সেতু বন্ধন
রাম তাঁর সামনে বিশাল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্মণকে তাঁর তীর ধনুক আনতে বললেন, যেই রাম ধনুকে তীর সংস্থাপণ করলেন, লক্ষ্মণ ভীত হলেন পরিণতির কথা ভেবে, কারণ একের পর এক ঢেউ রামের চরণে ঘূর্ণিত হয়ে এসে পড়ছে, যেন তারা দয়া প্রার্থনা করছে। ঠিক সেই সময় একটা কন্ঠস্বর শোনা গেল, মনে হল যেন আকাশ থেকে আসছে, “প্রভু, আমরা দুজন এই শিবিরের সেনাপতি, নল ও নীল, যারা এক মুনির অভিশাপে অভিশপ্ত । সেই অভিশাপ এখন আশীর্বাদ স্বরূপ কাজে আসতে পারে।’’ সমুদ্র রামকে একটি ঘটনা বর্ণনা করল:
এক সময়, যখন নল ও নীল ছোট ছিল, নদীর তীরে অনেক ঋষিগণ পর্ণ কুটিরে বাস করতেন। এই দুজন ঋষিদের কুটিরে ঢুকে পবিত্র বিগ্রহ “শালগ্রাম শিলা” নিয়ে জলে ফেলে দেয়। ঋষিরা ওদের এই বলে অভিশাপ দেন, “তোমাদের নিক্ষিপ্ত কোন কিছুই যেন না ডোবে, বরং সেগুলি যেন জলে ভেসে থাকে। ওগুলি যেখানে ফেলছ সেখানেই থেকে যাবে, বন্যা অথবা দ্রুত জলপ্রবাহও সেগুলিকে স্থানচ্যুত করতে পারবে না।”
গুরুদের বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলতে হবে যে, যদি তারা দুষ্টুমি করে তাহলে তারা বড়দের কাছে হয় তিরস্কৃত হবে নয় শাস্তি পাবে।
কারণ বড়রা চান যাতে তারা নিজের ভুলের গুরুত্ব বোঝে। কিন্তু যদি তারা নিজেদের ব্যবহারে অনুতপ্ত হয় আর কথা দেয় যে আর কোন দিন সেই কাজ আর করবে না, তাহলে শাস্তি তাদের অনুকূলে যাবে, ঠিক যেমন নল ও নীলের ক্ষেত্রে হয়েছিল।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ : বড়দের শ্রদ্ধা।
ভালো হও, ভালো করো ও ভালো দেখো।
সমুদ্র বলল যে রামের নামাঙ্কিত সকল পাথর যদি তারা সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে তাহলে সেগুলি ভেসে থাকবে। সমুদ্র আরো বলল, ‘ রাম, তোমার নাম হাল্কা, একদম ভারি নয়। সুতরাং একটি বড় পর্বত চূড়া ফেললেও সেটা ভেসে থাকবে এবং সেতু তৈরী করবে।’ রাম বানরদের সেতু নির্মাণ করতে বললেন। জাম্ববান নল ও নীলকে তাদের অভিশাপ কাজে লাগাতে বললেন, “রামকে নিজেদের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা করে পাহাড় ও পাথর সমুদ্রে ফেলতে থাকো।”
গুরুরা বাচ্চাদের বলবেন যে কোন কাজই কঠিন না, যদি আমরা তাতে ভগবানের নাম নিয়ে নিযুক্ত হই, কারণ ভগবানের নামে দুর্দান্ত শক্তি আছে।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ :ভগবানের নাম তাঁর স্বরূপের চাইতেও বেশি শক্তিশালী।
বানরেরা বিভিন্ন দিকে ছুটে গিয়ে সমগ্র পাহাড় পর্বত নল ও নীলের কাছে আনল যাতে তারা ওগুলি জলে ছুড়ে ফেলতে পারে। পাঁচদিনের মধ্যে একশো যোজন দীর্ঘ সেতু নির্মিত হল।
রাম বানরদের কাজের প্রশংসা করলেন। বিভীষণ রামকে বললেন যে রাবণ শিবের উপাসক। বিভীষণের পরামর্শে রাম একটি শিবলিঙ্গ স্থাপিত করলেন, যেটি রাম লিঙ্গেশ্বর বলে প্রসিদ্ধ, আর সেটির আনুষ্ঠানিক পূজা করলেন।
গুরুরা বাচ্চাদের বলবেন যে তারা যেন যে কোন কাজের আগে ভগবানের নাম নেয়। এখানে ভগবান রাম, যদিও অবতার, উদাহরণের মাধ্যমে প্রার্থনা ও শরণাগতির তাৎপর্য দেখিয়েছেন।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ :প্রার্থনা বিহীন কাজ হল অন্ধের মতো হাতড়ানো, প্রার্থনার সঙ্গে কাজটি
সৎ ও কার্যকরী। তিনটি W হল work (কর্ম), wisdom (জ্ঞান) আর worship (পূজা) ।
তারপর বানরেরা সেতু পার হল,ওষ্ঠে তাদের রাম নাম। শীঘ্রই রাম, লক্ষ্মণ ও বিভীষণ সেতু পেরিয়ে লঙ্কার প্রধান দ্বারে এসে উপস্থিত হলেন।