খাদ্যাভ্যাস
খাদ্যাভ্যাস
অধিবাসীদের খাদ্য গ্রহণ রীতি বহুলাংশে নির্ভর করে সেই প্রদেশের স্থানীয় আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থানের উপর। ভারতের শীতল পার্ব’ত্য অঞ্চলে মাংস খাওয়া সাধারণ রীতি। সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে মাছই প্রধানতম খাদ্য। সমতলভূমির অধিবাসীদের খাদ্যশস্য ও সবজী উৎপন্ন করার সুযোগ থাকায় তারা জীবনধারণের জন্য মাছ বা মাংসের উপর নির্ভরশীল নয়। যদিও খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস স্থানীয় আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক অবস্থানের উপর বেশি নির্ভরশীল, তবু অনেকাংশে তা আবার নির্ভর করে অধিবাসীদের ধর্মী’য় মনোভাব ও শ্রদ্ধার উপর। লক্ষ লক্ষ হিন্দু যেমন বিশ্বাস করে আমিষ খাদ্যই স্বাভাবিক খাদ্য, আবার তাদের মধ্যেই এক বিরাট অংশ এই মতের সম্পর্ণ বিরোধী। মুসলমানরা সাধারণত আমিষাশী, কিন্তু কয়েক ধরনের মাংস তারা খায় না।
হিন্দুদের একটি বিরাট অংশ কেন মাছ মাংস খাওয়ার বিরোধী, তার আলোচনা অতীব প্রয়োজনীয়। নিজেদের খাদ্যের প্রয়োজনে মাছ ও জীব হত্যা, ঈশ্বরসৃষ্ট সেই নিরীহ অসহায় প্রাণীদের প্রতি হিংসার পরিচায়ক। অধিকাংশ হিন্দুর এইটিই দৃঢ় বিশ্বাস। তাদের আর-একটি দৃঢ় বিশ্বাস যে, মাংস এবং মাছ অপবিত্র (সাত্ত্বিক আহার নয়), সুতরাং শরীরের পক্ষে তা ক্ষতিকর। তারা বিশ্বাস করে যে, যে-কোনো ব্যক্তির চিন্তা বাক্য ও কার্য তার গৃহীত আহার্যে’র উপর নির্ভর করে। নিরামিষ আহারে শান্ত স্বভাব, শুভগুণ (সাত্ত্বিক গুণ) উৎপাদন করে যা আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে ও অভীষ্ট লাভের অনুকুল ও সহায়ক। তৎসত্ত্বেও একথা পরিষ্কার ভাবে বোঝা দরকার যে নিরামিষ আহার ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার সমপর্যায়ে কখনোই নয়। শেষোক্তগুলি প্রধানত মনের একটি বিশিষ্ট ভাব, কিন্তু আহার্য’ রীতি সাধারণত নিজ পরিবার, সামাজিক রীতিনীতি, ধর্ম’বিশ্বাস, এবং দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সম্পদের উপর নির্ভরশীল; এবং এইগুলির পরিপ্রেক্ষিতেই আহার্য’-অভ্যাসকে বিচার করতে হবে।