ভূমি – 2
ভূমি ২
ভূমিকা
ধরিত্রী আমাদের মাতা তিনি সুউচ্চ পর্বত, গভীর সমুদ্র, বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, নদী, হ্রদ সবকিছুর ভার অক্লেশে বহন করেন। চাষাবাদ, খনিজ পদার্থ সংগ্রহ শিল্পাঞ্চল তৈরি প্রভৃতি কাজে আমরা অনায়সে তঁকে বেদনা দিয়ে থাকি। মুখ বুজে তিনি তা সহ্য করেন। পরিবর্তে আমাদের খাদ্য বাসস্থান সুন্দর পরিবেশ ইত্যাদি দিয়ে থাকেন।
গল্প
এক গ্রামে এক চাষী ছিল। তার ছোট্ট নাতি তার সঙ্গে রোজ চাষের জমিতে যেত। নাতির একটা অভ্যাস ছিল সেই চারিদিকে যা দেখত তার সম্বন্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করত। দাদুকে মাঠে বীজ বপন করতে দেখে স্বভাবতই সে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল। দাদু তাকে বীজ বপণ করা সম্বন্ধে বললেন। এবার নাতি জানতে চাইলো কেন তিনি বীজ পুঁতলেন। চাষী তার নাতিকে ছয় মাস অপেক্ষা করতে বললেন। ছয় মাস পরে শস্য ভর্তি বস্তাগুলো যখন বাড়িতে আনা হল, নাতি তখন আবার প্রশ্ন করল, “বস্তাগুলো কোথা থেকে এল?” এবার সুযোগ বুঝে নাতিকে বোঝালেন যে ছয় মাস আগে বপন করা বীজের ফসল হলো এই শস্য। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর ছেলেটি বলল আমাদের ক্ষেত হল একটি খুব ভালো ব্যাংক। এখানে কম দিনের জন্য আমানত রাখলেও বেশি সুদ পাওয়া যায়।
গান
ক্ষিতি আমি ক্ষিতি ওগো লোকে বলে মাটি
সেবিতে এ চরাচর হল মোর সৃষ্টি।
নেই কোন প্রত্যাশা চাইনা প্রতিদান
নিঃস্বার্থ সেবার লাগি সঁপেছি পরাণ। (১)
নির্বিচারে সহি আমি সকল অত্যাচার
সকলের তরে মোর অবারিত দ্বার।
পরের সুখের লাগি নিবেদিত প্রাণ
সানন্দে হাসিমুখে সবে দিই স্থান। (২)
মোর বুকে শোভে পর্বত শ্রেণী
উচ্চ ভূধর দীর্ঘ স্রোতস্বিনী
গগণচুম্বী প্রাসাদ ও স্তম্ভ
ক্ষেতে প্রাণদায়ী ফসল – অন্ন। (৩)
নীরব উপবেশন
ছেলেমেয়েদের সামনে একটি ভূগোলক(Globe) রাখা থাকবে। ওদের বলা হবে খুব ভালোভাবে ভূগোলকটিকে নিরীক্ষণ করতে। দু চার মিনিট দেখার পর ওদের চোখ বন্ধ করে ভূগোলকে দেখা মহাদেশ, দেশ প্রভৃতির ছবি চিন্তা করতে বলা হবে।
প্রশ্ন
- কোথায় শস্য উৎপন্ন হয়?
- ইট কি দিয়ে তৈরি?
- জল পাওয়ার জন্য কোথায় নলকূপ খোঁড়া হয়?
- যেখান থেকে খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় সেই খনি গুলি কোথায় অবস্থিত?
- কোথায় শাকসবজি উৎপন্ন হয়?
গল্প
এক গ্রামে এক ধনী ব্যক্তি বসবাস করতেন। তার তিন ছেলে ছিল। তিনি যখন বৃদ্ধ হলেন তখন চিন্তা করলেন তাঁর সব সম্পত্তি ছেলেদের মধ্যে তিনি ভাগ করে দেবেন। তাঁর অনেক জমিজমা, গরু, মোষ আর অনেক সোনার গহনা ছিল। বড় ছেলে বাবার কাছে সব সোনার গহনা চেয়ে নিল। মেজো ছেলে গবাদি পশুদের খুব ভালোবাসতো। তাই সে সব গরু আর তাদের দেখাশোনা করবার লোকেদের দায়িত্ব নিল। ছোট ছেলের জন্য রইল পড়ে জমিজমা। অগত্যা, সে সব জমি জায়গার মালিক হল। দিন কাটতে লাগল। একদিন ওই ধনী ব্যক্তি মারা গেলেন।
ছেলেরা যে যার মতো জীবন যাপন করতে লাগল। একবার ওই জেলায় খুব বন্যা হল। অনেক গবাদিপশু মারা গেল। যে কটা বেঁচে রইল তারাও ক্রমে না খেতে পেয়ে মারা গেল। সুতরাং মেজো ছেলের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। কাজ এবং খাবার না পেয়ে গ্রামের কিছু লোক জীবিকার সন্ধানে শহরে চলে গেল। অভাবে পড়ে গ্রামের মানুষ চুরি-ডাকাতি করতে আরম্ভ করল। একদিন বড় ছেলের বাড়িতে ডাকাতি হল। তার সব গয়নাগাটি টাকা পয়সা চুরি হয়ে গেল। বন্যার প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার পর গ্রামের মানুষ জমিতে আবার চাষ করল। কিছুদিন পর ফসল হল। আবার সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস শুরু করল। ভালো ফসল পাওয়ার জন্য ছোট ছেলে ধরিত্রী মাতাকে ধন্যবাদ জানাল।
দলগত কার্যক্রম
ছাত্র-ছাত্রীদের দুটি দলে ভাগ করা হবে একদলকে কিছু বস্তুর নাম বলা হবে। অন্য দল সেই জিনিসের কার্যকারিতা বা উপকারিতার কথা বলবে।