জল – ১
ভূমিকা
ঈশ্বরের সৃষ্টিতে জল অমৃত সমান। জল বিনা জীবনের অস্তিত্ব নেই। জীবজগৎ জলের উপর নির্ভরশীল। ভারতবর্ষে নদীকে মা বলে সম্বোধন করা হয় – মা গঙ্গা, মা গোদাবরী, মা কাবেরী ইত্যাদি। নদী দেবীরূপে পূজিতা। মা গঙ্গার নিত্য আরতি হয়। এইভাবে আমাদের জীবন রক্ষা করার জন্য আমরা নদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বার্থপর মানুষ কিন্তু নদীকে পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্র রাখার কোন চেষ্টাই করে না, আমরা সব রকম আবর্জনা নদীতে ফেলে দিই। নদীর তীরে অবস্থিত কারখানা থেকে দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। ফলে নদীর জল মানুষের ব্যবহারযোগ্য থাকেনা। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অকারণে জল নষ্ট করি। এর জন্য প্রকৃতি আমাদের শাস্তি দেয়। কখনো বন্যা হয় কখনো বা খরা।
Attributes
জল এর চারটি গুণ – শব্দ, স্পর্শ, রূপ এবং স্বাদ। জল সর্বদা বহমান। জলের থেকে আমাদের শেখা উচিত কখনো অলসভাবে বসে থাকবো না। সব সময় এমন কিছু করবো যাতে অপরের মঙ্গল হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে। জল সর্বদা উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় যত উঁচু থেকে জল পড়ে তার মধ্যে তত বেশি শক্তি থাকে। জলের মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে জলবিদ্যুৎ তৈরি হয়।এইভাবে আমাদেরও উচিত আমাদের মধ্যে কোনরকম অহংবোধ না রেখে দীন দরিদ্র মানুষকে ভালোবাসা। জল পান করলে অথবা ঠান্ডা জলে স্নান করলে শরীর শীতল হয়। প্রবাহমান জল সব আবর্জনা দূরে নিয়ে, যায় জায়গাটা পরিচ্ছন্ন করে।
গল্প
একজন বদমেজাজী মহিলা ছিলেন। কারণে-অকারণে তিনি রেগে যেতেন। রাগ পড়ে গেলে তিনি অনুতপ্ত হতেন কিন্তু নিজেকে সংযত করতে পারতেন না। একদিন এক সাধু মহিলাটির বাড়ীতে এলেন। মহিলাকে বললেন মহারাজ আমার মনে খুব কষ্ট, কারণ আমি খুব রগ্চটা। কিছুতেই নিজেকে বদলাতে পারি না। আপনি আমাকে এই বিষয়ে কোন সাহায্য করতে পারেন? সাধু বললেন তুমি চিন্তা করো না। আমার কাছে খুব ভালো ওষুধ আছে যা খেলে ক্রোধকে জয় করা যায়। আমি কাল তোমাকে সেই ওষুধ এনে দেব। পরদিন এক বোতল ওষুধ এনে মহিলাকে দিলেন, বললেন যখনই তোমার রাগ হবে এই বোতলের ওষুধ খাবে, যতক্ষণ না রাগ প্রশমন হয়। আমি আবার সাতদিন পরে আসব। মহিলা সাধুর কথা মতো কাজ করতে লাগলেন। যখনই তাঁর রাগ হয়, তিনি বোতলের ওষুধ খেতে থাকেন। সাতদিন পর সাধু এলেন ওষুধের কার্যকারিতা দেখতে। ওই মহিলা তার পায়ে পড়ে বললেন মহারাজ আপনি আমায় রক্ষা করেছেন। আপনার ওষুধের আমার রাগ একেবারে চলে গেছে। দয়া করে বলুন আমাকে কি ওষুধ দিয়েছিলেন। সাধু বললেন, ওই বোতল জল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। জল আমাদের মন প্রাণ শীতল করে। তাই তোমার রাগ চলে গেছে।
উদ্ধৃতি: “জল যেমন তৃষ্ণাহরণ, ধরিত্রী করে সর্বস্ব সহন আমিও যেন হই, সদাচারী আর ন্যায়পরায়ণ”
নীরব উপবেশন
ছেলে মেয়েদের নদীর ধারে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে চুপচাপ বসে তারা বিপুল বিপুল জলরাশি দিকে তাকিয়ে চিন্তা করবে
- নদীর প্রবাহমান জল কেমন পরিষ্কার
- কি সুন্দর নদীর জলের ঢেউ পবিত্র ঠান্ডা জলের সাত
- নদীর তীরে সুন্দর সবুজ গাছপালা ঠান্ডা বাতাস বইছে নদীর জলের উপর
- আমার মন প্রেমে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে; সকলকে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে। আপন পর মন থেকে একেবারেই মুছে যাচ্ছে।
কার্যক্রম
আলোচনা – নীচের প্রশ্নগুলো আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে হবে
- কোন ফলের নামের মধ্যে জল আছে?
- তিনটি ভাষায় জল কে কি বলে?
- জল তিনটি অবস্থায় থাকতে পারে; ___________ অবস্থায় বরফ, _________ অবস্থায় জল এবং ______অবস্থায় বাষ্প।
- জল ছাড়া উট কিভাবে মরুভূমিতে অত দূরের পথ পাড়ি দেয়?
- দেহে অতিরিক্ত মাত্রায় জলের অভাব হলে কি হয়?
উদ্ধৃতি: “আকাশের বুকে হেরো সকলের স্থান; মানব হৃদয় যেন সবারে করে আহ্বান।”