কাস্টমস এবং অনুষ্ঠান
ধর্মের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত প্রথা ও অনুষ্ঠানাদি
নবজাতকের নামকরণ হিন্দু, মুসলমান ও খ্রীষ্টানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। ভারতের কয়েকটি স্থানের হিন্দু অধিবাসীরা শিশুর তিনটি নামকরণ করেন। প্রথমটি শিশুর জন্মকালীন নক্ষত্র (অথবা কখনো পরিবারের পদবী) অনুসারে, দ্বিতীয়টি পরিবারস্থ কোনো বয়োজেষ্ঠ ব্যক্তির সম্মানার্থে (অথবা পিতার নামে) এবং তৃতীয়টি যে নাম দ্বারা শিশুটি সম্বোধিত হবে। ভারতীয় খ্রীস্টান সম্প্রদায় তাঁদের পাশ্চাত্যবাসী সম্প্রদায়ের অনুসারে শিশুকে পবিত্র বারিতে অভিসিঞ্চিত করে নামকরণের জন্য গীর্জায় ধর্ম’- যাজকের কাছে নিয়ে যান।
ভারতীয় কয়েকটি সম্প্রদায়ের মধ্যে শিশু বয়োপ্রাপ্ত হলে ব্রতী অনুষ্ঠান করা হয়। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি অথবা পুরোহিত কিশোরটিকে জীবনে ব্রতী করান, এবং কিশোরটি যে সম্প্রদায় ভুক্ত- হিন্দু, খ্রীস্টান অথবা মুসলিম- তদনুসারে ধর্মানুচরণে তাকে নির্দেশ দেন।
হিন্দু, মুসলিম, খ্রীস্টান এবং পার্শীগণ শিশুর জন্ম, নামকরণ অথবা দীক্ষা উৎসব বিভিন্ন রীতিতে পালন করে থাকেন; কিন্তু সেই উৎসবের বহিরঙ্গের ভিন্নতা থাকলেও তাদের অন্তর্নিহিত সারমর্ম’ সব ধর্মে’র মতোই মূলত এক। যেমন বাবা বলেছেন, ‘অলংকার নানারকম হতে পারে, কিন্তু সোনা একই।’
ভারতীয়দের অপত্যস্নেহ সুবিদিত। ভারতীয় বয়স্ক ব্যক্তিরা শিশুদের সাহচর্য’ ভালোবাসেন। তাঁরা শিশুদের আদর করেন, আলিঙ্গন করেন- পাশ্চাত্যবাসীরা যা করেন না। শিশুর সঙ্গে বয়স্কদের এই দৈহিক সংস্পর্শ বিশেষ করে তাদের পিতামাতার- তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক বন্ধনকে দৃড় করতে সাহায্য করে।
সকল ভারতীয় ধর্মে’র পরবর্তী’ আনন্দময় অনুষ্ঠানটি হল বিবাহ। হিন্দুদের বিবাহ অনুষ্ঠান হয় পবিত্র অগ্নির সামনে পুরোহিত কর্তৃক মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারা। বর ও বধূর এই পবিত্র বন্ধনের সাক্ষী থাকে পবিত্র অগ্নি। খ্রীস্টানদের বিবাহ গীর্জায় পুরোহিতের সামনে সম্পন্ন হয়।
ভারতীয়রা যে-কোনো ধর্ম’বলম্বী হোক না কেন বন্ধুকে উজ্জ্বল রঙের বেশে সুসজ্জিত করে। বিবাহে খুবই আমোদপ্রমোদ হয় এবং প্রচুর ভোজের ব্যবস্থাও থাকে, কিন্তু বিবাহের অনুষ্ঠানটি গুরুগম্ভীর। বর ও বন্ধু বিবাহ উৎসবে সকল আত্মীয় স্বজন বন্ধ, বান্ধবের উপস্থিতিতে ঘোষণা করে যে, জীবনে যত ঝড় ঝঞ্ঝা আসুক না কেন, পরস্পর থেকে কোনোমতেই তারা বিচ্যুত হবে না। সকল ভারতীয়ের কাছে স্ত্রী ও পুরুষের বিবাহ দুজনের মধ্যে একটি পবিত্র বন্ধন- যা উভয়কে সারাজীবনের জন্য পরস্পরের আনন্দ-বেদনার অংশীদার করে রাখে। গার্হস্থ্য জীবনে সঙ্গ ছাড়াও স্বামী- স্ত্রী উভয়েই আধ্যাত্মিক পথের সহযাত্রী ও সঙ্গী এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য উভয়েরই সমবেত চেষ্টার প্রয়োজন।
সকল ভারতীয় ধর্মে মৃতের সৎকার অনুষ্ঠানও বিশদ। মুসলমান ও খ্রীস্টানরা মৃতদেহ কবরস্থ করে, কিন্তু হিন্দুরা সর্বদাই মৃতদেহ দাহ করে। পার্শীরা মৃতদেহ ‘টাওয়ার অফ সায়লেন্স’-এর উপর রেখে দেয় (পার্শীরা বিশ্বাস করে যে মৃতদেহ দ্বারা মাটি অপবিত্র হওয়া উচিত নয়)। সব ধর্মেই মৃতের শেষ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রায় একই ধরনের। হিন্দুরা পুনর্জন্মে অর্থাৎ মৃতব্যক্তির পুনরায় অন্যদেহ ধারণে বিশ্বাস করে। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী জন্ম এবং মৃত্যু চক্রাকারে আবর্ত’ন করে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঈশ্বরে বিলীন না হই। মুসলমান ও খ্রীস্টানরা বিশ্বাস করে যে. শেষ বিচারের দিন বা রোজ-কেয়ামতের দিন সমস্ত মৃত ব্যক্তিরা পুণরুত্থিত হবে, তাদের কৃতকর্মের বিচার হবে এবং সে অনুযায়ী তারা শাস্তি বা পুরস্কার পাবে।
ভারতের ধর্মী’য় প্রথাগুলির যে বিষয়টির উপর আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত তা হল এই যে এগুলি শুধুমাত্র প্রথা নয় যা লোকেরা অন্ধের মতো অনুসরণ করে। এগুলির একটি অর্থ’ এবং একটি উদ্দেশ্য আছে। এগুলির উদ্দেশ্য হল জীবনের দুঃখ-বেদনাকে সহনযোগ্য করা এবং জীবনের আনন্দকে বাড়ানো; এগুলির অন্য উদ্দেশ্য হল সারা জীবন আমাদের সঠিক পথে চালনা করা- যা আমাদের মধ্যে অনেকেই উপলব্ধি করা দুঃসাধ্য মনে করি।