হনুমান ও সুগ্রীবের সাথে রামের সাক্ষাৎ
রাম ও লক্ষ্মণ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে অবশেষে ঋষ্যমুখ পর্বত মালায় এসে পৌছলেন। সুগ্রীব তার ভাই বালীর ভয়ে সেখানে বসবাস করতেন। তিনি দুই ভাইকে আসতে দেখলেন, তাঁদের দিব্য রূপ দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি তাদের পরিচয় জানতে ইচ্ছুক হলেন। তাই তিনি হনুমানকে পাঠালেন দুই তপস্বীর সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতে। যখন হনুমান দুই ভাইয়ের সাথে দেখা করলেন, তার হৃদয় আনন্দে ভরে উঠল, তার মনে হল এরা যেন নর নারায়ণ, পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছেন।
গুরুরা ‘মনোজবম’ শ্লোকটি শেখাবেন, শ্লোকের মানে বুঝিয়ে বলবেন যেখানে হনুমানের গুণাবলীর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আর হনুমানের গল্প বাচ্চাদের বলবেন যেখানে হনুমানের জ্ঞান, শক্তি, নম্রতা, ভক্তি, নিঃস্বার্থ সেবা ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাম বললেন যে তাঁরা দশরথের পুত্র আর তাঁরা এসেছেন সীতা তাঁর স্ত্রীর খোঁজে, যাকে রাবণ পঞ্চবটী বন থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। রাম তারপর হনুমানের সম্বন্ধে জানতে চাইলেন। হনুমানের নয়ন অশ্রুপূর্ণ হয়ে গেল, তিনি বললেন, “আমি আমার প্রভুকে সাক্ষী রেখে একটি ঘোষণা করতে ইচ্ছুক। আমি আমার প্রভুকে পূজা করা ছাড়া আর কিছুই জানি না।’’ রাম হনুমানকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তুমি আমার কাছে লক্ষ্মণের মতোই প্রিয়। ‘ রাম বললেন, ‘হনুমান, আমি তাদেরই ওপর আমার ভালবাসা বর্ষণ করি যারা আমার সেবা করে আর যারা মনে করে যে সেবাই মুক্তির সর্বোচ্চ পথ।’
গুরুরা বাচ্চাদের বলবেন যে কিভাবে তারা ছোট ছোট সেবা কাজের মধ্যে ভগবানকে খুশি করতে পারে, প্রভুর সত্যিকারের সেবক হয়ে মানবজাতির সেবা করতে পারে।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ :মানব সেবাই মাধব সেবা / ভগবানকে খুশি কর, মানুষকে খুশি কর।
হনুমান রামকে বললেন যে সুগ্রীব বানরদলের শাসক এবং তার বড় ভাই বালী তার সাথে শত্রুর মত ব্যবহার করে রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত করেছে আর তার স্ত্রীকে কেড়ে নিয়েছে। হনুমান বলেন যে সুগ্রীব বানরদের নেতা, তিনি শত শত বানর দিকে দিকে পাঠাবেন সীতার খোঁজে। তারপর তিনি রাম ও লক্ষ্মণকে সুগ্রীবের কাছে নিয়ে গেলেন। সুগ্রীব রামকে স্বাগত জানালেন। তাদের বন্ধুত্বের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো অগ্নিকে সাক্ষী রেখে। সুগ্রীব বলেলন, তিনি একটি পুষ্পক রথ উড়ে যেতে দেখেছেন, যার মধ্যে থেকে অলংকার ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছিল। যখন রাম লক্ষ্মণকে জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি অলংকার গুলি চেনেন কিনা, উত্তরে লক্ষ্মণ জানালেন তিনি শুধুই সীতার চরণের দিকে তাকাতেন, তাই তিনি শুধু সীতার পায়ের আঙ্গুলের আংটিটাই চিনতে পারছেন। সুতরাং এটা নিশ্চিত হল যে রাবণ সীতাকে রথে করে নিয়ে গেছেন। সুগ্রীব রামকে সর্বপ্রকার সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। রামও প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি বালীকে বধ করে সুগ্রীবের রাজত্ব ফিরিয়ে দেবেন।
হনুমান রামকে বললেন যে সুগ্রীব বানরদলের শাসক এবং তার বড় ভাই বালী তার সাথে শত্রুর মত ব্যবহার করে রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত করেছে আর তার স্ত্রীকে কেড়ে নিয়েছে। হনুমান বলেন যে সুগ্রীব বানরদের নেতা, তিনি শত শত বানর দিকে দিকে পাঠাবেন সীতার খোঁজে। তারপর তিনি রাম ও লক্ষ্মণকে সুগ্রীবের কাছে নিয়ে গেলেন। সুগ্রীব রামকে স্বাগত জানালেন। তাদের বন্ধুত্বের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো অগ্নিকে সাক্ষী রেখে। সুগ্রীব বলেলন, তিনি একটি পুষ্পক রথ উড়ে যেতে দেখেছেন, যার মধ্যে থেকে অলংকার ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছিল। যখন রাম লক্ষ্মণকে জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি অলংকার গুলি চেনেন কিনা, উত্তরে লক্ষ্মণ জানালেন তিনি শুধুই সীতার চরণের দিকে তাকাতেন, তাই তিনি শুধু সীতার পায়ের আঙ্গুলের আংটিটাই চিনতে পারছেন। সুতরাং এটা নিশ্চিত হল যে রাবণ সীতাকে রথে করে নিয়ে গেছেন। সুগ্রীব রামকে সর্বপ্রকার সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। রামও প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি বালীকে বধ করে সুগ্রীবের রাজত্ব ফিরিয়ে দেবেন।
(নীচে গুরুদের সাহার্য্যার্থে প্রফেসর অনিল কুমারের রবিবারের ভাষণ (সানডে টক) – ‘সাই বাবা প্রদত্ত রামায়ণের ব্যাখ্যা এপ্রিল ১৪, ২০১১’ থেকে উদ্ধৃত করা হলো।
রাম বালীকে বধ করলেন, সবাই জানি। বালীর মৃত্যুর সময়, ঠিক তার শরীর ত্যাগের আগে রাম তার সামনে গেলেন। রাম আর বালীর মধ্যে তর্ক হল। স্বামি খুব সুন্দর করে বোঝালেন, বালী বলল, ‘রাম, আপনি একজন রাজা, আর আমি একটি বানর, আপনার আমাকে এই ভাবে হত্যা করা কি ঠিক?’ রাম বললেন, ‘হে, বালী তুমি জানো তুমি একটি বানর, আর আমি একজন রাজা। বোঝবার চেষ্টা কর রাজারা শিকার করেন, জানোয়ার হত্যা করেন। তুমি একটি বানর, তাই তোমাকে আমি হত্যা করতেই পারি। সেখানে কোন অন্যায় নেই যেহেতু রাজারা নিয়মিত শিকার করে।’ বালী প্রথম তর্কে হেরে গেল।
তারপর সে দ্বিতীয় তর্ক করল। “রাম, আপনি তো এখন রাজা নন। আপনার ভাই ভরত রাজা, আপনি এখন আমাদের সঙ্গে জঙ্গলে আছেন। তাহলে আপনি আমাকে কি ভাবে হত্যা করতে পারেন?” রাম উত্তর দিলেন, “ না বালী, এই জঙ্গল আমাদের রাজ্যের সীমানার মধ্যে পড়ে। সুতরাং, যেহেতু আমার ভাই রাজা, আমার কর্তব্য ধর্মকে রক্ষা করাএবং রাজ্যের শৃঙ্খলা বজায় রাখা । তাই আমি তোমাকে হত্যা করলাম।’’
তারপর বালী তৃতীয় যুক্তি দিল। সে বলল, “ রাম, আপনি রাবণকে আক্রমণ করার জন্য আমার ভাই সুগ্রীবের সাহায্য চেয়েছেন। আপনার যেহেতু সাহায্য প্রয়োজন, তাই আপনি আমাকে হত্যা করলেন। রাম, আপনি আদৌ বুদ্ধিমান নন। আমার ভাই খুবই দুর্বল। আমি বহুবার ওকে আঘাত করেছি। আমার নাম শুনেই ও পালিয়ে যাবে। সুগ্রীব এতটাই কাপুরুষ আর আপনি ওর সাহায্য চাইছেন? আপনি কি বোকা, রাম। আমি বেশি শক্তিশালী। এমন কি, আপনার শত্রু রাবণও আমাকে ভয় পায়। আমি ওকে মাদুর গোটানোর মতো অনেক বার মাটিতে ফেলেছি, আমার পাঁজাকোলা করে বহুবার ওকে সমুদ্রে স্নান করিয়েছি। রাবণ আমাকে ভয় পায় কারণ ও আমার শক্তি সম্পর্কে অবগত। আপনি আমার সাহায্য চাইতে পারতেন।’’ রাম উত্তর দিলেন, “আমি তোমার ভাই সুগ্রীবের সাহায্য চেয়েছি কারণ সুগ্রীব ও আমি চরম দুর্দশার শিকার। আমরা দুজনেই রাজত্ব হারিয়েছি, আর দুজনেই স্ত্রীর থেকে আলাদা হয়ে পীড়িত। তাই আমি ওকে সাহায্য করেছি আর ও আমাকে সাহায্য করবে। এমন নয় যে আমি জানি না যে তুমি বেশি শক্তিশালী। তোমার ভাই জানে দুর্ভোগ কি! এটা বন্ধুত্বের ব্যপার।’’ বালী আবারও তর্কে হেরে গেল।
তারপর সে আরও একটি তর্কে অবতীর্ণ হল। “রামচন্দ্র, গাছের আড়াল থেকে তীর নিক্ষেপ করা কি ঠিক। কেন আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে হত্যা করলেন না। আপনি কেন লুকালেন? এটা কি বীরত্ব, এটা কি শৌর্য? “ রাম উত্তরে বললেন, “ দেখ, বালী। আমি জানি ব্রহ্মা তোমার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তোমার গলায় মুক্তোর মালাটি দিয়েছেন। আমি জানি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কেউ তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না যতক্ষণ তোমার গলায় মুক্তর মালাটি আছে। আমি ব্রহ্মার আশীর্বাদকে সন্মান জানাতে চেয়েছিলাম।, তাই গাছের আড়াল থেকে তোমায় তীর বিদ্ধ করেছি। এটা নয় যে যুদ্ধের এইটুকু ধর্মও আমি জানিনা।’’)
শীঘ্রই সুগ্রীব বানরদের বিভিন্ন দিকে সীতার অন্বেষণে পাঠালেন। অবশেষে তারা সমুদ্র তটে এসে পৌছাল, ঠিক তখনই একটি বিশাল পাখি তার মৃত ভাইয়ের শেষ কৃত্য করার জন্য সেখানে উপস্থিত হল। সেই পাখিটি হল সম্পাতি, জটায়ুর ভাই। তিনি খবর দিলেন যে সীতা লঙ্কায় অশোকবনে আছেন। তখন বানরেরা সমুদ্র কিভাবে পার হবে সেই সমস্যায় পড়ল। হনুমান উড়ে লঙ্কায় যেতে রাজি হলেন। তাকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হল।
গুরুদের বাচ্চাদের বোঝাতে হবে যে যদিও হনুমানের শারীরিক বল ছিল, তবুও তিনি তাঁর শারীরিক বল নিয়ে কখনই গর্ব করেন নি, তিনি রামের কাছে সম্পূর্ণ সমর্পিত ছিলেন এবং একমাত্র তাঁরই কাছে নিজের লক্ষ পূরণের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতেন। আবার তিনি (হনুমান) তাঁর বুদ্ধিবলেও সমুদ্র পারাপারের সময় যে সমস্ত বাধা তাঁর সামনে এসেছিল, সেগুলি অতিক্রম করেন।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ :প্রার্থনা ও শরণাগতির তাৎপর্য । নিজের শারীরিক শক্তির অযথা প্রয়োগ না করা /অন্যকে আঘাত না করা। দক্ষ কাজ কঠিন কাজের মতোই গুরুত্বপূর্ণ আর তাই আমাদের আগে চিন্তা করে, সঠিক পরিকল্পনা করে তারপর কাজ সম্পন্ন করা উচিৎ।