মানব সেবাই মাধব সেবা
মার্টিন নামে এক মুচি ছিল। সে খুব ধার্মিক ছিল। সে রাতে শুতে যাবার আগে বাইবেল থেকে কোনো এক অংশ পড়ত এবং বাইবেলটি বুকে নিয়ে সেই অংশটি চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ত।
একদিন সে পড়ল, যীশুখ্রীষ্ট বলছেন, “দেখো, আমি তোমার দরজায় এসেছি এবং দরজায় আঘাত করেছি, যদি কেউ আমার কণ্ঠ শুনতে পায় এবং শুনে দরজাটি খোলে, সে আমার কাছেই আসবে এবং আমি তারই সঙ্গে যাব। তারই সঙ্গে আমি থাকব। তাকে নিয়ে গিয়ে আমি আমার সিংহাসনে বসাবো এবং যখন আমি আমার বাবার সঙ্গে তারই সিংহাসনে বসবো তখনও তাকে ডেকে নিয়ে যাব”। এই সুন্দর কথাগুলি পড়ে চিন্তা করতে করতে মার্টিন ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখল যে প্রভু তাকে দর্শন দিয়েছেন, দিয়ে বলছেন যে, মার্টিন, আমি তোমার কাছে কালকে যাব”।
মার্টিন সকালবেলা উঠে মহাউৎসাহে তাঁর পুজো আর সব কাজকর্ম সারল। প্রভুর জন্য খাবার তৈরী করল, চা তৈরী করল। শরীরে, মনে অভ্যর্থনার জন্য তৈরী হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বসে রইল। তখন ভোর হয় নি, আলো ফোটে নি। বরফ পড়ছিল, সে দেখতে পেল পুরসভার এক বৃদ্ধ ঝাড়ুদার রাস্তা ঝাঁট দিচ্ছে। তার মনে হল “হায়! কি ভাগ্য! ঘরের মধ্যে যারা লেপের তলায় সুন্দর আরামে ঘুমোচ্ছে, তাদেরই যাতে কোনো কষ্ট না হয়, তা দেখবার জন্য একজন বৃদ্ধ লোক বাইরে কাজ করতে করতে শীতে জমে যাচ্ছে”। মার্টিনের মনে লোকটির জন্য খুব সহানুভূতি হল। সে তাকে ডেকে নিয়ে এল। আগুনের পাশে বসালো এবং তৈরী করা চায়ের থেকে যেটি তার নিজের জন্য তৈরী করেছিল, সেই নিজের ভাগের চা-টি লোকটিকে খেতে দিল।
লোকটি গরম চা খেয়ে তৃপ্ত হয়ে মার্টিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল। মার্টিন অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরে সে দেখতে পেল এক বৃদ্ধা শীতে কাঁপতে কাঁপতে তার দরজার কাছে এসে বসে পড়ল। দেখে মনে হল সে অনেকদিন কিছুই খায়নি। বৃদ্ধা আর নড়তেও পারছিল না। মাটিন বৃদ্ধাকে ডাকল। তাকে আগুনের পাশে বসালো। নিজের গায়ের কম্বলটি খুলে তার গায়ে জড়িয়ে দিল। তাঁর তৈরী করা খাবারের মধ্যে নিজের জন্য যেটুকু রেখেছিল তাকে খেতে দিল। বৃদ্ধা সেই খাবার খেয়ে পরমতৃপ্ত হয়ে মার্টিনকে আশীর্বাদ করতে করতে চলে গেল।
মার্টিন অপেক্ষা করছে। দিন চলে যাচ্ছে, এমন সময় দেখলেন এক দুখিনী মা তার ছেলেকে কোলে নিয়ে যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যায় মা নিজেও খেতে পায়নি, খেতে পায়নি তার সন্তান। মার্টিনের মনে বড় দুঃখ হল, বড় সহানুভূতি হল। সে মেয়েটিকে ডাকল। ডেকে ভগবানের জন্য যে খাবারটি তৈরী করেছিল সে খাবারটি মাকে দিল, প্রভুর জন্য যে দুধটুকু সে রেখেছিল সেই দুধটুকু বাচ্চাটিকে দিল। খুঁজে খুঁজে তার স্ত্রীর রেখে যাওয়া যা জামাকাপড় ছিল সেগুলি এই স্ত্রীলোকটিকে ও তার সন্তানটিকে দিল। তারা সকৃতজ্ঞচিত্তে তাকিয়ে তাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল। এসব হতে হতে দিনও শেষ হয়ে এল। সূর্যাস্ত যাচ্ছে। মার্টিন ভাবল। দিন তো শেষ হয়ে এল। প্রভু আমায় আসবেন বলেছিলেন, এলেন না তো। তার মনে একটি বিচিত্র অনুভব, একটু হতাশা, একটু দুঃখ হল, “প্রভু কি এসেছিলেন? আমি কি দেখতে পাইনি? তখনই তার মনে হল যদি প্রভু এখনও আসেন, আর তো কোনো খাবার নেই, আর তো কোনো দুধ নেই। আমি প্রভুকে কি খেতে দেব? আমি কি করব? তার মনে বেদনা হতে লাগল যে প্রভুকে দেখার মতন। তো আমার কাছে কিছু নেই”। দিনও শেষ হয়ে আসছে। অন্ধকারও হয়ে আসছে। আর মার্টিনের মনেও যেন অন্ধকার নেমে আসছে। তার ঘর সত্যিই অন্ধকার হয়ে গেল।
হঠাৎ মার্টিন দেখল যেন তার ঘরে আলো ফুটে উঠছে।
সে অত্যন্ত অবাক হয়ে গেল, কেননা সে তো কোনো আলো জ্বালায়নি। সেই আলো আর একটু উজ্জ্বল হল। সেই উজ্জ্বল আলোয় দেখতে পেল সেই বৃদ্ধ ঝাড়ুদার কাঁপতে কাঁপতে তার সামনে দিয়ে চলে গেল। যেতে যেতে তার দিকে তাকিয়ে হেসে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল। একটু পরেই এল সেই মা আর তার ক্ষুধার্ত সন্তান। তারাও যাবার আগে মার্টিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে গেল। এবং তারপর? তারপর এলেন স্বয়ং প্রভু। তিনি বারবার বললেন, “আমি, আমি এরা আমি”। তিনি মার্টিনকে আশীর্বাদ করলেন, তাকে আলিঙ্গন করলেন এবং অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
প্রশ্নঃ
- মার্টিন কি ধরণের মানুষ ছিল?
- ঈশ্বর তাকে ঘুমের মধ্যে কি বললেন?
- মার্টিন ঝাড়ুদারকে কিভাবে সাহায্য করলো?
- তারপর কার সঙ্গে মার্টিনের দেখা হলো?
- এই কাহিনী হতে কি শিক্ষা পেলে?