নৃত্য
নৃত্য
ভারতে পূজার্চনার সঙ্গে নৃত্যের সম্পর্ক’ সুপ্রাচীন। বৈদিক অনুষ্ঠানে নৃত্য একটি বিশিষ্ট অঙ্গ ছিল। ভারতীয়দের কাছে নৃত্য যে সংগীতের মতোই প্রিয় সে কথা কিন্তু জোর করে বলা যায় না। এটি অবশ্যস্বীকার্য যে নৃত্য কোনোদিনই ভারতীয়দের সামাজিক জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠতে পারেনি, যেমনটি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে হয়েছে। কিন্তু ভারতবর্ষ’ দুই শ্রেণীর নৃত্যকে সংরক্ষণ করেছে- ধ্রুপদী নৃত্য ও লোকনৃত্য।
ভারতবর্ষে’ বিকশিত উচ্চাঙ্গের নৃত্যকলার মধ্যে ভরত নাট্যম সর্বশ্রেষ্ঠ। এই নৃত্যের উৎপত্তি দক্ষিণ ভারতে। বর্তমানে এর গুণগ্রাহী ও ব্যাখাতা শুধু ভারতেই নয়, সুন্দুর বিদেশেও ছড়িয়ে রয়েছে। এই নৃত্যকে সম্যক অনুধাবন করতে হলে নর্তকের নৃত্যকালীন ব্যবহৃত প্রতীক, যথা মুদ্রা ও মুখভঙ্গি দর্শকের জানা থাকা প্রয়োজন।
উত্তর ভারতের উচ্চাঙ্গের নৃত্যের মধ্যে মণিপুরী সমধিক পরিচিত। ভরত নাট্যমের মতো মণিপুরী নৃত্য প্রতীক-প্রধান নয়। ওড়িয়া এবং কুচিপুরিও সুবিখ্যাত ভারতীয় নৃত্য। এই নৃত্যসমূহের ইতিহাস ও কলা- কৌশল সম্বন্ধে জ্ঞান বুদ্ধিবৃত্তিকে সমৃদ্ধ করে এবং মঞ্চের উপর এই নৃত্য- সমূহকে যথাযথ হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে সৌন্দর্য’ উপলব্ধির এক নিবিড় সুখকর অভিজ্ঞতা হয়।
লোকগীতি যেমন ভারতীয় সংগীতধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, লোক- নৃত্যও তেমনি ভারতীয় নৃত্যধারার অতি প্রয়োজনীয় অংশ। গ্রামীণ ভারতের যে-কোনো স্থানে গেলে দেখা যাবে যে, ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে গ্রামবাসীরা নৃত্যগীতে মগ্ন। তারা উৎসবে ও মেলায় নৃত্য করে থাকে। এই লোকনৃত্য ও গীতি দ্বারা সব ক্ষেত্রে পৌরাণিক কাহিনী উপস্থাপিত হয় না। এর অনেকগুলি সাধারণ মানুষের জীবনকথা ও নিজ সম্প্রদায়ভুক্ত বীরপুরুষ ও বীরাঙ্গনার কথা জানায়। সেইজন্য ভারতীয় লোকগীতি ও লোকনৃত্যকে ভালো ভাবে বুঝতে হলে আমাদের গ্রামীণ অধিবাসীদের কথা ও তাদের পুরাকাহিনী জানতে হবে।