রামের জন্ম
পুরাকালে দশরথ নামে এক সাহসী এবং বিচক্ষণ রাজা ছিলেন, তিনি সূর্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন। কোশল রাজ্যের রাজকন্যা কৌশল্যার সঙ্গে তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।বিবাহের বেশ কিছুদিন পরেও সন্তান না হওয়ায়, রানী কৌশল্যার পরামর্শে দশরথ প্রথমে সুমিত্রা ও পরে কৈকেয়ীকে বিবাহ করেন। কিন্তু তিন রাণীরই কোনো সন্তান হল না।
চিন্তিত দশরথ কুলগুরু বশিষ্ঠের শরণাপন্ন হলেন। বশিষ্ঠ তাঁকে পুত্রকামেষ্টি যজ্ঞ করতে পরামর্শ দিলেন।এই যজ্ঞ করলে ভগবান খুশী হয়ে পুত্রসন্তান লাভের বর দেন। ঋষশৃঙ্গ যখন যজ্ঞ করছিলেন, তখন যজ্ঞের আগুন থেকে এক সৌম্যকান্তি পুরুষ আবির্ভূত হলেন।তাঁর হাতে একটি চকচকে পাত্র। সঙ্গে সঙ্গে আকাশবাণী ধ্বনিত হল—“মহারাজ, এই পাত্রটি গ্রহণ করুন। এই পাত্রের পায়েস তিন রাণীর মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দিন।“ রাজা পাত্রটি গ্রহণ করলেন। সেই স্বর্গীয় পুরুষ অদৃশ্য হলেন।
গুরুর মন্তব্যঃ
যখন তোমরা চিন্তাগ্রস্ত হবে অথবা তোমাদের কোনো কিছুর প্রয়োজন হবে তখন তোমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবে।
শিক্ষনীয় মূল্যবোধঃ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস,শরণাগতি এবং প্রার্থনার গুরুত্ব।
তিন রানীর মধ্যে পায়েস ভাগ করে দেওয়া হলো। একটি ঈগল কোথা থেকে এসে রানী সুমিত্রার পায়েসের বাটি ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। তখন কৌশল্যা এবং কৈকেয়ী তাদের পায়েস সুমিত্রার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন। অচিরেই কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষণ এবং শত্রুঘ্ন জন্ম গ্রহণ করলেন।
শিক্ষনীয় মূল্যবোধঃ যত্নশীল হওয়া এবং ভাগ করে নেওয়ার আনন্দ। ভাগ করে নিলে সুখ কয়েকগুণ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
রাজা দশরথ অত্যন্ত জাঁকজমক এবং আড়ম্বড়ের সঙ্গে তাঁর পুত্রদের জন্ম উপলক্ষে উৎসব উদযাপন করলেন। দরিদ্রদের মধ্যে গাভী বিতরণ করলেন। দশরথের পুত্ররা ছিলেন ঐশ্বরিক। তারা সাধারণ মানুষ ছিলেন না। সকল বিষয়েই এঁরা অসাধারণ ছিলেন। সুমিত্রা লক্ষ্য করলেন যে লক্ষ্মণ দিবারাত্র শুধুই কাঁদেন। রাজবৈদ্যের ওষুধেও তাঁকে শান্ত করা যায়না। কুলগুরু বশিষ্ঠের পরামর্শে লক্ষ্মণকে রামের সঙ্গে একই দোলনায় রাখা হলো। তৎক্ষণাৎ লক্ষ্মণের কান্না থেমে গেল। একই ঘটনা ঘটল শত্রুঘ্ন এবং ভরতের সঙ্গে।
যথাসময়ে চার রাজপুত্রকে শিক্ষালাভ করার জন্য ঋষি বশিষ্ঠের আশ্রমে পাঠানো হল। সেখানে তারা রাজবেশ ছেড়ে সাধারণ পোশাক পরিধান করলেন।
গুরুরা শিশুদের বলবেন, অকারণে বেশি জমকালো মহার্ঘ্য জামাকাপড় পরা ঠিক নয়। স্কুলে যাওয়ার সময় দামী পেন্সিল বাক্স, দামী কলম, ঘড়ি ইত্যাদি নিয়ে যাবে না। সেখানে সকলে সমান। স্কুলে যাওয়া হয় শিক্ষা লাভ করতে সম্পদের দম্ভ দেখাতে নয়।
শিক্ষনীয় মূল্যবোধঃ জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাত্রা অপেক্ষা,সাধারণ জীবনযাত্রা এবং উচ্চমানের চিন্তাধারা অনেক বেশী শ্রদ্ধা আদায় করতে সক্ষম।
শিক্ষান্তে রাজপুত্রদের প্রাসাদে ফেরার অনুমতি দিলেন ঋষি বশিষ্ঠ। দশরথের ইচ্ছে তাঁরা ধনুর্বিদ্যা আয়ত্ত করুন। ধনুর্বিদ্যা শিক্ষার সময় রামকে যখন গাছের ডালে পাখিকে তীর বিদ্ধ করতে বলা হলো তিনি প্রতিবাদ করে বললেন আমরা ধনুর্বিদ্যা রপ্ত করব শিষ্টের পালনের জন্য কোনো নিরীহ প্রাণী কে হত্যা করার জন্য নয়।
গুরুর মন্তব্যঃ রামচন্দ্র, ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবার, “সকলকে সাহায্য করো কারোকে আঘাত করো না’’ এই দিব্যবাণীটি অনুসরণ করতেন।
মূল্যবোধঃ অহিংসা এবং ধর্ম (সদাচার)