বাঘের কাহিনী

Print Friendly, PDF & Email

বাঘের কাহিনী

সকল প্রাণীকেই বাবা সমানভাবে ভালবেসে থাকেন এবং তিনি পশু হত্যা বা শিকার করাকে সহ্য করতে পারেন না।

উড়ভকোন্ডা হতে পুট্টাপর্তীতে ফিরে আসবার একদিন পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। এক বিলিতি সাহেব অফিসার খুবই বড় শিকারী ছিলেন এবং চিত্রাবতী নদীর ঠিক অপর পাড়ে শিকার করতে গিয়েছিলেন। তিনি একটি বাঘকে গুলি করে মেরেছিলেন এবং জিপে করে অনন্তপুরে ফিরে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ আপাতঃ কোনও কারণ ছাড়াই পুট্টাপর্তীর ঠিক বাইরে জীপটি থেমে গেল। একান্ত চেষ্টা করেও ড্রাইভার কিংবা অফিসারটি জীপটিকে আবার চালাতে পারলেন না।

ড্রাইভারটি শিশু সত্যের কাহিনী শুনেছিল। তাই সে ইংরেজ লোকটিকে বলেছিল যে, কাছেই একটি গ্রামে একটি বালক আছে যে পবিত্র ভষ্ম সৃষ্টি করে সব কিছু নিরাময় করতে পারে, হয়ত বা সে জীপটিকে ঠিক করে দিতে পারবে। যেহেতু ইংরেজ অফিসারটি মাঝপথে আটকে পড়েছিলেন এবং জীপের ইঞ্জিনে কি হয়েছে তা বুঝতে পারছিলেন না তাই নিজে জীপে বসে ড্রাইভারকে গ্রামে পাঠালেন বাবাকে খুঁজে দেখতে।

ড্রাইভার কিছুক্ষণের জন্য পূট্টাপর্তীর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে অবশেষে সে ঐ বালকটিকে খুঁজে পেল। সে একটিও কথা বলবার আগেই বাবা তাকে বললেন, “আমি নিজেই জীপের কাছে যাচ্ছি।” বালক সত্য নদী তীরের বালুকারাশির উপর দিয়ে হেঁটে জীপ যেখানে আটকে পড়েছিল সেখানে পৌঁছলেন। জীপের ভিতর তাকিয়ে তিনি দুঘন্টা আগে গুলি করে মারা সুন্দর বাঘিনীটিকে দেখলেন। বাবা ঐ ইংরেজ অফিসারকে জানালেন তিনিই ঐ জীপটিকে পুট্টাপর্তীর বাইরে থামিয়ে দিয়েছেন, কারণ মৃত ঐ বাঘিনীটি দুই সপ্তাহ বয়সের তিনটি বাচ্চার মা ছিল। মাকে না পেয়ে বাচ্চারা কাঁদছে, ক্ষুধার্ত হয়ে আছে, নিজেদের অসহায় মনে করছে। বাবা কঠোরভাবে আদেশ করলেন, “ফিরে যাও, এবং ঐ বাচ্চাদের নিয়ে এমন কোনও একটি চিড়িয়াখানায় দিয়ে দাও যেখানে তাদের যত্ন হবে। আর জীবনে কোনওদিন কোনও বন্য প্রাণীকে বন্দুক দিয়ে গুলি করবে না, কারণ তারা তোমার কোনও ক্ষতি করে নি। কেন তুমি বন্য প্রাণীদের খোঁজ করে, তাদের ঘিরে ফেলে ফাঁদ পেতে তাদের ধরে ফেল?” বাবা পরামর্শ দিলেন যে এর পরিবর্তে তার উচিত হল শুধুমাত্র ক্যামেরা দিয়ে পশুদের ধরা, ক্যামেরা হল আরও উচ্চশ্রেণীর অস্ত্র, যা কোনও পশুর ক্ষতি কিংবা হত্যা করবে না। বাবা যা বলেছিলেন ঠিক তাই ঐ ইংরেজ অফিসার করেছিলেন। তিনি বাঘের বাচ্চাগুলোকে একটি চিড়িয়াখানায় নিয়ে রাখলেন, এবং তারপর হতে শিকারের জন্য শুধুই ক্যামেরার ব্যবহার করতেন। তিনি আবিষ্কার করলেন যে ক্যামেরার সাহায্যে শিকার করাটা হল বন্দুকের চেয়েও অনেক বেশী বড় চ্যালেঞ্জ এবং তা হল বাঁচবার জন্য অনেক বেশী শান্তিময়, অহিংস এবং ধর্মসম্মত।

বাবার প্রাজ্ঞতায় ঐ ইংরেজ অফিসার এত বেশী অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে, বাঘের চামড়াটি যখন পশু চর্ম প্রক্রিয়াকরণকারীর কাছ হতে পাওয়া গেল তখন তিনি চামড়ার দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছিলেন না। তিনি তখন চামড়াটিকে পুট্টাপর্তীতে নিয়ে গিয়ে বাবার সঙ্গে আবার দেখা করলেন এবং তাঁর চরণতলে নিবেদন করলেন।

[Source : Lessons from the Divine Life of Young Sai, Sri Sathya Sai Balvikas Group I, Sri Sathya Sai Education in Human Values Trust, Compiled by: Smt. Roshan Fanibunda]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: