ভূমিকা
ভূমিকা
‘রামকৃষ্ণ পরমহংসের জীবন একটি ‘বাস্তবায়িত ধর্ম-কাহিনী-যাতে আমরা “ঈশ্বরকে সামনা-সামনি দেখি”। তিনি ছিলেন একধারে দেবতা ও পবিত্রতার মূর্ত প্রতীক।’-মহাত্মা গান্ধী
শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর জীবনে ধর্মে’র সত্যতা ও ভগবানের বাস্তবতা প্রমাণ করেছেন। যখন প্রায়-নাস্তিক, কিন্তু অকপট যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্ত রামকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মহাশয়। আপনি কি ঈশ্বরকে দেখেছেন?’ রামকৃষ্ণে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন- ‘হ্যাঁ, আমি তাঁকে দেখেছি, ঠিক যেমন তোমার এখানে দেখছি- বরং তাঁকে আরো ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখেছি।’ তারপরে তিনি তাঁর ঈশ্বর-দর্শন ও অভিজ্ঞতার কথা নরেন্দ্রনাথকে, যিনি পরে সারা বিশ্বে স্বামী বিবেকানন্দ নামে ধর্মে’র পুরোধা রূপে স্বীকৃত হয়েছিলেন, তাঁর কাছে বলেছিলেন।
রামকৃষ্ণ প্রমাণ করেছেন যে সর্ব’ ধর্ম’ই সত্য; এগুলি শুধু ভগবানের কাছে যাবার বিভিন্ন পথ। ধর্ম’ শুধু বিশ্বাসেই আবদ্ধ নয়, ধর্ম’ রয়েছে উপলব্ধিতে- ভগবদ-উপলব্ধিতে।
বস্তুতান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন জগতে রামকৃষ্ণ আধ্যাত্মিকশক্তির এক মহান প্রচারক। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার মূর্ত প্রতীক। যে সময়ে পাশ্চাত্য ভাবধারা ও সভ্যতার অন্তঃপ্রবাহে দেশ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক অধঃপতনের জলাভূমিতে পরিণত হয়েছিল এবং যার ফলে হিন্দুদের বিশ্বাসের ভিত নড়ে উঠেছিল, সেই সময়ে তিনি হিন্দুধর্মে’র অন্তর্নি’হিত সৌন্দর্য’, ঐশ্বর্য’ ও শক্তির দিকে হিন্দুদের দৃষ্টি আকর্ষ’ণ করেছিলেন।
বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বন্ধুবাদের প্রসারণশীলতা যখন সমগ্র জগৎকে পরিব্যাপ্ত করছিল, তখন রামকৃষ্ণ হিন্দুধর্ম’কে তার গভীর সঙ্কট থেকেই শুধু উদ্ধার করেন নি, তার সকল ধর্ম’-বিশ্বাসের পুনরুজ্জীবন করে ক্রমবর্ধমান নাস্তিকতাকে নির্মূল করেছিলেন।
রামকৃষ্ণ সংগত কারণেই পরমহংস নামে পুজিত হতেন। হংস যেমন জল থেকে দুধকে পৃথক করে পান করে এবং দুধের রসাস্বাদনে আনন্দ পায়, রামকৃষ্ণও তেমনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও উপলব্ধির দ্বারা দেহস্থ আত্মাকে, বস্তুর আভ্যন্তরীণ শক্তিকে (সত্তাকে), পরিদৃশ্যমান জগতের অন্তরালস্থিত বিধাতাকে পৃথক ভাবে অনুভব করে ঐশ্বরিক মাধুর্য’ আস্বাদন করতেন।
যদিও রামকৃষ্ণ কোনো শাস্ত্র পাঠ করেন নি, তবুও সব ধর্মশাস্ত্র তাঁর দ্বারা সমর্থিত ও পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছিল; সকল শাস্ত্র-পারঙ্গম মূর্তি’মান প্রজ্ঞা ছিলেন তিনি; বৈরাগ্য, ভক্তি ও জ্ঞান- এই তিনটি ধারার মিলনে তাঁর জীবন হয়ে উঠেছিল পবিত্র ত্রিবেণী-সঙ্গম।
[Illustrations by Smt. Hema Satagopan]
References:
1. Sri Ramakrishna The Great Master by Swami Saradananda, Translated by Swami Jagadananda, Sri Ramakrishna Math, Mylapore, Chennai – 600 004.
2. The Gospel of Sri Ramakrishna, Translated by Swami Nikhilananda (Madras: Sri Ramakrishna Math, 1974).
3. The Path Divine, Sathya Sai Balvikas Magazine, Dharmakshetra, Mahakali Caves Road, Andheri (East), Mumbai – 400 093.
4. A Short Life of Sri Ramakrishna, published by Swami Tattwavidananda, Adhyaksha, Advaita Ashrama, Uttarkhand, Himalayas from its Publication Department, Kolkata.
5. The Story of Ramakrishna, Published by Swami Bodhasarananda, Advaitha Ashrama, Uttarkhand, from its Publications Department, Kolkata.