্নিদেব বলে জানেন, আমি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।”
“ও তাই নাকি! তা আপনার গুণটা কি জানতে পারি ?”
“আমার অজস্র গুণ। তারমধ্যে একটা হল, যে, আমি সব কিছুকেই পুড়িয়ে দিতে পারি।“
এই জ্যোতির্ময় পুরুষ বললেন, “তাই নাকি! বেশ, তাহলে এই জিনিসটাকে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।” বলে, একটি শুকনো ঘাস সামনে ফেলে রেখে এই জ্যোর্তিময় পুরুষ অন্তর্ধান হলেন।
অগ্নিদেব অবহেলার ভরে এই ঘাসটিকে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, পারলেন না, আরও চেষ্টা করলেন, পারলেন না। তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও এই শুকনো ঘাসটিকে তিনি স্পর্শমাত্র করতে পারলেন না। তখন অগ্নিদেব পরাজিত, বিষন্ন হয়ে ফিরে এলেন দেবতাদের কাছে। এসে বললেন, “ভাই আমি পারলাম না, আমি হেরে গেলাম। তোমরা অন্য কাউকে পাঠাও।”
পবনদেব বলনেল, “আরে অন্য কাউকে পাঠাতে হবে না, আমি যাচ্ছি। আমি সব ব্যবস্থা করছি, এতো সামান্য ব্যাপার।”
তিনি গেলেন, সেই একই প্রশ্ন, “আপনি কে?” বললেন, “আমি পবনদেব।”
“কি আপনার গুণ?”
বললেন, “আমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু আছে সমস্তকেই টলিয়ে দিতে পারি। এক জায়গা থেকে উড়িয়ে আর এক জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। আমার ইচ্ছামাত্র যে কোন জিনিসই স্থান পরিবর্তন করে।” তখন তিনি বললেন, “আপনি এই তৃণটিকে একটু উড়িয়ে দিন।”
পবনদেব তার সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও এই তৃণটিকে সামান্য নড়াতে পর্যন্ত পারলেন না।
তখন তারা ইন্দ্রকে পাঠালেন, “আমরা অপারক, তুমি আমাদের রাজা, তুমি যাও, গিয়ে দেখ কি ব্যাপার!”
ইন্দ্র যখন এলেন তখন তিনি দেখলেন, এক পরম রূপসী, পরম সুন্দরী কন্যা দাঁড়িয়ে। ইনি ‘উমা’। সর্বাঙ্গে সোনার গয়না, ঝলমল করছে তার রূপ। ইন্দ্র বললেন, যে, “দেবী, তুমিই বা কে? আর যে পুরুষ একটু আগে এখানে। ছিলেন, তিনিই বা কে?”
উমা বললেন, “যে, পুরুষ একটু আগে এখানে ছিলেন, তিনি হচ্ছেন ‘ব্রহ্মা, সত্য চৈতন্য, সকল জগতকারণ, সর্বশক্তির মূল। আর আমি তারই সেই শক্তির প্রকাশ।”
ইন্দ্র তার ভুল বুঝতে পারলেন যে সেই পরমাত্মা শিক্ষা দেবার জন্যই এই নাটকটি করলেন এবং ফিরে এসে তিনি দেবতাদের বললেন, “ভাই আমরা মনে করি, যে আমরাই করেছি কিন্তু আসলে তা নয়। আমাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত শক্তির যে মূল সেই ব্রহ্ম তিনিই এই সমস্ত ইচ্ছা করায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। আমরা শক্তিও লাভ করেছি তারই কৃপায়। কাজেই আমাদের এই অহংকার খুব ক্ষতিকর আর আমরা চেষ্টা করব, যাতে আমরা করেছি, এই ভাবটা মনে না আসে।”
প্রশ্নঃ
- দেবতাদের কিসের অহংকার ছিল?
- অগ্নি কিভাবে লজ্জা পেলেন?
- বায়ু কেন তৃণটিকে নড়াতে পারলেন না?
- উমা ইন্দ্রকে কি শিক্ষা দিলেন?