ভাষা
পৃথিবীতে ভাষার দিক দিয়ে সমৃদ্ধ দেশসমূহের মধ্যে ভারতবর্ষ’ অন্যতম দেশ। ভারত সরকার ১৪টি ভারতীয় ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যেগুলির প্রত্যেকেটিরই নিজস্ব ইতিহাস আছে। সংস্কৃত ভাষ্য, যা গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার চেয়েও প্রাচীনতর, তা অধিকাংশ ভারতীয় ভাষার পূর্বপুরুষ। ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলি লিখিত হয়েছিল সংস্কৃতে এবং এই ভাষা থেকেই উদ্ভুত হয়েছে বাংলা, হিন্দী, গুজরাটি ও মারাঠী ভাষা। এইগুলিকে আর্য’ভাষা নামে অভিহিত করা যায়। তামিল, কানাড়া, তেলেগু এবং মালয়ালম দক্ষিণ দেশগুলির ভাষা এবং এদের দ্রাবিড় ভাষ্য বলা হয়।
তামিল পণ্ডিতবর্গ দাবি করেন যে তাঁদের ভাষা সংস্কৃতের মতোই প্রাচীন। যদিও দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা বা দ্রাবিড় ভাষা সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত নয়, তবুও এগুলির মধ্যে প্রচুর সংস্কৃতের প্রভাব দেখ যায়।
সকল ভারতীয় ভাষাই সমগুণ সম্পন্ন এবং লক্ষ লক্ষ লোক এই সকল ভাষায় কথা বলে। নিজের ভাষ্য সম্বন্ধে গোঁড়ামী থাকা বিপজ্জনক। নিজের সম্বন্ধে গোঁড়ামীর ফলে সৃষ্টি হয় ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের, যার শেষ পরিণাম ভাষা সম্বন্ধীয় প্রতিদ্বন্বিতা। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা রূপ নেয় বিশৃঙ্খলা, বিরোধ এবং অনৈক্যের। আমাদের শিশুদের যতগুলি সম্ভব ভারতীয় ভাষা শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। একাধিক ভারতীয় ভাষার জ্ঞান যে শুধুমাত্র মনকে উন্নত করে তা নয়, বর্তমানে দেশের বহু, জাতি ও সম্প্রদায়গত পরিস্থিতিতে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক উপযোগিতাও বাড়িয়ে তোলে। ভাষাগত বিভিন্নতার জন্য ক্রুদ্ধ হওয়া কোনোমতেই উচিত নয়। এগুলি আমাদের মূল্যবান উত্তরাধিকার এবং এগুলির জন্য আমাদের গর্ববোধ করা উচিত। এইজন্য বাবা বলেছেন, ‘ভাষা একটিই আছে- তা হল হৃদয়ের ভাষা।’ একজন সহৃদয় ব্যক্তি যে-কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।