পঞ্চবটীতে রাম
শীঘ্রই রাম, লক্ষণ ও সীতা অগস্ত মুনির কুটিরে উপস্থিত হলেন। অগস্ত মুনি শ্রী রামচন্দ্র কে গোদাবরী নদীর তীরে পঞ্চবটীতে বসবাস করার পরামর্শ দিলেন। তিনি জানালেন যে পঞ্চবটীর পাশেই রয়েছে দণ্ডকারণ্য, যেখানে মুনি ঋষিদের বাস। কিন্তু এটি একটি অভিশপ্ত স্থান যা রাক্ষসদের কবলে উত্তপ্ত হয়েছিল। অগস্ত মুনি নিশ্চিত ছিলেন যে শ্রী রামচন্দ্রের আবির্ভাবে সেই সকল দস্যু ও রাক্ষসদের বিনাশ ঘটবে এবং মুনি-ঋষিরা পুনরায় শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে তাঁদের সাধনা সম্পন্ন করতে পারবেন। রাম লক্ষণ ও সীতার প্রবেশ মাত্রই দণ্ডকারণ্যে ডালে ডালে কচি পল্লবের জোয়ারে এল। সবুজ সজীবতায় ভরে উঠলো চারিদিক। জীর্ণ শুষ্ক লতাপাতায় লাগলো প্রাণের পরশ।
এই প্রসঙ্গে শিশুদের বোঝাতে হবে যে রাম লক্ষণ ও সীতার দিব্য আবির্ভাবেই এক মুহূর্তে সম্পূর্ণ পরিবেশটার শুদ্ধিকরণ সম্ভব হয়েছিল। এই দৈবশক্তি আমাদের মধ্যে বর্তমান। শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় সেটির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে আমরাও নিজেদের উপস্থিতিটাকে অন্যের কাছে অত্যন্ত সুখকর ও আনন্দময় করে তুলতে পারি।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধঃ প্রেমে পুষ্ট মূল্যবোধ গুলি জাগ্রত করে সেগুলি কর্মে রূপান্তরিত করাই হলো এডুকেয়ার
বৃহৎ গাছের শীতল ছায়ায় বসে শ্রীরামচন্দ্র ভ্রাতা লক্ষ্মণকে নির্দেশ দিলেন তাঁদের কুটির গড়ে তোলার জন্য তার পছন্দমত একটি স্থান চিহ্নিত করতে। নিজের পছন্দই যদি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হত তাহলে কি আর সে নিজেকে শ্রী রামচন্দ্রের প্রকৃত দাস হিসেবে গণ্য করতে পারতো? এই ভেবে লক্ষ্মণ দারুণ ব্যথিত হলেন। লক্ষ্মণের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এরপর শ্রী রামচন্দ্র নিজেই তাঁদের কুটিরের জন্য একটি স্থান বেছে নিলেন।
অন্যদিকে , সেই সময়কার অসুররাজদের মধ্যে সর্বশক্তিমান ছিলেন রাবণ, যিনি লঙ্কায় নিজের সাম্রাজ্য ও আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। একদিন তার বোন সূর্পনখার চোখ পড়ল লক্ষ্মণের উপর। লক্ষ্মণের উজ্জ্বল কান্তির প্রতি সে প্রচন্ড আকৃষ্ট হলো। মুগ্ধ সূর্পনখা তাই লক্ষ্মণকে বিবাহ করার কামনায় এক সুন্দর রমনীর বেশ ধারণ করে লক্ষ্মণকে আকর্ষণ করতে চাইল। বিচক্ষণ লক্ষ্মণ সূর্পণখাকে বললেন যে তিনি কেবলই শ্রী রামচন্দ্রের দাস হয়ে তাঁর আজ্ঞা পালন করেন। এমনটা শুনে সূর্পনখা এবার শ্রী রামচন্দ্রকেই বিবাহ করার কথা ভাবলো এবং যথারীতি ব্যর্থ হলো। রুষ্ট, ক্রুদ্ধ সূর্পনখা তাই সীতাকে আক্রমণ করতে গেল যাতে সে তার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে শ্রীরামচন্দ্রের নির্দেশেই লক্ষ্মণ সূর্পনখার নাক ও কান কেটে তাকে উচিত শিক্ষা দিলেন। খর ও দুষণ , ওই জঙ্গলেই উপস্থিত এই দুই অসুর ভাইয়ের কাছে প্রতিশোধের আর্জি নিয়ে আর্তনাদ করতে করতে সূর্পনখা হাজির হল। এরপর তারা চৌদ্দ হাজার দৈত্যের এক বিশাল দল নিয়ে আক্রমণ করল। শ্রী রামচন্দ্রের নির্দেশে লক্ষ্মণ মাতা সীতাকে একটি সুরক্ষিত গুহায় সরিয়ে নিয়ে গেলেন। শ্রী রামচন্দ্র একাই অনায়াসে সমস্ত অসুরদের পরাজিত করলেন।
এই প্রসঙ্গে শ্রী রামচন্দ্রের প্রতি লক্ষ্মণের পূর্ণ শরণাগতির দৃষ্টান্তটি শিশুদের কাছে তুলে ধরতে হবে। কুটির এর জন্য উপযুক্ত স্থান বাছাই পর্ব , বা সূর্পণখা কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার ঘটনা , কিংবা শ্রী রামচন্দ্রের মহিমায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে চৌদ্দ হাজার দৈত্যের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে বিরত থাকা, সমস্ত ক্ষেত্রেই লক্ষণ একনিষ্ঠভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে শ্রী রামচন্দ্রের নির্দেশ পালন করে গেছেন। প্রেমময় ভগবানের সন্তান হিসেবে আমাদের ও কর্তব্য তাঁর শিক্ষায় নিজেদের শিক্ষিত করে নিঃসংকোচে তাঁর নির্দেশগুলি জীবনে মেনে চলা।
ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবা বলেন,
Follow the Master
প্রভু কে অনুসরণ করো;
Face the devil
দুষ্টের সম্মুখীন হও;
Fight till the end
শেষ অবধি সংগ্রাম করো;
Finish the game
খেলাটি সম্পন্ন করো।