মহান ঘোষণা

Print Friendly, PDF & Email

মহান ঘোষণা

বালক সাইবাবা কোনও বাঁধাধরানিয়মের ভিতর আবদ্ধ হয়ে থাকতে আর চাইছিলেন না। নিজের সম্পর্কে ঘোষণা করতে এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবার সময় এসে গিয়েছিল।

২০শে অক্টোবর, ১৯৪০, সত্য রোজকার মতই স্কুলে যাবার জন্য রওয়ানা হলেন। সত্যের খুবই গুণমুগ্ধ উড়ভকোণ্ডার আবগারী ইন্সপেক্টর, শ্রী অঞ্জনায়েলু ঐদিন সত্যের সঙ্গে স্কুলের গেট পৰ্য্যন্ত গিয়েছিলেন কারণ তিনি সত্যের মাথার চারপাশে এক উজ্জ্বল জ্যোতির্বলয় দেখতে পেয়েছিলেন। রোজকার মতই সত্য সকালের ছাত্র সমাবেশে স্কুলের প্রার্থনা সংগীত গাইবার জন্য মঞ্চের উপর উঠলেন। প্রার্থনার পর সত্য হঠাৎ ঘোষণা করলেন, “আমি তোমাদের নই, এখন হতে আমি হলাম তাদের যাদের আমাকে প্রয়োজন এবং যারা আমায় ডেকে থাকে।” তিনি যা ঘোষণা করেছেন তার তাৎপর্য ঐ সমাবেশ উপলব্ধি করবার আগেই সত্য সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন। তিনি তখন বাড়ীর দিকে হাঁটতে লাগলেন।

বাড়ীর দরজায় দাঁড়িয়ে সত্য তাঁর বইপত্র একপাশে ফেলে রেখে বলে উঠলেন, “আমি আর তোমাদের সত্য নই। আমি হলাম সাই।” একথা শুনে তাঁর বৌদি রান্নাঘর হতে বেরিয়ে এসে তাকিয়ে রইলেন। ছোট বালকের মাথার চারপাশের জ্যোর্তিবলইয়ের উজ্জ্বলতায় তিনি কোনও কিছু দেখতে পারছিলেন না। তিনি তার চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলেন। সত্য তাকে বললেন, “আমি যাচ্ছি। আমি আর তোমাদের নই। মায়া চলে গেছে। আমার ভক্তরা আমায় ডাকছে। আমার কাজ রয়েছে। আমি আর থাকতে পারব না।” বৌদির অনুনয় সত্ত্বেও তিনি বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। একথা শুনে শেষমা তাড়াতাড়ি বাড়ী চলে এলেন। সত্য শুধু বলেছিলেন, “আমায় রোগমুক্ত করবার প্রচেষ্টা তুমি ছেড়ে দাও। আমি সাই। তোমাদের আত্মীয় বলে আমি নিজেকে মনে করতে পারি না।” কথাবার্তা শুনে কি ঘটেছে তা দেখবার জন্য প্রতিবেশী নারায়ণ শাস্ত্রী সেখানে এলেন। তিনি ঐ জ্যোতির্বলয় দেখে সত্যের চরণে প্রণাম করলেন।

কি করা উচিত তা শেষমা বুঝতে পারছিলেন না। বাবা-মা যেহেতু সত্যের ভার তার উপর দিয়েছিলেন তাই তিনি ভাবলেন যে, বাবা-মাকে সব ঘটনা জানানো পর্যন্ত সত্যের তার বাড়ীতেই থাকা উচিত।

কিন্তু সত্য পুনরায় ঐ বাড়ীতে ঢুকতে চাইলেন না। তিনি শ্রী আঞ্জনায়েলুর বাড়ীর বাগানে ঢুকে গাছের নীচে একটা পাথরের উপর বসে পড়লেন। ফুল এবং ফল নিয়ে লোকেরা চারধার হতে আসতে লাগল। তখন বাবা প্রথম যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা হল:

“মানস ভজরে গুরুচরণম্ দুস্তর ভব সাগর তরণম্।”

অর্থাৎ, গুরুর চরণের উপর তোমার মনকে নিবদ্ধ কর। গুরুর চরণই তোমায় কঠিন জীবন-সাগর পার করে নিয়ে যাবে।

লোকেরা এই লাইনগুলো আবার সমবেত কণ্ঠে গেয়েছিল এবং শত শত কণ্ঠের শব্দে ঐ কুঞ্জ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

সত্য আর স্কুলে যাবেন না একথা জেনে এবং সত্য তাদের নাগালের অনেক বাইরে জেনে তাঁর সহপাঠীরা কাঁদতে লাগল।

ঐ বাগানে তিনদিন কেটে গেল, – ওগুলো ছিল আরাধনার দিন। এক ফটোগ্রাফার সেখানে এল এবং বাবার ঠিক সামনের একটি বিরাট পাথরকে সরানোর অনুমতি চাইল যাতে খুবই ভালভাবে বাবার ছবি তোলা যায়। তার অনুরোধে বাবা কান দিলেন না। ছবি তোলা হল এবং ছবিতে দেখা গেল যে পাথরটির জায়গায় শিরডির সাইবাবার প্রতিকৃতি রয়েছে।

এক সন্ধ্যায় যখন ভজন চলছিল তখন হঠাৎ বাবা বলে উঠলেন, “মায়া এসেছে।” তিনি পূট্টাপর্তী হতে সদ্য আসা ঈশ্বরাম্মার প্রতি ইংগিত করলেন। বাবা মা যখন তাঁকে বাড়ী যাবার জন্য বললেন তখন তিনি বলেছিলেন, “কে কার?” তিনি বলে চলেছিলেন, “সব কিছুই মায়া…মিথ্যা”।

অবশেষে তিনি তাঁর মাকে কিছু খাবার দেবার জন্য বলেছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি পদ সাজিয়ে তাঁর সামনে দিয়েছিলেন। বাবা সব কয়টিকে একত্রে মিশিয়ে কয়েকটি গোলা বা বল তৈরী করলেন। ঐ বলগুলোর ভিতর তিনটি বলকে মাতা তাঁর হাতে তুলে দিলেন। সেই বলগুলো খেয়ে তিনি বলেছিলেন, “এখন মায়া অদৃশ্য হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তার আর কোনও কারণ নেই।”

সত্যের কাছে ঈশ্বরাম্মা একটি বর চাইলেন। “তুমি কথা দাও যে তুমি পুট্টাপর্তীতেই থাকবে। আমাদের কাছ হতে দূরে চলে যাবে না”, তিনি অনুনয় করলেন। তোমার ভক্তদের আমরা স্বাগত জানাব এবং দেখাশোনা করব।” এরপর এল সত্যের যুগান্তকারী উত্তর, “পুট্টাপর্তীকে আমি আমার ক্ষেত্ররূপে নির্বাচন করেছি। এই বর শুধুমাত্র তোমাকেই দিচ্ছি না, পুরো গ্রাম এবং সমগ্র বিশ্বকেই প্রদান করছি। বৃহস্পতিবার আমি ঐখানে আসবো”।

আনন্দে ঈশ্বরাম্মা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন, ভাল খবরটি তাঁর মুখমণ্ডলকে উজ্জ্বল করে চারপাশে ছড়িয়ে গেল। এখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে সারা জীবন ধরে তিনি তাঁর ছেলের মহিমার সাক্ষী হয়ে থাকবেন, এবং তিনি, তাঁর কন্যারা এবং সত্যের উপাসিকা সুব্বাস্মা সত্যের যত্ন নিতে পারবেন, অন্ততঃ তাঁর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবেন!

সত্য পুট্টাপর্তী চলে যাবেন এবং সম্ভবতঃ আর ফিরবেন না, এই খবর বিদ্যুতের মত ছড়িয়ে পড়ল। জীবনের সকল ক্ষেত্রের লোকেরা ঐ বাগানে এসে উপস্থিত হল। সামনে বসা তাঁর শিক্ষকদের হাতে তিনি বিভূতি দিলেন। আজকের দিনে বাবা বিভূতিকে তাঁর ভিজিটিং কার্ড বলে থাকেন। বিভূতি হল তাঁর প্রেমময় করুণার লক্ষণ এবং তা এ জগতের সব কিছুই যে একদিন ছাই হয়ে যাবে একথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

যে দিন সত্য উড়ভকোন্ডা হতে রওয়ানা হলেন সেদিন শহরবাসীরা একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিলেন। সুন্দরভাবে সাজানো বলদদের টানা সুসজ্জিত গাড়ির উপর সত্যকে বসানো হল। Announcement 7সত্যের বড় ভাই শেষমা রাজু এবং কনিষ্ঠ ভাই জানকীরাম সামনে ছিলেন। ঈশ্বরাম্মা, তাঁর কন্যারা এবং পুত্রবধূ শোভাযাত্রার শত শত মহিলাদের ভিতর ছিলেন। ড্রাম বাদ্যের দল, ব্যাগপাইপ বাদ্যের দল, ক্ল্যারিয়োনেট এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র চলমান ভক্তদের সামনে ছিল।

শহরের সীমান্তে পৌঁছে লোকেদের ফিরে যেতে বিনম্রভাবে বলা হল কিন্তু কোন কারোরই প্রিয় সত্যকে ছেড়ে অন্ধকারময় জগতে ফিরে যাবার মত মন ছিল না। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা সত্যকে অনুসরণ করে পুট্টাপর্তী যাবে এবং অন্ততঃ এক সপ্তাহ সেখানে থাকবে।

ঈশ্বরাম্মা সাইবাবাকে পুট্টাপর্তীতে নিয়ে আসছেন। তিনি আর উড়ভকোন্ডা উচ্চ-বিদ্যালয়ের ছাত্র সত্যনারায়ণ রাজু নন। তিনি এখন সাইবাবা, সত্য বোধক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।