আকাশ – ১
ভূমিকাঃ
সৃষ্টির আদিতে ঈশ্বর প্রণব ধ্বনি ‘ওম’ উচ্চারণ করলেন। ‘ওম’ কে ধারণ করে রাখার জন্য সৃষ্টি হলো আকাশ। আকাশের ধারণ ক্ষমতা অসীম। আকাশ সর্বত্র বিরাজমান। আকাশ সবকিছুকে আশ্রয় দিতে পারে। শব্দব্রহ্ম বা প্রণবধ্বনি – এই নামে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আকাশকে ঈশ্বর রূপে পূজা করতেন।
গুণঃ
আকাশের গুণ হল শব্দ। সকল পদার্থ এবং শক্তির উৎস ‘ওম’ থেকে সঙ্গীত এবং অন্যান্য শ্রবণযোগ্য শব্দের উদ্ভব হয়েছে। আকাশের যেমন যত ইচ্ছা নিজেকে প্রসারিত করতে পারে, আমরাও যেন আমাদের হৃদয়কে প্রসারিত করে সকলকে সেখানে স্থান দিতে পারি। আমাদের হৃদয় যেন সমগ্র সৃষ্টির প্রতি বিশ্বজনীন প্রেমে পরিপূর্ণ থাকে।
গানঃ
আকাশের বুকে হেরো সকলের স্থান, মানব হৃদয় যেন সবারে করে আহ্বান।
গল্পঃ
আমাদের দেশ ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব দিকে সমুদ্রের ধারে একটি ছোট্ট দেশ আছে। তার নাম জাপান। জাপানে এক মহাপুরুষ ছিলেন তার নাম কাগাওয়া। তিনি জাপানের একটি ছোট্ট শহরে খুব সরলভাবে জীবন যাপন করতেন। তিনি ছোট বড়, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবাইকে ভালবাসতেন। তাই সবাই তাকে ভালবাসত। কিন্তু সেই শহরের একটি লোক কাগাওয়াকে খুব হিংসা করত। কাগাওয়াকে যে সবাই ভালবাসে সে সেটি সহ্য করতে পারত না। সে চাইত সবাই কাগাওয়াকে না ভালবেসে তাকে ভালবাসুক, তার কাছে আসুক। তার হিংসা এত বেশী চরমে উঠল যে একদিন সেই দুষ্টু লোকটি কাগাওয়াকে খুন করার জন্য তার বাড়ীতে গেল। কাগাওয়ার ঘুম ভাঙ্গতে সে দেখল একটি লোক ছোরা হাতে তাকে খুন করতে আসছে। কাগাওয়া কিন্তু এতটুকুও বিচলিত হল না, সে হাতজোড় করে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানাতে লাগল এই বলে, “হে ঈশ্বর তুমি ওকে ক্ষমা করো, ওকে সুবুদ্ধি দাও, ওর মঙ্গল কর।” দুষ্টু লোকটি তো কাগাওয়ার প্রার্থনা শুনে অবাক এই ভেবে যে, যাকে সে খুন করতে এসেছে, সেই কিনা তার মঙ্গলের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে! লোকটির হাতের ছোরা খসে পড়ল। সে কাগাওয়ার পায়ে পড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে কাঁদতে লাগল। কাগাওয়া হাসিমুখে তাকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরল। বলল –“তুমিতো আমার শত্রু নও, আমার অত্যন্ত প্রিয়জন তুমি। ভুল মানুষ মাত্রেই হয়, ক্ষমা করাই তো দিব্যত্ব।” এই দুষ্ট লোকটি সেদিন থেকে কাগাওয়ার প্রার্থনায় ও ভালবাসায় সম্পূর্ণ বদলে গেল। সে একজন সৎ মানুষে রূপান্তরিত হল। কাগাওয়ার হৃদয় ছিল আকাশের মত উদার ও প্রেমে পূর্ণ। তাই অতিবড় শত্রুকেও সে ভালবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছিল এবং প্রেম দিয়ে তার মধ্যে পরিবর্তন এনেছিল। কাগাওয়ার মত তোমাদের হৃদয়কেও আকাশের মত উদার কর। সবাইকে ভালবাস। যে তোমার ক্ষতি করে তাকেও ভালবাস।
নীরব উপবেশনঃ
চোখ বন্ধ করে নীরবে সুখাসনে সোজা হয়ে বসবে। ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করবে ও শ্বাস ত্যাগ করবে। গুরু যা বলবেন শিশুরা সেটি কল্পনা করবে। গুরু বলবেন – কল্পনা করো একটি বাগানের মধ্যে দিয়ে তোমরা হাঁটছ। বাগানটি চারিদিকে ফুলে ভরা। পাখিরা মনের আনন্দে গাছের ডালে বসে গান গাইছে। ঠান্ডা মৃদু বাতাস বইছে। মাথার ওপর নীল আকাশ। নীল আকাশ কত বিশাল, তার কোথায় শুরু কোথায় শেষ আমরা জানি না। এই আকাশের গায়ে সূর্য, গ্রহ, কত তারা আছে আমরা সবাইকে দেখতেও পাইনা। আমরা পৃথিবী গ্রহের মানুষ। পশু, পাখী, গাছপালা কীটপতঙ্গ সবাই আকাশের গায় স্থান পেয়েছে। আকাশ কাউকে ফেলে দেয় না। সবাইকে তার বুকে স্থান দেয়। আকাশ কত উদার। তোমরাও আকাশের মত উদার হও। তোমাদের হৃদয় কে আকাশের মত বিশাল করো, যাতে তোমাদের হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে মানুষ, পশু, পাখি, গাছপালা সবাইকে আপন করে নিতে পার।
খেলাঃ
শব্দছকের মধ্যে থেকে পঞ্চভূত ও পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে খুঁজে বার কর। যেটা বাকী রইলো, সেটা এসেছে সৃষ্টির আদিতে।
প্রার্থনাঃ
সমস্তা লোকা সুখীনো ভবন্তু।