ভরতের সাথে রামের সাক্ষাৎ
অবশেষে তারা চিত্রকূট পর্বতে পৌঁছলেন। ভরত গিয়ে রামের পায়ে পড়লেন। রানীরা ও অন্যান্য অমাত্য ও প্রজাবর্গ রামকে দেখে দুঃখে ভেঙ্গে পড়লেন। কুলগুরু বশিষ্ঠ রামকে তার প্রয়াত পিতার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে বললেন। যারা রামের কাছে এসেছিলেন, দুদিন পর রাম তাদের ঐ জঙ্গলে কষ্ট করে না থেকে অযোধ্যায় ফিরে যাওয়ার জন্য কুলগুরু বশিষ্ঠকে অনুরোধ করলেন। কৈকেয়ী রামের কাছে ক্ষমা চাইলেন। কৈকেয়ীকে রাম জানালেন যে, তাঁর নিজের ইচ্ছাতেই সবকিছু ঘটেছে। রাম ও সীতাকে দেখে সকলে এত আনন্দ পেয়েছিলেন যে তারা ফিরে যেতে চাইছিলেন না। ষষ্ঠ দিনে, ভরত রামকে বললেন,তাঁকে ছেড়ে অযোধ্যা ফিরে যাওয়া খুব দুঃখজনক। রাম ভরতকে বোঝালেন যে, পিতার আদেশ পালন করাই ধর্মের পথ। এই ধর্মের পথই আমাদের অনুসরণ করা কর্ত্তব্য।
গুরুরা ছেলেমেয়েদের বলবেন, যখন তোমরা কোনো ভুল করে দুঃখিত হবে তখন প্রতিজ্ঞা করবে যে দ্বিতীয়বার আর এই ভুল করবে না, তাহলে ভগবান সর্বদা তোমাকে ক্ষমা করবেন। তিনি দয়ালু, তিনি ভালবেসে তোমায় কাছে টেনে নেবেন।
আমরাও বন্ধুদের প্রতি প্রেমপূর্ণ ও ক্ষমাশীল হব, মূল্যবোধকে মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করব।“প্রেম দেয় এবং ক্ষমা করে, স্বার্থপরতা গ্রহণ করে এবং ভুলে যায়”।
গুরুরা বালবিকাশ ছেলেমেয়েদের কাছে রামের পিতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কথা তুলে ধরবে। পিতা স্বর্গত হওয়ার পরেও রাম পিতার প্রতিশ্রুতিকে পালন করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, তাঁর কাছে পিতার সন্মান ছিল অনেকবেশী মূল্যবান। তিনি ধর্ম ও সদাচারকে এতই মূল্য দিয়েছেন যে নিজ রাজ্যের প্রতি তার অধিকার পর্য্যন্ত ত্যাগ করেছেন।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধঃ- পিতামাতার প্রতি বাধ্যতা / নিজের কথার মূল্য দেওয়া। যে কোনো জাগতিক গৌরব অর্জন করার থেকে সদাচার পালন বেশী জরুরি।
রাম ভরতকে তাঁর পাদুকা দিলেন এবং চৌদ্দ বছর মনোযোগ দিয়ে রাজ্যশাসনের আদেশ দিলেন। ভরত রামকে বললেন, এই পাদুকা রামের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং তিনি রামের প্রতিনিধি হয়ে রাজ্যের সব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। ভরত রামের পায়ে প্রণাম করে, বিদায় নেওয়ার অনুমতি চাইলেন।
গুরুরা ছেলেমেয়েদের কাছে এই বিষয়ে জোর দিয়ে বলবেন, “দেখো, ভরত অযোধ্যার রাজা হ’য়ে, সব রকম বিলাসিতার মধ্যে জীবন কাটাতে পারতেন, কিন্তু তিনি লালসারূপী ক্ষুদ্র অনুভূতি, ক্ষমতা ও পদমর্যাদার অহংকারকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সেই পরিস্থিতিতে যা করনীয় অর্থ্যাৎ রামকে অযোধ্যায় ফিরিয়ে আনা ও তাঁর হাতে রাজ্যভার সমর্পন করাকেই সঠিক মনে করলেন।.
শিক্ষণীয় মূল্যবোধঃ- সিদ্ধান্ত নেবার আগে ভালমন্দ বিচার করা আর সর্বদা সদাচার ও ধর্মের পথ অনুসরণ করা।
অযোধ্যায় ফিরে ভরত, যতদিন না রাম বনবাস থেকে অযোধ্যায় ফিরলেন, ততদিন রামের পাদুকা সিংহাসনে রেখে, ঐ পাদুকা পুজো করার ব্যবস্থা করলেন। ভরত পাদুকাকে মাথায় করে নিয়ে এসে সিংহাসনে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করলেন। নিজে তপস্বীর বেশে নন্দীগ্রামে এক কুঁড়েঘরে, কঠোর তপস্বীর জীবন যাপন করতে লাগলেন।
গুরুরা ছেলেমেয়েদের বলবেন, দেখো ভরতের কত ভ্রাতৃভক্তি এবং তার মধ্যে কত সঠিক চিন্তাধারা যে রাম ১৪ বছরের আগে অযোধ্যা ফিরে আসবেন না জেনেও তিনি রামের দুত হয়ে দায়িত্ব ভার পালন করবেন ঠিক করলেন। গুরুরা এটাও তুলে ধরবেন, দেখো রামের বনবাসের জীবন দেখে ভরত সেইভাবেই তপস্বীর মত থাকবেন ঠিক করলেন।
আজকের এই বস্তুবাদী বিশ্বে পরিবারের মধ্যে মতবিরোধ খুবই সাধারণ ঘটনা, কিন্তু অযোধ্যার রাজ পরিবারের ভাইদের মধ্যে অসাধারণ সম্পর্ক প্রশংসার যোগ্য।
মূল্যবোধ – পরিবারের ভাইবোনেদের মধ্যে ভালবাসা ও ত্যাগ হল সুন্দর সম্পর্কের ভীত।
যেটা তোমার নয়, সেটার প্রতি লোভ কোরো না এবং যদিওবা সেই জিনিসটা তোমার হয় তবু তোমার আপনজনকে দিলে কোনো ক্ষতি হবে না।
তোমার সব কাজে- তা খেলাধূলা, পড়াশুনা, প্রতিযোগিতা বা অন্যান্য কাজে সর্বদা নিরপেক্ষ ভাবনা বজায় রাখবে। মনে রেখো, কোনো উন্নতি যদি অসদ উপায়ে হয় বা তার জন্য তোমার চারপাশের প্রতিবেশীর সঙ্গে যদি সামঞ্জস্যপূর্ন সম্পর্ক নষ্ট হয়, সেটা প্রশংসনীয় নয়।
Watch/ লক্ষ করো – তোমার বাক্য, কাজ, চিন্তা, চরিত্র ও হৃদয়।
হীরো হও, শূন্যকে বেছে নিও না। ( যিনি নিজ জীবনে সঠিক ও ধার্মিক, তিনি প্রকৃত হীরো বা নেতা।)