হাতীর গল্প
এক ছিল হাতী; সে খুব শক্তিশালী। তার দাঁত ছিল খুবই শক্ত ও দীর্ঘ। একজন খুব ভালো শিক্ষকের কাছে সে শিক্ষা লাভ করেছিল। সেই শিক্ষক তাকে নিয়ে এমন দেশে এলো, যেখানে সবাই অন্ধ। দেশে একটি হাতী এসেছে, এই খবর দূর দূরান্তে পৌঁছে গেলো। সুতরাং সেই অন্ধের দেশের সব জ্ঞানী গুণী লোক, সব শিক্ষকেরা হাতীটি কেমন, পরীক্ষা করতে সেই হাতীর কাছে পৌঁছলেন।
তারপর হাতীটি যখন চলে গেলো, তখন তারা সভা করে পশুটির বিষয়ে আলোচনা করতে লাগলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন যে হাতী এক বিশাল মোটা সাপের মতন; তাঁরা হাতীর শুঁড়টি স্পর্শ করেছিলেন ও অনুভব করেছিলেন। আরেক দল বললেন যে, হাতি একটি মাঝারি আকারের সাপের মতন। তাঁরা হাতীর লেজটি ছুঁয়েছিলেন। আবার কিছু কিছু লোক বললেন যে,হাতী একটি উঁচু স্তম্ভের মতন। অন্য কেউ বললেন হাতী বিশাল ও স্থূলকায়। ঠিক একটি বৃহদাকার পিপের মতন। আবার কেউ বললেন যে হাতী মসৃণ, কঠিন ও তার শেষ ভাগ ছুঁচোলো। কোনো অন্ধ ব্যক্তি হাতীর একটি পাকে অনুভব করেছিলেন, কেউ তার শরীরে পৌঁছেছিলেন আবার কেউ তাঁর দাঁত স্পর্শ করেছিলেন।
শেষে মতবিরোধ থেকে তারা একে ওপরের প্রতি অপমানজনক ও কটু বাক্য প্রয়োগ করতে লাগলেন। নিজেদের দিক থেকে ঐ অন্ধব্যক্তিরা সকলেই সৎ ছিলেন। হাতীর শিক্ষক জানতেন যে প্রত্যেকেই যা বলছেন তা সত্য। তাঁদের ভুল ছিল এটাই যে তাঁরা নিজেদের জানাটাকেই সম্পূর্ণ সত্য বলে ধরে নিয়েছিলেন।
ঠিক তেমনই বিভিন্ন ধৰ্ম সম্প্রদায়ের লোকেরা, ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের লোকেরা যে যেমন বুঝেছে সেইভাবে ঈশ্বরের বর্ণনা দেয়। আসল কথা হলো এই যে সকল ধৰ্ম বা বিশ্বাসই আমাদের ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে দেয়। শুধু যে পথের কথা তারা বলে, সেই পথটাই ভিন্ন হয়।
সকল ধৰ্ম, সকল মতই এক সর্বাঙ্গীন বিশ্বাসের ও শৃঙ্খলার বিভিন্ন দিক বা পর্যায়। এ হলো সাত অন্ধের হাতী দর্শনের ও তার নিজস্ব বর্ণনা দেওয়ার কাহিনীর মতন। কাহিনীটির একটি গভীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে, আত্মা এক, কিন্তু প্রত্যেকে তার একটি অংশ প্রত্যক্ষ করে এবং ভিন্ন,ভিন্ন মত পোষণ করে। প্রকৃত সত্য কিন্তু সবকটি দিকের সম্মিলিত রূপ।
[শ্রী সত্য সাই বাহিনী, ৬ষ্ঠ খন্ড ৪৪ অধ্যায়।]