বিশ্বামিত্রের সঙ্গে রামের যাত্রা
একদিন ঋষি বিশ্বামিত্র অযোধ্যায় এলেন। তিনি রাম এবং লক্ষ্মণকে তাঁর আশ্রমে যজ্ঞ পন্ডকারী রাক্ষসদের হত্যা করার জন্য নিয়ে যেতে চাইলে রাজা দশরথ দ্বিধাগ্রস্ত হলেন। কিন্তু রাম বললেন তিনি সাধুসন্ত এবং ভালো মানুষদের রক্ষা করার জন্য দেহধারণ করেছেন।
গুরুর মন্তব্যঃ আমাদের সবসময় রামচন্দ্রের মত অপরকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
মূল্যবোধঃ “পরোপকারম্ ইদম শরীরম’’—এই পার্থিব দেহ অপরের উপকার করার জন্য দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বামিত্র দশরথকে আশ্বস্ত করলেন, তিনি রাম লক্ষ্মণকে কাজ হয়ে যাবার পর অযোধ্যায় পৌঁছে দেবেন। পিতার অনুমতি নিয়ে রাম ও লক্ষণ বিশ্বামিত্রের সঙ্গে যাত্রা করলেন’
গুরুর মন্তব্যঃ কোথাও যাবার আগে আমাদের উচিত রামচন্দ্রের মত পিতা-মাতার অনুমতি নেওয়া।
মূল্যবোধঃ গুরুজনকে মান্য এবং শ্রদ্ধা করা।
শীঘ্রই তারা সরযূ নদীর তীরে পৌছলেন। বিশ্বামিত্র তাঁদের বল এবং অধিবল মন্ত্র শেখালেন। এই মন্ত্র তাদের বিপদ এবং ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করবে। অনতিবিলম্বে তারা সেই অরণ্যে পৌঁছলেন যেখানে রাক্ষসী তাড়কা তার পুত্র মারীচের সঙ্গে বসবাস করত। বিশ্বামিত্র তাড়কাকে হত্যা করতে বললেন যাতে আরো অনেকে তাড়কার অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়। কোন রকম দ্বিধা না করে রাম তীর নিক্ষেপ করলেন। তীর বিঁধল তাড়কার বুকে। সে প্রাণ ত্যাগ করল।
বিশ্বামিত্র রামকে তাঁর সকল অস্ত্র দিলেন, বললেন ওই অস্ত্রগুলো রামের কথামতো কাজ করবে। বিশ্বামিত্র যজ্ঞ শুরু করলেন। রাম এবং লক্ষ্মণ পাঁচ দিন ধরে অতন্দ্রপ্রহরায় বসে রইলেন। ছয় দিনের দিন মারীচ ও সুবাহু অন্য আরও কিছু রাক্ষসকে সঙ্গে নিয়ে যজ্ঞ পন্ড করতে এল, কিন্তু রাম এবং লক্ষণের পরাক্রমের কাছে তাদের শক্তি ছিল নিতান্তই নগন্য। ‘মানস’ তীরের আঘাতে মারীচ কয়েক যোজন দূরে ছিটকে পড়ল এবং ‘অগ্নি’ অস্ত্রের আঘাতে সুবাহু প্রাণ ত্যাগ করল। বিশ্বামিত্র নির্বিঘ্নে তার যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন। খুশি হয়ে তিনি রাজপুত্রদের আশীর্বাদ করলেন।
গুরুর মন্তব্যঃ আমাদের উচিত সর্বদা আমাদের গুরুজন এবং শিক্ষকদের কথা শোনা, এঁদের শ্রদ্ধা করলে আমরা এঁদের আশীর্বাদ পাব।
মূল্যবোধঃ গুরুজনকে শ্রদ্ধা করা এবং তাদের মান্যতা দেওয়া।
একজন তরুণ শিষ্য তালপাতায় লেখা একটি নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে উপস্থিত হল। মিথিলার রাজা জনক একটি যজ্ঞ করবেন। তিনি সেই যজ্ঞে বিশ্বামিত্র এবং তাঁর শিষ্যদের উপস্থিতি প্রার্থনা করেছেন। সকলেই এই আমন্ত্রণপত্র পেয়ে খুশি হল কিন্তু রাম অযোধ্যায় ফিরতে চাইলে বিশ্বামিত্র রামকে বোঝালেন তিনি রাজা দশরথকে কথা দিয়েছেন তিনি নিজে রাজপুত্রদের অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। বিশ্বামিত্রের কথায় সন্তুষ্ট রাম তার সঙ্গে মিথিলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। পথে তিনি শুনলেন যে, রাজা জনককে শিব একটি ধনুক দিয়েছেন যাকে তিনি প্রতিদিন পুজো করেন এবং সেই দিন পর্যন্ত কেউ ওই হরধনুকে জ্যা পরাতে পারেনি। মিথিলয় বিশ্বামিত্র এবং তার শিষ্যরা আন্তরিক অভ্যর্থনা পেলেন। দুই রাজপুত্রকে দেখে জনক রাজা খুবই আনন্দিত হলেন। তার মনে হলো স্বর্গ থেকে যেন দুই দিব্য পুরুষ যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। হরধনুটিকে যজ্ঞস্থলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হলো।