শবরীর মোক্ষ লাভ
রাম এবং লক্ষ্মণ দক্ষিণ দিকে যাত্রা করলেন। অচিরেই তাদের দেখা হল ভক্তিমতী বৃদ্ধা শবরীর সঙ্গে। তিনি তাঁর গুরু মাতঙ্গের কথা মত রামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শবরী বললেন, “হে রাম, হে প্রভু, আজ আমার গুরুর ইচ্ছা পূর্ণ হল। কয়েক হাতের মধ্যেই আমার কুটীর। দয়া করে সেখানে পদার্পণ করুন। শবরী রামকে প্রণাম করলেন। তার দুর্বল শরীরে এত শক্তির সঞ্চার হল যে তিনি নদী থেকে ঠান্ডা পানীয় জল নিয়ে এলেন। রামের জন্য ফলমূল নিয়ে এলেন। প্রতিটি ফলের স্বাদ নিজেই পরখ করে দেখে তবেই রাম কে নিবেদন করলেন, যাতে তাঁকে শ্রেষ্ঠ ফলটি নিবেদন করা যায়।শবরীর ভক্তি ও আন্তরিকতায় রাম অত্যন্ত প্রীত হলেন। তিনি বললেন, “মা, আমি শুধু ভক্তিতেই সন্তুষ্ট। আমি ভক্তি রসের মাধুর্য্য উপভোগ করতে ভালোবাসি।’’
গুরুরা শিশুদের বলবেন, যখন আমরা ভক্তিভরে প্রার্থনা করি এবং প্রেমের সঙ্গে কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করি তখন ঈশ্বর তার নিজের গৃহে (অর্থাৎ তাদের হৃদয়ে) দর্শন দেন।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ- প্রার্থনা যেন পবিত্র এবং প্রেমময় হৃদয় হতে নিঃসৃত হয়।
প্রেমহীন কর্তব্য নিন্দনীয়, প্রেমযুক্ত কর্তব্য বাঞ্ছনীয়, কর্তব্যহীন প্রেম হল ঐশ্বরিক।
[গুরুরা শবরীর গল্প বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রামের প্রতি অপরিসীম ভক্তির কথা বলবেন। গুরুদের আরো বিশদভাবে জানবার জন্য প্রশান্তি রিপোর্টার; শবরীর সাধনা থেকে শিক্ষা, বুধবার ১৮ই জুলাই, ২০১২ হতে কিছু অংশ এখানে দেওয়া হল।
রামের চিন্তা ছাড়া শবরীর মনে আর কোন চিন্তা ছিল না। রামের দর্শন স্পর্শন এবং সম্ভাষণ লাভের বাসনা ছাড়া আর কোন বাসনাও তার মনে ছিল না। রামরসে (রাম তত্ত্ব) তাঁর হৃদয় পরিপূর্ণ ছিল। আর কোন আধ্যাত্মিক সাধনা তিনি করেননি। রাম আসবেন বলে তিনি সর্বদা তার কুটীরকে তৈরি রাখতেন। উপর থেকে ঝুলে থাকা লতা-গুল্ম পরিষ্কার করতেন, যাতে গ্রামের চুল সেগুলিতে আটকে না যায়। পথের ওপর পড়ে থাকা মাটির ঢেলা গুঁড়ো করে পথ মসৃণ করে রাখতেন যাতে সীতা মায়ের কোমল চরণ আঘাত প্রাপ্ত না হয়। প্রতিদিন বনের গাছ থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে রাখতেন, যাতে রাম এলে তাকে নিবেদন করতে পারেন। প্রতিটি ফল নিজে আস্বাদন করে রাখতেন, যাতে কোন টক বা তেঁতো বা বিস্বাদ ফল রামকে নিবেদন না করা হয়। জঙ্গলের পথের ধারে পাথর ঘষে ঘষে মসৃণ করে রাখতেন যাতে পথশ্রান্ত রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ সেখানে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। এইভাবে তাঁর হৃদয়, রামের হৃদয়ের সঙ্গে একীভূত হয়। তোমরাও শবরীর মত সাধনা করে রামের কৃপা অর্জন করতে পারো, যদি তুমি দরিদ্র মানুষের মধ্যে অধিষ্ঠিত রামের সেবা করো।]