পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।
(৪/৮)
সৎ লোকেদের রক্ষা করার জন্য, দুষ্ট লোকেদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্মের পুনঃ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ বা আবির্ভূত হই।
যুগে যুগে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের জন্য ঈশ্বর ধরাধামে অবতীর্ণ হন। যেমন প্রহ্লাদ কে রক্ষা করার জন্য তিনি নরসিংহ রূপে অবতীর্ণ হয়ে হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন। দ্বাপর যুগে কৃষ্ণ রূপে এসে কংস এবং কৌরবদের ধ্বংস করেন। ত্রেতা যুগে রাম অবতার হয়ে রাবণকে বধ করেন।
বর্তমানে কলিযুগে, সাই অবতার হয়ে ঈশ্বর ধরাধামে এসেছেন। সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে শিক্ষা দিতে এবং সংশোধন করতে। যদি কোথাও কোনো ছোটখাটো গোলমাল বাঁধে, একজন কনস্টেবলই পারে সেটাকে সামলে দিতে। যখন গোলমাল একটু বেশি হয় তখন একজন সাব ইন্সপেক্টর কে পাঠানো হয়। যদি গোলমাল বেশ বড় আকার ধারণ করে এবং মারামারি পর্যায়ে চলে যায় তাহলে পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট নিজেই পরিস্থিতি সামলাতে চলে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে মানবিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের পথে, মানব জাতি যখন নৈতিকভাবে বিপন্ন, তখন ঈশ্বর নিজেই পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট এর মত তাঁর সৎ মানুষ এবং সাধকদের বাহিনী নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
ঈশ্বর নিজে কেন অবতীর্ণ হন?
কেউ প্রশ্ন করতে পারে – “ঈশ্বর তো অনেক দেবদেবী বা দেবদূতের মধ্যে কারোকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়ে পাঠাতে পারেন, তাহলে তিনি স্বয়ং কেন বারবার অবতীর্ণ হন?”
আকবর ও তানসেন
মুঘল সম্রাট আকবর খুবই ধর্মভীরু ছিলেন। হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের প্রতি তার শ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু একদিন সভাসদদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি হিন্দু ধর্মের অবতারবাদ সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন – “ঈশ্বর তো পৃথিবী থেকে অধর্ম দূর করতে কোন মহাপুরুষকে পাঠালেই পারেন। তাঁর নিজের শরীর ধারণ করার প্রয়োজন কি?” ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর বিজ্ঞ হিন্দু সভাসদরা উপযুক্ত জবাব দিতে পারলেন না। তানসেন তাঁর কাছ থেকে এক সপ্তাহের সময়ের চেয়ে নিলেন।
কয়েকদিন পর সম্রাট প্রমোদ ভ্রমণে বের হলেন। তিনি নদী পথে যাত্রা করলেন। তার সঙ্গে ছিলেন তানসেন প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং তাঁর পরিবারবর্গ। তানসেন সঙ্গে করে লুকিয়ে একটি পুতুল নিলেন। তার মাপ এবং পোশাক-আশাক একেবারে আকবরের ছোট ছেলেটির মতো। কিছুক্ষণ পর তানসেন সেই পুতুলটিকে জলে ফেলে দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন – “রাজপুত্র জলে পড়ে গেছে”। চীৎকার শোনামাত্র আকবর নিজে জলে ঝাঁপ দিলেন।
সম্রাটকে জল থেকে তুলে এনে তানসেন তাঁকে আশ্বস্ত করলেন – “সম্রাট, এটি আসলে একটি পুতুল কিন্তু আপনি এত লোক লস্কর থাকতে নিজে কেন জলে ঝাঁপ দিলেন?
বুদ্ধিমান রাজা তানসেনের যুক্তি বুঝতে পারলেন। প্রকৃতপক্ষে ভগবান তার সৃষ্টিকে এত ভালবাসেন যে তারা বিপদে পড়লে তিনি নিজেই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে তাদের দুঃখমোচন করেন।