একলব্য
একলব্য
দ্রোণাচার্যের আশ্রমে পাণ্ডবরা, কৌরবরা এবং অন্যান্য রাজ্যের রাজকুমাররা অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করত। অস্ত্রবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে দ্রোণের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। উপজাতিদের রাজা হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য চাইলেন দ্রোণের কাছ হতে শিক্ষাগ্রহণ করবেন। তাই তিনি দ্রোণের কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, “প্রভু! আমি আপনার আশ্রেমে থেকে আপনার সেবা করতে ও অস্ত্রবিদ্যা শিখতে চাই”। দ্রোণ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে বললেন, এই সমস্ত রাজকুমারের সঙ্গে একত্রে তোমায় শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।
একলব্য মনে খুবই দুঃখ পেলেন। তিনি দ্রোণাচার্যকে গুরু হিসেবে গ্রহণ করে, দ্রোণাচার্যের মূর্তি সামনে রেখে নিজেই অস্ত্রবিদ্যা শিখতে লাগলেন।
একদিন কৌরবরা ও পাণ্ডবরা শিকারে বেরোলেন। তাদের সঙ্গে একটি কুকুর ছিল। বনে কুকুরটি ঘুরতে ঘুরতে একলব্যের শিক্ষাশ্রমে গিয়ে উপস্থিত হল। একলব্যের গায়ের রং কালো দেখে কুকুরটি চেঁচাতে লাগল। এতে একলব্য সাতটি বাণ মেরে তার মুখটি সেলাই করে দিল। কুকুরটি দৌড়ে তার প্রভুদের কাছে উপস্থিত হল। কুকুরটির অবস্থা দেখে তারা আশ্চর্য হয়ে গেল। খুব বড় তীরন্দাজ হলে এমন নিপুণভাবে তীর দিয়ে মুখ বন্ধ করা যায় না। খুঁজতে খুঁজতে তারা একলব্যের দেখা পেলেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন যে তার গুরু হলেন দ্রোণাচার্য।
দ্রোণাচার্যের আশ্রমে ফিরে গিয়ে তারা অনুযোগ করলেন যে প্রিয় শিষ্য একলব্যকে বেশী বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। অর্জুন অনুযোগ করে বললেন যে দ্রোণাচার্য বেশী অস্ত্রবিদ্যা শিখিয়েছেন। দ্রোণাচার্য আশ্চর্য হয়ে বললেন তিনি তো একলব্যকে অস্ত্রশিক্ষা দেননি, বরং সে এলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে তিনি একলব্যের কাছে। গেলেন। একলব্য গুরুকে দেখে খুবই আনন্দিত হলেন এবং সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। দ্রোণাচার্য সব শুনে গুরুদক্ষিণা হিসেবে একলব্যের ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল চাইলেন। হাসিমুখে গুরুর আজ্ঞা পালন করে তরবারি দিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে দিলেন। আর কোনওদিন তীর ছুঁড়তে পারবে না। অর্জুন তাই সর্বশ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ হতে পারবেন। এইভাবেই একলব্য শ্রেষ্ঠ গুরুভক্তির নিদর্শন রেখে গেলেন। আজও গুরুভক্তির দৃষ্টান্ত হিসেবে লোকে একলব্যের নাম করে থাকেন। জগতের কাছে একলব্য অমর হয়ে রইলেন।