অঙ্গুলিমাল
অঙ্গুলিমাল
তোমরা রত্নাকরের কথা শুনেছো। আজকে তোমাদের রত্নাকরের মতোই আর একজনের কথা শোনাবো। শ্রাবস্তী নগরীর কাছেই একটি বন ছিল। এই বনের পর দিয়েই যাত্রীদের যাতায়াত করতে হতো। বনে জীবজন্তুকে তো একটু ভয় পেতোই, কিন্তু তার চেয়ে আরো অনেক বেশী ভয় পেতো একজন ডাকাতকে। সে শুধু পথিকের সব কিছু লুঠ করতো তাই নয়; সে পথিকের আঙ্গুলটি কেটে নিত। আর এই আঙ্গুলগুলো জুড়ে জুড়ে সে একা মালা তৈরী করছিল, যতক্ষণ না তার মনোমত মাপে পৌঁচচ্ছে ততক্ষণ সে আঙ্গুল কাটবে এটিই ছিল তার প্রতিজ্ঞা। আঙ্গুলের মালা পরার জন্য তার নামই হয়ে গেল ‘অঙ্গুলিমাল’ অর্থাৎ আঙ্গুলের মালা। অঙ্গুলিমাল লক্ষ্য করে দেখল যে, তার মালার যতটা মাপ সে ভেবে রেখেছে, তার প্রায় কাছাকাছি সে পৌঁছে গেছে।
এমন সময় একদিন, হঠাৎ একজন গেরুয়া পরা লোক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছেন। অঙ্গুলিমাল বলল, “ওহে দাঁড়াও” বলে তাঁর দিকে ছুটে গেল। অঙ্গুলিমাল ছুটে যাছে কিন্তু গেরুয়া পরা লোকটিকে ধরতে পারছে না। তখন সে আরও জোরে ছুটতে লাগল, আর ভয়ঙ্করভাবে চেঁচাতে লাগল, “আরে দাঁড়াও বলছি। তা না হ’লে আমি তোমায় প্রাণে মেরে ফেলবো।”
অঙ্গুলিমাল হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর সে দেখল যে, সে সন্ন্যাসীর কাছ থেকে খুব বেশী দূরে নয়। তখন বলল, “এতক্ষণ তো দৌড়াচ্ছিলে, এবারে তো ধরা পড়লে।”
সন্ন্যাসী স্নিগ্ধ হেসে বললেন, “না বাবা, আমি কিন্তু দৌড়ইনি, আমি পালাতে চাইনি। আসলে তুমিই আসতে চাইছিলে না।”
সন্ন্যাসীর এই রকম মিষ্টি কথা শুনে অঙ্গুলিমাল একটু থমকে গেল। সে বলল, “যাই হোক, ওসব চালাকি আমার কাছে চলবে না। তোমার কাছে কিই বা আছে, কিন্তু তোমার আঙ্গুলটা আমার কাজে লাগবে, তোমার আঙ্গুলটা আমি নেবো। আর তার সঙ্গে বড় বেশী তুমি আমাকে উপদেশ দিয়েছো তো, তাইজনা আঙ্গুলের সঙ্গে সঙ্গে তোমার প্রাণটাও নেবো।”
সন্ন্যাসী আরও মিষ্টি করে হেসে তার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দিলো। দিয়ে বললেন, “একটা কেন, তুমি আমার সবকটা আঙ্গুল নাও। তুমি আমার প্রাণ নিলে যদি তাতে তোমার শান্তি হয়, তুমি এক্ষুণি তা নাও।
অঙ্গুলিমাল একবারে স্থির হয়ে গেল। দেখল সন্ন্যাসী ভান করছে না। সন্ন্যাসীর মুখের দিকে চোখ তুলে দেখল, স্থির, স্নিগ্ধ আনন্দের হাসি তাঁর মুখে। তাঁর চোখ দুটো যেন মমতায় ভরা। অঙ্গুলিমালের ভেতর কি যেন হলো। সে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো, বসে পড়ে সন্ন্যাসীর পায়ে ধরল। বলল, “আমি জানি না প্রভু আপনি কে, আপনি আমায় বাঁচান। আমি শান্তি পাইনা। আমি ভয়ঙ্কর পথে ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্তু শান্তি পাইনি। আমি আজ থেকে আর মানুষকে কোন কষ্ট দেবো না।”
এই সন্ন্যাসী হচ্ছেন বুদ্ধদেব। বুদ্ধদেব অঙ্গুলিমালকে নিজের আশ্রমে নিয়ে এলেন এবং অঙ্গুলিমালকে অনাথপিন্ডদের হাতে দিলেন তার শিক্ষার জন্য। কয়েকদিন বাদেই শ্রাবন্তীর রাজা বুদ্ধদেবকে প্রণাম করতে এলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর লোকজন রয়েছে। বুদ্ধদেব বললেন যে, “মনে হচ্ছে মহারাজ আপনি কোন অভিযানে বেরিয়েছেন।”
রাজা বললেন, “হ্যাঁ প্রভু, আমি অভিযানে বেরিয়েছি। এই এলাকায় অঙ্গুলিমাল বলে এক ডাকাত মানুষের জীবন একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলছে। তাকে দমন না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না।” বুদ্ধদেব বললেন, “তাকে কি করে দমন করবেন?”
রাজা বললেন, “তাকে দমন করার একটাই উপায়, তাকে হত্যা করা।” বুদ্ধদেব বললেন, “অঙ্গুলিমাল যদি নিজেকে বদলে ফেলে। সে যদি হত্যা করা বন্ধ করে দেয়। সে যদি মানুষের আর ক্ষতি না করে।”
অবিশ্বাসের হাসি হেসে মহারাজ বললেন, “তাহলে প্রভু আমিই তাকে প্রণাম করব। তবে অঙ্গুলিমাল কোনদিন সেসব দিকে যাবে না।”
বুদ্ধদেব তাঁর আঙ্গুল দিয়ে একদিকে নির্দেশ করলেন। বললেন, “দেখ ঐখানে গাছপালার কাছে যে লোকটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেই হচ্ছে ‘অঙ্গুলিমাল’। সে জীবনে আর কখনো মানুষের কোন অপকার করবে না।”
দেখলেন, অঙ্গুলিমালকে। মহারাজ লুটিয়ে পড়লেন “প্রভু আপনিই পারেন শুধু আপনার ভালোবাসা দিয়ে এরকম একজন দানবকে আবার মানুষ করে তুলতে।
প্রশ্নঃ
- ডাকাতটিকে কেন অঙ্গুলিমাল নামে ডাকা হত?
- সে কেন বুদ্ধকে ধরতে পারছিল না?
- অঙ্গুলিমালের মধ্যে কি ভাবে পরিবর্তন এলো?
[উৎসঃ স্টোরিজ ফর চিলড্রেন – ২,প্রকাশক – শ্রী সত্য সাই বুকস অ্যান্ড পাবলিকেশন ট্রাস্ট, প্রশান্তি নিলয়ম্।]