গুরুদের জ্ঞাতার্থে
প্রশ্নোত্তর বাহিনীতে ভগবান বাবা প্রদত্ত পঞ্চভূতের ব্যাখ্যা।
আধ্যাত্মিক প্রশ্নোত্তর
১। দেহ এবং ইন্দ্রিয় সমূহ
প্রশ্নঃ স্বামী, এই মানবদেহকে পঞ্চ উপাদান, পঞ্চভূতের সমষ্টি বলা হয় কেন?
উত্তরঃ যেহেতু এটি পঞ্চ উপাদান জাত।
প্রশ্নঃ পঞ্চভূত প্রকৃতপক্ষে কি?
উত্তরঃ আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল এবং পৃথিবী; এগুলিকে সাধারণতঃ উল্লেখ করা হয় ইথার, বাতাস, আগুন, জল এবং মাটি বলে।
প্রশ্নঃ এইগুলির উদ্ভব কোথা থেকে?
উত্তরঃ প্রতিটি উপাদান ক্রমানুযায়ী তার পূর্ববর্তী উপাদানজাত।
প্রশ্নঃ প্রথমটির মূল কি এবং সেই সঙ্গে পাঁচটিরই?
উত্তরঃ ব্ৰহ্ম, যিনি অপরিবর্তনশীল, স্থিতিশীল এবং সর্ব মূলাধার।
প্রশ্নঃ এই পঞ্চ উপাদান এবং মানবদেহের ভিতর কি সম্পর্ক?
উত্তরঃ ব্রহ্ম থেকে মহৎ এর সৃষ্টি; এর ফলে আকাশের সৃষ্টি, আকাশ থেকে বায়ু; বায়ু থেকে অগ্নি; অগ্নি থেকে জল এবং জল থেকে পৃথিবী। এই পঞ্চ সমষ্টির পরিণতি মানবদেহ।
প্রশ্নঃ দেহের ভিতর এই উপাদনগুলি কোন আকারে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে?
উত্তরঃ দেহের গঠনে প্রতিটি উপাদান পুনর্বার পঞ্চ প্রকারে অবস্থিত।
প্রশ্নঃ প্রথম আকাশ কোন পঞ্চরূপে অবস্থিত?
উত্তরঃ জ্ঞাত, মানস বুদ্ধি অহঙ্কার, পঞ্চক।
প্রশ্নঃ দেহের মধ্যে বলতে এদের কি ভাবে বোঝাচ্ছে?
উত্তরঃ এরা অন্তরেন্দ্রিয় নামে পরিচিত।
প্রশ্নঃ এখন পরবর্তী উপাদান বায়ুর পাঁচটি রূপ কি কি?
উত্তরঃ প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান।
প্রশ্নঃ দেহের ভিতর এরা কি নামে পরিচিত?
উত্তরঃ পঞ্চ প্রাণ, পাঁচটি প্রাণধারক বাতাস।
প্রশ্নঃ আর অগ্নি? অগ্নির উপাদান?
উত্তরঃ ওঃ, ঐ উপাদান “ইন্দ্রিয়গ্রম” রূপে অবস্থিত; চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক।
প্রশ্নঃ প্রশ্ন তাদের কিরূপে চিহ্নিত করা যায় ?
উত্তরঃ উত্তরঃ জ্ঞানেন্দ্রিয়, জ্ঞাত হবার পঞ্চ ইন্দ্রিয় রূপে।
প্রশ্নঃ জল উপাদান যে পাঁচটি রূপে বর্তমান সেই জলপঞ্চক কি আমাকে বলুন।
উত্তরঃ. শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস এবং গন্ধ।
প্রশ্নঃ এদেরও কি কোন বিশেষ নাম আছে ?
উত্তরঃ এরা পঞ্চ তন্মাত্র….পাঁচটি সুক্ষ্মভাবে রূপে পরিচিত।
প্রশ্নঃ পাঁচটির ভিতরেই ক্ষিতি (পৃথিবী) উপাদান অবশিষ্ট। দেহের ভিতর এর অবস্থিতি কিভাবে?
উত্তরঃ স্বরযন্ত্র, হস্ত, পদ, জননেন্দ্রিয় এবং নিষ্ক্রমণ ইন্দ্রিয়।
প্রশ্নঃ এবং তারা পরিচিত?
উত্তরঃ কর্মেন্দ্রিয়রূপে, কর্মের জন্য পঞ্চ ইন্দ্রিয়।
প্রশ্নঃ উপাদান দ্বারা এই প্রকারে গঠিত মানবদেহকে একটি এককে ধারণ করার পরিবের্তে বেদান্তিকেরা বলে থাকেন যে এর ভিতর বহু একক আছে। তা কি সত্য?
উত্তরঃ “বহু” নেই; তবে তিনটি আছে। কেউ কেউ বলে চারিটি আছে।
প্রশ্নঃ সেগুলি কি? তাদের কি বলা হয় ? তৃতীয় এবং চতুর্থ ?
উত্তরঃ স্থূল দেহ, সূক্ষ্ম দেহ এবং কারণ দেহ। কারো কারো মতে চতুর্থ আর একটি আছে, তাকে বলা হয় মহাকারণ দেহ।
প্রশ্নঃ স্থুল দেহ বলতে ঠিক কি বোঝায়?
উত্তরঃ যে পঁচিশটি প্রাথমিক তত্ত্বের কথা আমি বলেছি স্থুল দেহ তার দ্বারা গঠিত।
প্রশ্নঃ তাহলে সূক্ষ্ম শরীর কি?
উত্তর: পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ তন্মাত্র, পঞ্চ প্রাণ, মন এবং বুদ্ধি—এই সতেরোটি তত্ত্ব দ্বারা সূক্ষ্ম দেহ গঠিত।
প্রশ্নঃ এ কি শুধু সূক্ষ্ম দেহ বলেই অভিহিত অথবা অন্য কোন নাম আছে?
উত্তরঃ কেন থাকবে না? আছে। এর অপর নাম তৈজস।
প্রশ্নঃ এ কি কোন অবস্থার দ্বারা চিহ্নিত?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তাই।
প্রশ্নঃ তার নাম কি?
উত্তরঃ স্বপ্নাবস্থা।
প্রশ্নঃ আপনি কি বলতে চাইছেন যে স্থুল দেহে নির্দেশিত কোন অবস্থা নেই?
উত্তরঃ নিশ্চয়ই আছে।
প্রশ্নঃ ঐ অবস্থার নাম আমাকে বলুন?
উত্তরঃ তা হল জাগ্রত অবস্থা।
প্রশ্নঃ কারণ দেহ কি?
উত্তরঃ এতে জ্ঞাতা, জ্ঞাত তত্ত্বের সঙ্গে চিত্ত অথবা চিৎ যুক্ত।
প্রশ্নঃ একে কি বলা হয় ?
উত্তরঃ প্রজ্ঞা।
প্রশ্নঃ আর এর অবস্থা ?
উত্তরঃ সুষুপ্তি অবস্থা, গভীর নিদ্রা।
প্রশ্নঃ চতুর্থ, মহাকারণ দেহ বলতে কি বোঝায় তাও আমকে বলুন?
উত্তরঃ তত্ত্ব অবিমিশ্র, কোন প্রাথমিক তত্ত্বের মিশ্রণবিহীন শুদ্ধ চিৎ, শাশ্বত সাক্ষী, আত্মজ্যোতি। একে বলা হয় মহাকারণ দেহ।
প্রশ্নঃ অন্যগুলির মতন এর কি কোন নাম আছে?
উত্তরঃ একে বলা হয় হিরণ্যগর্ভ।
প্রশ্নঃ এর অবস্থা?
উত্তরঃ এ অবস্থাবিহীন; সর্বপ্রকার অবস্থার উর্ধ্বে এবং সেই কারণে একে অক্ষর পুরুষ বলে বর্ণনা করা হয়।
প্রশ্নঃ এই স্থুল শরীরের জন্য পঞ্চভূতে বিশেষ প্রযোজ্য গুণাবলী কি আছে যা একত্রিত হয়ে একে আকৃতি দিয়েছে ?
উত্তরঃ অস্থি, চর্ম, মেদ, শিরা, কেশ।
প্রশ্নঃ জলের?
উত্তরঃ রক্ত, মুত্র, লালা, শ্লেষ্মা, মস্তিষ্ক।
প্রশ্নঃ আগুনের?
উত্তরঃ ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, আলস্য, সঙ্গম।
প্রশ্নঃ বায়ু উপাদানের?
উত্তরঃ কার্যকলাপ, গতিবিধি, গতিবেগ, লজ্জা, ভয়।
প্রশ্নঃ দেহে আকাশ উপাদান নিশ্চয়ই কিছু ফলাফলের জন্য দায়ী?
উত্তর : হ্যাঁ, এর থেকে কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ ও মাৎসর্য ভাব হয়।
প্রশ্ন : মানুষের অনেক প্রকারের জ্বালা-যন্ত্রণা আছে, তাই নয় ? তার এই গঠনের পরিণতি কি তার দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট?
উত্তরঃ তোমার কিছু সন্দেহ আছে বলে মনে হচ্ছে। তার সমস্ত যাতনার কারণ হল সমষ্টিগত এই স্থূল গুণগুলি। কঠিন দুঃখ-কষ্ট অনেক প্রকার নয় যদিও সেইরকম মনে হয়। এগুলি চার প্রকারের। এরা ব্যসন নামে পরিচিত।
প্রশ্নঃ চারটি ব্যসন কি কি?
উত্তরঃ দেহ, মন, সম্পদ এবং লিঙ্গ যদিও অপরাপর আরো আছে, সে সবগুলিরই ভিত্তি এদের উপর।
প্রশ্নঃ মানুষ মদগর্বে অন্ধ হয়ে ঘুরে বেড়ায়; তার প্ররোচনাকারী অহমিকা বস্তুটি কি? অহমিকা কয় প্রকার?
উত্তর : চার প্রকার; কুল গর্ব, ধন গর্ব, যৌবনের গর্ব এবং পাণ্ডিত্যের গর্ব। যদিও অন্যন্য প্রকারের আরো আছে, কিন্তু সেগুলিকেও এদের দলভুক্ত করা চলে।