আকাশ -২
গুরু – প্রিয় ছেলেমেয়েরা, আজ তোমাদের পঞ্চভূতের কথা বলব। ক্ষিতি/ ভূমি, অপ/জল, তেজ/অগ্নি, মরুৎ/বায়ু, আর ব্যোম/আকাশ, এই হল পঞ্চভূত বা পাঁচটি মৌলিক উপাদান যা ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। [গুরু পঞ্চভূতের মধ্যে তিনটি নমুনা দেখাবেন। ভূমি – একতাল মাটি, জল – গ্লাসে জল, অগ্নি – জ্বলন্ত মোমবাতির শিখা।]
Guru
“তোমাদের পঞ্চভূতের মধ্যে যে দুটি দেখাতে পারলাম না সে দুটি হলো আকাশ এবং বাতাস কারণ এই দুটি আমরা চোখে দেখতে পাই না। কিন্তু তাতে বিফলমনোরথ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা সদাসর্বদা তাজা বায়ু শরীরে গ্রহণ করি এবং দূষিত বায়ু শরীর থেকে বের করে দিই। [ শিশুদের ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া অভ্যাস করাতে হবে।] যদিও এই শ্বাসবায়ু চোখে দেখা যায় না কিন্তু একে অনুভব করা যায়। ক্লাসের বাইরে খোলা জায়গায় গেলে, যখন বাতাস বয় তখন আমরা আমাদের ত্বকে তার স্পর্শ অনুভব করতে পারি। এবার আমরা আকাশের কথা বলব। আকাশ হলো সবথেকে সুক্ষ্ম এবং ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট প্রথম মৌলিক উপাদান। শব্দ হলো আকাশের একমাত্র গুণ। সৃষ্টির আদিতে প্রথমে যে শব্দ সৃষ্টি হয় তা হল “ওম”। “ওম”কে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর বলা হয়। ওম থেকে অন্য সকল শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। আকাশ হতে বাকি চারটি মৌলিক উপাদান একে একে সৃষ্ট হয়েছে। যেমন বায়ু, অগ্নি, জল এবং মাটি। আমি জোরে জোরে বললাম ‘রাম’। তোমরা এখন কি ওই শব্দ শুনতে পাচ্ছ? না, তাহলে ওই শব্দ কোথায় গেল? ওই শব্দ আকাশ মিশে গেল। আমরা যখন ওমকার করি, সেই শব্দ অনন্ত আকাশে মিশে যায়। ওম ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঈশ্বর তখন খুশি হন এবং আমাদের দৈহিক মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্বাস্থ্য প্রদান করেন।
প্রার্থনা
ওঁকারং বিন্দু সংযুক্তম্ নিত্যং ধায়ন্তি যোগীনঃ।
কামদং মোক্ষদং চৈব, ওঁকারায় নমো নমঃ।।
প্রকৃত ভক্ত যখন নাম স্মরণ করেন তখন তা আকাশে অনুরণিত হয়।
গল্প
এই গল্পটি আকাশের নিগূঢ় তথ্যকে ব্যাখ্যা করে।
জনাবাঈ এর গল্প
প্রভু পান্ডুরঙ্গের একজন সরল এবং দয়ালু ভক্ত ছিলেন তিনি সবসময়, এমনকি বাড়ির কাজ করতে করতেও পান্ডুরঙ্গের নাম স্মরণ করতেন। “রঙ্গা! রঙ্গা! পান্ডুরঙ্গা!” একদিন জনাবাঈ নামদেবের কাছে এই বলে নালিশ করলেন যে, তার তৈরি ঘুঁটে কেউ চুরি করেছে। নামদেব জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার তৈরি ঘুঁটে কিভাবে চেনা যাবে? জনাবাঈ বললেন, “আমি সবসময় পান্ডুরঙ্গের নাম স্মরণ করি। আমার তৈরী ঘুঁটে তাই প্রভুর নাম বহন করে। দৌড়ে গিয়ে জনাবাঈ আমি বাড়ি থেকে একটা ঘুঁটে নিয়ে এলেন। নামদেবের কানের কাছে ঘুঁটে ধরা হলে নামদেব শুনলেন ঘুঁটের থেকে অনবরত পান্ডুরঙ্গের নাম শোনা যাচ্ছে, ‘রঙ্গা! রঙ্গা! পান্ডুরঙ্গা!’ তিনি আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন। তার মনে সন্দেহ দেখা দিল। তিনি তার সামনে ঘুঁটে তৈরি করতে বললেন। অভ্যাস মতো জনাবাঈ ‘রঙ্গা! রঙ্গা! পান্ডুরঙ্গা!’ বলতে বলতে ঘুঁটে তৈরি করলেন। ঘুঁটে কানের কাছে ধরা মাত্র প্রভুর নাম শোনা গেল। নামদেবের মন থেকে সব সন্দেহ দূরীভূত হল। তিনি বুঝতে পারলেন নামস্মরণের মাহাত্ম্য সকল বিতর্কের উর্ধে। মানুষের চিন্তা এবং বাক্য চিরস্থায়ী ভাবে আকাশে মিশে যায় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
গানঃ
এসো সবাই মিলে আকাশের উপর একটা গান করি। বল ওম্ ওম্ ওম্ এই শব্দের মাঝেই সৃষ্টির স্ফূরণ কর ওম্ উচ্চারণ পঞ্চভূতের আদি হল আকাশ বা ব্যোম্।
- ব্যোম্ ব্যোম্ ব্যোম্ সকল চিন্তা ও শব্দের করে সংবরণ মহাশূণ্যের বুকে তারা মিলায় যখন আকাশেরই আরেক নাম ব্যোম্ পঞ্চভূতের সীমানা সে করে নির্ধারণ।
- চিন্তায় শ্রবণে বচনে যদি কর সৎ অনুশীলন পবিত্র হবে ব্যোম্, মুক্ত হয়ে দূষণ ঈশ্বরের আশিষ বারির হবে বরিষণ ঘুচে যাবে ভয় ভীতি নিঃশঙ্ক ভুবন।
- ব্যোম্ ব্যোম্ ব্যোম্ সকল আলোকের উৎস, প্রকাশে ত্রিভুবন ব্যোম্ ব্যোম্ ব্যোম্ সকল আনন্দের মূল মাতায় ভুবন।
- ব্যোম্ ব্যোম্ ব্যোম্, এই যেন সার, জগতকে ঈশ্বরের দিব্য উপহার রেখো তারে অমলিন সতত নির্মল জীবন সফল হবে আলোকে উজ্জ্বল।
কার্যক্রমঃ
প্রকৃতির ছবি আঁকো আর রঙ করো। ক) আকাশ, মেঘ, রামধনু, পাখী ইত্যাদি খ) রাতের আকাশ, তারা, চাঁদ
নীরব উপবেশনঃ
শিশুরা চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির একটি ছবির উপর মনঃসংযোগ করবে।
উদ্ধৃতিঃ
’সুন্দর বস্তু চিরস্থায়ী আনন্দের জনক।’