অমৃতমন্থনের কাহিনী
একবার দেবতারা (যাঁরা সৎ ছিলেন)এবং অসুরেরা (যাঁরা দুরাচারী ছিলেন) মিলে দুধের সাগর মন্থন করেন। তাঁরা তার থেকে বহুবিধ রত্ন লাভের আশায় এই কাজটি করেন। মন্থনের জন্য মন্দার পর্বতকে দণ্ড এবং সর্পরাজ বাসুকিকে রজ্জু হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রথমে উঠলো কামধেনু (ইচ্ছাপূরণকারী গাভী); তারপর এলো কল্পবৃক্ষ (সকল ইচ্ছাপূরণকারী বৃক্ষ); তারপর উঠলেন লক্ষী (সম্পদ ও প্রাচুর্যের দেবী); এবং তার সঙ্গেই উঠলো হলাহল যা পানে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। ফলে ত্রাসের সঞ্চার হলো যে ত্রিভুবন না ধ্বংস হয়ে যায়। তখন দেবাসুর সকলেই শিবের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন যাতে তিনি সকলকে রক্ষা করেন। তাদের প্রার্থনায় আর্দ্র হয়ে শিব, যিনি দেয়ার এবং করুণার সাগর, সেই হলাহল পান করলেন। সেই বিষের ধোঁয়া তাঁর পক্ষেও অসহনীয় ছিল। বলা হয়ে থাকে যে এইজন্যই নাকি তাঁর জটাজালের ওপর গঙ্গা নেমে এলেন তাঁর অবিচ্ছিন্ন ধারা নিয়ে। (অনেক শিবের মন্দিরে যে ঘন্টার পর ঘন্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবিরাম ‘অভিষেক’ করা হয় এটাই তার তাৎপর্য).
কাহিনী (শ্লোকের সঙ্গে সম্পর্কিত)
অসুরেরা এবং দেবতারা যখন অমৃতসাগর মন্থন করলেন ,তখন একের পর এক চৌদ্দটি মহামূল্যবান রত্না উঠে এলো। একসময় একটি পূর্ণপাত্র হলাহল উঠলো। এটি এতই বিষাক্ত ছিল যে তার একটি ফোঁটা সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস করার শক্তি রাখতো। এখন সমস্যা দাঁড়ালো যে সেটিকে কীভাবে অপসারিত করা যায় ! এমন ভয়ঙ্কর বস্তু কোথায় রাখা যায় ?দেবতারা এবং অসুরেরা তখন তাঁদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক বিষ্ণুর কাছে গেলেন। শিবের কতখানি ক্ষমতা ,এদের কাছে তা প্রমাণ শ্রী বিষ্ণু তাঁদের শিবের কাছে পাঠালেন। তাঁরা খুব সাবধানে পাত্রটি হাতে নিয়ে কৈলাস পর্বতে গিয়ে পৌঁছলেন। শিব ছিলেন ধ্যানমগ্ন। তাঁরা শিবকে বুঝিয়ে বললেন যে কি কারণে শিবের কাছে তাঁরা এসেছেন এবং তাঁর কাছে তাদের রক্ষা করার জন্য বিনতি করলেন। শিব সহাস্যে তাঁদের আশ্বস্ত করলেন। এক চুমুকে তিনি সেই হলাহল পান করলেন। সেটি তাঁর কণ্ঠ দিয়ে নামতে লাগলো। কিন্তু শিব জানতেন যে ওই বিষ যদি তাঁর রক্তে মিশে যায় ,তাহলে তাঁর পাদুটি পৃথিবীকে স্পর্শ করে আছে বলে সমগ্র পৃথিবী ছাই হয়ে যাবে। সুতরাং তিনি সেই হলাহলকে কণ্ঠ দিয়ে আর নীচে নামতে দিলেন না। সেটিকে তিনি কণ্ঠেই ধরে রাখলেন। সেই বিষ এতো তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ছিল যে তিনি দোহন নিবৃত্তির জন্য সকল রকম প্রতিষেধক ব্যবহার করলেন।
প্রথমে শীতল করার জন্য তিনি চন্দ্রকে রাখলেন ;কিন্তু দহনের জ্বালা কমল না। তারপর তিনি তাঁর জটাজালে গঙ্গাকে ধারণ করলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। শেষকালে শিব” রামনাম জপ্ করতে লাগলেন। তৎক্ষণাৎ দহনের জ্বালা দূর হয়ে গেলো। এইজন্যই শিবের কপালে চন্দ্র বিরাজ করে। তিনি করুনাসমুদ্র তাই ভক্তদের কৃপা করতে তিনি সেই হলাহল পান করেছিলেন।
[Illustrations by Shyam, Sri Sathya Sai Balvikas Student]
[Source: Sri Sathya Sai Balvikas Guru Handbook and SSS – V1]