অহমাত্মা – বিশদ পাঠ
অহমাত্মা – বিশদ পাঠ
অহমাত্মা গুড়াকেশ সর্বভূতাশয়স্থিতঃ। অহমাদিশ্চ মধ্যঞ্চ ভূতানামান্ত এব চ।। (chap.১০, verse ২০)
হে জিতনিদ্র অর্জুন আমি সর্বজীবের হৃদয়ের অবস্থিত আত্মা। আমিই সকল জীবের আদি, আমিই মধ্য আবার আমিই অন্ত।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “আমি সেই আত্মা যা সর্বজীবের হৃদয়ের অধিষ্ঠান করে। হে অর্জুন, আমিই সকল জীবের সৃষ্টি, স্থিতি এবং লয়ের এর জন্য দায়ী। সকল জীব আমা হতে উৎপন্ন হয়, আমার দ্বারা পালিত হয়, আবার আমাতে লয় হয়”। এখানে হৃদয় বলতে হৃদপিণ্ডকে বোঝায় না। আমাদের অন্তরস্থ দিব্যত্বকে বোঝায়। কৃষ্ণ অর্জুনকে গুড়াকেশ বলে সম্বোধন করেছেন যার অর্থ যিনি নিদ্রাকে জয় করেছেন। এই নিদ্রা হল অজ্ঞানতা। অর্জুন অজ্ঞতা কে জয় করেছেন। ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করেছেন।
বাবা ব্যাখ্যা করেছেন, “সকল জীবের অন্তরাত্মা হলেন ঈশ্বর। পঞ্চভূত অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ এবং ব্যোম ঈশ্বরের প্রকাশ। আণুবীক্ষণিক ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কণা থেকে বৃহদাকার বস্তুসমূহ সবই তিনি। তিনি ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। সকল নামই তাঁর নাম। তিনি সকল কিছুর মাতা এবং পিতা। সকল কিছুর উৎস তিনি। সকল কিছুর আশ্রয় তিনি আবার সকল কিছুর লয় হয় তারই মধ্যে। ঈশ্বর আমাদের মধ্যে আত্মা রূপে আছেন বলেই আমাদের চোখ দেখতে পায়, কান শুনতে পায়, নাক গন্ধ পায়, জিহ্বা আস্বাদন করতে পারে, ত্বক স্পর্শ অনুভব করে। তিনি আমাদের হাত এবং পাকে সচল রাখেন। আমাদের বাক্শক্তি, চিন্তাশক্তি, বোধশক্তি সবই তাঁর দান। তিনি আমাদের শ্বাসযন্ত্র, পাচনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, সংবহনতন্ত্র, রেচনতন্ত্র প্রভৃতি অপরিহার্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলি সচল রাখেন”।
ঈশ্বরের সত্যিকার (প্রকৃত) ঠিকানা কি?
বাবা বলেন, মানুষের তৈরি মন্দিরে ঈশ্বর বসবাস করেন না। ঈশ্বর তাঁর স্বহস্তে নির্মিত দেবালয়ে বসবাস করেন। তিনি তার সৃষ্টি যথা, মানুষ, জীবজন্তু, গাছপালা, পাখি প্রভৃতি সকলের মধ্যে বাস করেন”।
শিরডীনিবাসী শ্রীমতী তার্খদের কাহিনী থেকে আমরা ঈশ্বরের সর্বব্যাপীতার প্রমাণ পাই। একদিন দুপুরে খাবার সময় একটি ক্ষুধার্ত কুকুর এসে ডাকাডাকি করতে লাগলো। শ্রীমতি তার্খদ তাকে একটা রুটি দিলেন। কুকুরটি খুব তৃপ্তি করে রুটিটা খেয়ে ফেলল। বিকেলবেলা তিনি দ্বারকামায়ীতে বাবার দর্শন গেলেন। বাবা তাকে বললেন, “আজ তুমি আমাকে খুব ভালো খাবার খাইয়েছ। আমার প্রাণটা বড় তৃপ্তি পেয়েছে। সব সময় এমন কাজ করবে তোমার ভালো হবে। আমার প্রতি এইভাবে দয়া দেখিও। আগে ক্ষুধার্তকে খাবার দিয়ে তারপর নিজে খাবে।
শ্রীমতী তার্খদ বাবার কথা বুঝতে পারলেন না। বাবা তখন বুঝিয়ে বললেন, আজ তুমি যে কুকুরটাকে খেতে দিলে, সে আর আমি তো অভিন্ন। সকল সৃষ্টি তো আসলে আমি। আমি বিভিন্ন রূপে চারিদিকে ঘুরে বেড়াই। যে সর্বজীবে আমাকে দর্শন করে তাকেই আমি ভালোবাসি সুতরাং দ্বৈতবোধ ত্যাগ করে আজকে যেমন করেছো, তেমনভাবে আমার সেবা ক’রো”।