সংগীত
ভারতীয়দের সংগীতধর্মী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রাচীনতম শাস্ত্র ঋগবেদের উৎস হল গঙ্গাতীরে উপবিষ্ট ঋষিদের গীত স্তোত্র সমষ্টির সংকলন। সামবেদ সর্বতোভাবে সংগীতধর্মী। ইতিহাস আমাদের জানায় যে, প্রাচীন ভারত চারণ-কবি এবং গায়ক সাধুসন্তদের সংগীতে মুখরিত থাকত। প্রাচীন ভারতে সংগীত একটি অতি অগ্রসর চারুকলায় উন্নীত হয়েছিল। এই শাস্ত্র সম্বন্ধে সবচেয়ে মহৎ গবেষণামূলক গ্রন্থ আমরা যা পেয়েছি তা হল ভরত মুনি-কৃত নাট্যপাত্র; যার মধ্যে ভারতীর সংগীত, নৃত্য ও অভিনয় সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক উপায়ে অতি সতর্কতার সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রাচীন ভারতে অনেক বিস্ময়কর সংগীতশৈলী ও নানাবিধ যন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল। ভারতীয়দের উপর সংগীতের প্রভাব সর্বজনবিদিত। এমন-কি, ভারতের নিরক্ষর অধিবাসীদেরও নিজস্ব মনোরম লোকসংগীত আছে। সুরের গুঞ্জন সেইজন্যই ভারতীয়দের স্বভাবগত। নৌকার হালের মাঝি, শস্যক্ষেত্রে কর্ম’রতা কৃষক রমণী, বৃহৎ কড়িকাঠ উত্তোলনরত জাহাজ ঘাটার কর্মী’রা, মেষচারণরত মেষপালকেরা, পথের ধারে পাথর ভাঙায় নিযুক্ত শ্রমিকেরা, মালবহনরত ঠেলাগাড়ি চালকেরা এবং পুজার্চনায় রত পুরোহিত- বর্গ’- সবাই তাদের কাজের সঙ্গে সঙ্গে গানও গায়।
ভারতীয় সংগীতের দুটি প্রধান ধারা আছে-উত্তর ভারতের হিন্দুস্থানী পদ্ধতি এবং দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক পদ্ধতি। এই দুই পদ্ধতির মধ্যে কয়েকটি ব্যাপারে সাদৃশ্য দেখা গেলেও, দুই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রাদি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। কর্ণাটক সংগীতশৈলীকে দুই শ্রেণীর মধ্যে বিশুদ্ধতর বলা হয়, কিন্তু হিন্দুস্থানী সংগীত বৈচিত্র্যে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। হিন্দুস্থানী বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে সেতার, সরোদ, সানাই ও তবলা বাদ্যযন্ত্র হিসাবে খুবই পরিচিত; কর্ণাটক সংগীতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্র হিসাবে বীণা, বেহালা ও মৃদঙ্গ ব্যবহৃত হয়। উভয় শ্রেণীর সংগীত-শৈলীরই নিজস্ব দীর্ঘ ইতিহাস আছে এবং উভয় শ্রেণীর সংগীতেরই অনেক উচ্চপর্যায়ের ব্যাখ্যাকার আছেন। দুই শ্রেণীর সংগীতই মূলত ধর্ম’-ভিত্তিক।