ধ্যান – বালবিকাশ গুরু সহায়িকা।
প্রার্থনা বনাম ধ্যান:
“পূর্ণতা/চরিতার্থতা প্রাপ্তির দুটি পথ আছে: প্রার্থনা ও ধ্যান। প্রার্থনা তোমাদের ভগবানের চরণে সনির্বন্ধ আবেদক হিসেবে তুলে ধরে। অন্য দিকে ধ্যান ভগবানকে প্ররোচিত করে তোমাদের কাছে নেমে আসতে এবং তোমাদের অনুপ্রাণিত করে তাঁর স্তরে উন্নীত করতে, ধ্যান দুজনকে এক সাথে আনতে সহায়ক হয়, একজনকে নীচে ও অন্যজনকে ওপরে স্থান দেওয়ার জন্য নয়।’’
[সত্য সাই স্পিকস পঞ্চম খন্ড, “একই শিখা থেকে সমস্ত প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয়”}
ধ্যান শিক্ষণ:-
কেউ কি অন্যকে ধ্যান প্রশিক্ষণ দিতে পারে? অথবা প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি করতে পারে? হয়ত একটি ব্যক্তিকে অঙ্গ ভঙ্গি, অঙ্গ বিক্ষেপ, হাত, পা, পায়ের পাতা, গলা, মাথা, শিড়দাঁড়ার অবস্থান শেখাতে পারে, শ্বাস প্রশ্বাসের শৈলী বা তার গতি শেখাতে পারে। কিন্তু ধ্যান হল মানুষের ভিতরের কার্যকলাপ, এর সাথে সাময়িক/ বিষয়ী শান্ত ভাব জড়িত, মনকে খালি/শূন্য করে অন্তরের স্ফূলিঙ্গ থেকে নির্গত আলোতে নিজেকে ভরিয়ে তুলতে হবে। এই শৃঙ্খলা কোন পাঠ্য পুস্তক শেখাতে পারে না আর কোন ক্লাস ও এটি জ্ঞাপন করতে পারে না।
[সত্য সাই স্পিকস সপ্তম খন্ড, প্রশ্নের উত্তর]
“তোমাকে কারোর ওপর নির্ভর করতে হবে না ধ্যানে সাফল্য অর্জন করার জন্য অথবা নম্রস্বরে কোন এক নামের পূণরাবৃত্তি ( ধ্যান ও জপ) করার জন্য, অথবা অপেক্ষা করতে হবে না কোন সাধু সন্তের কাছ থেকে মন্ত্র নেওয়ার। অন্তর থাকে ভগবানকে প্রার্থনা করলে, ভগবান ঠিকই দিশা দেখাবেন।”
[সত্য সাই স্পিকস VII, বার্তার ভাষ্য।]
ধ্যানের সময়সূচী:
আদর্শ সময় ঊষাকালের পূর্বে (রাত্রি ৩টে থেকে সকাল ৬টার মধ্যে, পূণ্য লগ্ন ভোর 4:30-5:15 AM পর্যন্ত)
[সত্য সাই স্পিকস ষোড়শ খন্ড, চোখের পাতা ও শিষ্য]
রূপ ধ্যানের ওপর স্বামীর নির্দেশ:
স্বামী ছাত্রদের বলতেন তোমাদের কোন একটা বস্তুর ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে– শিখা, মূর্তি অথবা ছবি– ১২ সেকেন্ডের জন্য পূর্ণ্য মনো সংযোগ ও নিষ্পলক ভাবে। এটিই হল একাগ্রতা (ধারণা)। দ্বাদশ ধারণা নিয়ে একটি ধ্যান। অর্থাৎ ধ্যান ১২ x ১২= ১৪৪ সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া উচিৎ। সুতরাং, যথার্থ ধ্যান ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হওয়া উচিৎ না। দ্বাদশ ধ্যান একটি সমাধির সমতুল্য অর্থাৎ ১২x১৪৪ সেকেন্ড। ধ্যান শুধু মাত্র কিছু মুহুর্ত /ঘন্টা বসে থাকা নয়। নিরন্তর ভগবান চিন্তন সর্ব সময় ও সর্বস্থানে।
একবার শ্রী রমন মহর্ষিকে জিজ্ঞেস করা হয়, কতক্ষণ ধ্যান অনুশীলন করা উচিৎ? ১৫ না ৩০ না ৪৫ মিনিট নাকি ১ ঘন্টা? উনি উত্তর দেন, “একজন ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্যান করে চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে বিস্মৃত হচ্ছে যে সে ধ্যান করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি শারীরিক ভাবে সচেতন যে তুমি ধ্যান করছ, ততক্ষণ সেটা ধ্যান নয়।”
দেহ ও মনের সচেতনতা ও আত্মচিন্তা সম্পূর্ণ লুপ্ত হতে হবে। কেবল মাত্র ধ্যানের উদ্দেশ্যের অভিজ্ঞতাই অবশিষ্ট থাকবে অর্থাৎ দিব্যত্বের উপস্থিতি বৈ আর কিছু নয়। ধ্যানের উদ্দেশ্য হল অভিজ্ঞতা লাভ কিন্তু অভিজ্ঞতা লাভ করছি এই সচেতনতা বিহীন অবস্থায়।
ধ্যানের ভঙ্গিমা:
একটি আসন/কাপড় /গদির ওপর বসে প্রার্থনা করতে হবে। এটি দেহের তড়িৎ কে ভূমিস্থ হওয়া থেকে প্রতিরোধের কাজ করে। সোজা হয়ে বসতে হবে কারণ “যখন শরীর সোজা ও শান্ত থাকবে, তখন মন / মস্তিষ্ক ও সরল ও শান্ত থাকে। যদি তুমি তোমার শরীর কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারো, তাহলে মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। “আরামদায়ক ভাবে হাত দুটি দুভাবে রাখতে পারো – ক) হাত দুটি কোলের ওপর, একটি তালুর ওপর অন্যটি, বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে তর্জনী স্পর্শ করে থাকবে। অথবা খ) হাত দুটি হাঁটুর ওপর রেখে তালু দুটি ঊর্ধ্ব মুখে আর অঙ্গুলি চিন মুদ্রায়. শ্বাস – প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রিত করার জন্য জিহ্বা দাঁতের পেছনে রাখতে হবে।”
[সত্য সাই স্পিকস একাদশ খন্ড, ভক্তি স্তরে স্তরে।]
[source: http://www.sathyasai.org/devotion/meditation.html]