বায়ু – 2
বায়ু – ২
প্রিয় ছেলেমেয়েরা, এসো আজ একটা খেলা খেলি। তোমরা হাত দিয়ে তোমাদের নাক ও মুখ বন্ধ করে বসো। কে বেশিক্ষণ এইভাবে থাকতে পারে দেখি।
এবার বলতো কোন উপাদানটি ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বাঁচতে পারি না? সেটা হলো বায়ু। যদি আমাদের তেষ্টা পায় আর জল না পাই তাহলে আমরা কয়েকদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারি। যদি খুব খিদে পায় আর খাবার না পাই তাহলে আরও কয়েক দিন বাঁচতে পারি। কিন্তু বায়ু বিনা জীবন অকল্পনীয়।
- কে এই বায়ু সৃষ্টি করেছেন? কোন বিজ্ঞানী, ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার? না। ঈশ্বর আমাদের ভালোবেসে আমাদের জন্য বায়ু সৃষ্টি করেছেন।
- আমরা কি বায়ু ব্যবহার করি বলে ঈশ্বরকে কোন খাজনা দিই? আমরা তো বিদ্যুৎ, জল প্রভৃতির জন্য খাজনা দিয়ে থাকি, কিন্তু বাতাস আমরা একেবারে বিনামূল্যে উপভোগ করি। এটি ঈশ্বরের দান। আমরা এই দিব্য কৃপার জন্য ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।
প্রার্থনা
“নমস্তে বায়ো। ত্বমেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্মাসি। ত্বামেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্মবাদিষ্যামি। ঋতমবাদিষ্যামি, সত্যমবাদিষ্যামি।” :
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। ( বৈদিক প্রার্থনা)
হে বায়ু দেবতা! পরম সত্য,
তোমাকে প্রণাম।
আমাদের শক্তি, বুদ্ধি ও সুষম শ্বাস প্রদান করো।
গল্প
তোমরা কি জান হনুমান কেন এত শক্তিশালী ছিলেন? আজকে তোমাদের সেই কাহিনী শোনাবো। কিন্তু তার আগে বলতো হনুমানের বাবা কে? বায়ু দেবতা।
[ তার জন্মের অব্যবহিত পরেই খিদে মেটানোর জন্য হনুমান কিভাবে উদীয়মান সূর্য কে পাকা ফল ভেবে খেয়ে ফেলেছিল সেই ঘটনার কথা ছেলেমেয়েদের বলতে হবে।]
হনুমান সূর্যকে খেয়ে ফেলার ফলে গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। তারা হনুমানকে অনুরোধ করলেন যাতে সে সূর্যকে ছেড়ে দেয়। ছোট্ট হনুমান এই প্রস্তাব মেনে নিল না। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র সদ্যোজাত শিশু হনুমানকে তার বজ্র দিয়ে আঘাত করলেন। হনুমানের মেরুদণ্ড ভেঙে গেল। বায়ু দেবতা রেগে গেলেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে বায়ু দেবতা নিজেকে সরিয়ে নিলেন। বাতাস স্তব্ধ হয়ে গেল। ফলে কি হলো? তাপমাত্রা বাড়তে লাগলো। জীব জগত জ্বলে পুড়ে যেতে শুরু করল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর বায়ু দেবতার কাছে গেলেন এবং সৃষ্টিকে বাঁচাবার জন্য প্রার্থনা করতে লাগলেন। বায়ু দেবতা তিনজনকে তার পুত্রকে শক্তি প্রদান করতে বললেন যাতে সে অসীম বলশালী হতে পারে। সেই শিশু এইভাবে দিব্য শক্তির বলে বলীয়ান হল। সেই থেকে সে হনুমান নামে জগতে পরিচিত হল।
প্রশ্ন
- বায়ু প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে কি হয়েছিল?
- বাতাস না থাকলে কি হবে বলতে পারো?
- মাছ প্রভৃতি জলচর প্রাণী কি বেঁচে থাকবে? (না জলে দ্রবীভূত বাতাস থেকে ওরা শ্বাস প্রশ্বাস নেয়)
- গাছ কি বাতাস ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে? (না গাছের পাতা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে)
গোল হয়ে ঘোরার খেলা – (সার্কেল গেম)
মাটিতে ছয়টি গোল ঘর আঁকতে হবে। তাতে নাম লেখা হবে, ভূমি, জল, আগুন, জঙ্গল, পাখি এবং শূণ্য। বাজনা চলবে। শিশুরা ঘুরবে। বাজনা থামলে প্রত্যেককে একটা একটা গোল ঘরে দাঁড়াতে হবে। যে যেমন ঘরে দাঁড়াবে তাকে সেই অনুসারে নিচের লেখা কাজগুলো করতে হবে।
মাটি – নৃত্যরত মানুষ।;
জল – মাছ সাঁতার কাটছে;
পাখি – উড়ন্ত পাখি;
আগুন – জ্বলন্ত অগ্নিশিখা;
শূণ্য – মৃতদেহ;
যে শূণ্যর ঘরে দাঁড়াবে সে খেলা থেকে বাদ হয়ে যাবে। এবার বায়ুর গুণগুলি বুঝবার জন্য কয়েকটি প্রশ্ন করা হবে।
- তুমি কি বায়ুকে দেখতে পাও? (না এটি নিরাকার)
- তুমি কি বায়ুর স্বাদ গ্রহণ করতে পার? (না, এটির কোন স্বাদ নেই।)
- তুমি কি বাতাসের শব্দ শুনতে পাও? (হ্যাঁ, বাতাসের শব্দ তার গতির উপর নির্ভর করে)
- তুমি কি বায়ুকে স্পর্শ করতে পারো? (হ্যাঁ আমরা বাতাসের স্পর্শ অনুভব করতে পারি)
সকাল ও সন্ধ্যায় ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ালে আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মন আনন্দে ভরে ওঠে। গুণঃ বাতাসের দুটি গুণ; শব্দ এবং স্পর্শ।
গল্প
একটি ছোট পাখি ছিল। তার নাম ডলি। তার একদিন ইচ্ছে হলো নানান দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবার। তাই একদিন ভোর বেলা সে রওনা হল দূর দেশের উদ্দেশ্যে। মনের সুখে আকাশে ডানা মেলে ডলি উড়ে চলল। চারিদিকে নির্মল বাতাস বইছিল। বড় আনন্দ হল তার উড়তে। মাঝেমাঝে ক্লান্ত হয়ে কোন উঁচু গাছের ডালে বসে গাছের ফল খেল পেট ভরে। গাছের ডালে বসে দোল খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ল সে। পরদিন সকাল বেলায় আবার রওয়ানা হলো। এমন করে অনেক দূর পথ অতিক্রম করার পর সে একটি শহরে পৌঁছল। খুব ক্লান্ত ছিল, তাই বিশ্রাম নেবার জন্য চারিদিকে গাছপালা খুঁজতে লাগল। কিন্তু একটি গাছও দেখতে পেল না। অবশেষে একটি বাড়ির মাথায় বসে হঠাৎ তার ভীষণ চোখ জ্বালা করতে লাগল। মাঝে মাঝে মনে হল দম আটকে আসছে। বুঝতে পারল না কেন এমন হচ্ছে। হঠাৎ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে, একটি চিমনি থেকে অনেক কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর নিচের রাস্তায় কত গাড়ি। গাড়ি গুলো থেকেও অনেক কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ডলি বুঝল, এখানকার বাতাস দূষিত বলে তার চোখ জ্বালা করছে আর নিঃশ্বাস নিতে এত কষ্ট হচ্ছে। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে সে আর বাঁচবে না। তাই তাড়াতাড়ি শহর ছাড়িয়ে সে উড়তে লাগলো কোন এক জঙ্গলের উদ্দ্যেশ্যে। অবশেষে সে এসে পৌছালো এক জঙ্গলে, সেখানে অনেক গাছ। তার একটি ডালে বসে সে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিল। এতক্ষণে মনে হলো যেন তার দেহে নতুন প্রাণের সঞ্চার হলো। সে মনে মনে ভাবল ভগবানের দান নির্মল বাতাস কে মানুষ কিভাবে দূষিত করেছে। শহরের এই দূষিত বাতাস কে নির্মল করতেই হবে। এই ভেবে সে ফিরে গেল তার পুরোনো বাসস্থানে। তার বন্ধুদের কাছে। বন্ধুদের সবাইকে ডেকে শহরের কথা শোনাল। বন্ধুরা সবাই মিলে পরামর্শ করল, এই জঙ্গল থেকে নানান গাছের বীজ তারা ঠোঁটে করে নিয়ে যাবে। শহরের চারপাশে যে মাটি আছে তাতেই ছড়িয়ে দেবে। বর্ষার জল পেয়ে সেই বীজ থেকে অনেক গাছ হবে। এই গাছ শহরের বাতাস শুদ্ধ, নির্মল করবে।পাখীরা শহরের চারিদিকে ছড়িয়ে দিল সেই বীজ। বীজ থেকে হল অনেক গাছ। শহরের চারিদিক বড় বড় গাছে ভরে গেল। চারিদিকে নির্মল বাতাস বইতে লাগল। সেই বাতাস গ্রহণ করে শহরের মানুষেরা সুস্থ সবল জীবন যাপন করতে লাগল।
প্রশ্নোত্তর
ছেলে মেয়েদের কিছু প্রশ্ন করে জানতে হবে তারা কতদূর বুঝেছে।
- বায়ু দূষিত হলে কি হয়? (তাপমাত্রা বেড়ে যায়)
- বায়ু দূষণের কারণ কী? (কারখানা এবং যানবাহনের দূষিত বাতাস; গাছপালা কেটে ফেলা)
- কিভাবে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? (গাছ পোঁতা, বাতাসে দূষিত বায়ুর নির্গমন বন্ধ করা)
- বিশুদ্ধ বাতাস এর প্রয়োজনীয়তা কতখানি? (বাতাস আমাদের সজীব রাখে এবং শক্তি দেয়)
মানসভ্রমণ
ছেলেমেয়েরা আমরা মনে মনে একটু বেড়িয়ে আসি। কোথায় যাব? আমরা সবুজ ঘাসে ঢাকা বাগানে বেড়াতে যাব। তোমরা সোজা হয়ে বসো। মনে কর, এখন প্রাতঃকাল এসো আমরা তিনবার ওমকার করি। এবার একটু নীরব উপবেশন করি। এবার মনে করো আমরা সবাই লাইন করে বাগানের দিকে যাচ্ছি। দেখো আকাশে সূর্যোদয় হচ্ছে। কি সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। একটু অপেক্ষা করো। একটা বাস আসছে। তার থেকে দূষিত বায়ু বের হচ্ছে। ওটা আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো নয়। বাসটাকে চলে যেতে দাও। এবার রাস্তা পার হয়ে বাগানের দিকে চল। বাসটা চলে যাওয়ার পর বাতাস আবার আগের মতো তাজা হয়ে গেল। এবার আমরা বাগানে প্রবেশ করলাম। বাগানে কত ফুল তাদের সুগন্ধে বাতাস যেন আরও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। গাছগুলোর দিকে দেখ, ঠান্ডা বাতাসে দোল খাচ্ছে। এসো এখানে একটু বসি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই এই সুন্দর সূর্য, গাছপালা, আর প্রকৃতিকে সৃষ্টি করার জন্য। চলো এবার আমরা ফিরে যাই আমাদের ক্লাশে। শান্ত হয়ে বসো। এবার তিনবার শান্তি মন্ত্র উচ্চারণ করো।
“তাজা বাতাস, সুস্থ বাতাস, পবিত্র বাতাস, দিব্য শক্তি।”