বন্ধুত্ব ও আত্মত্যাগ
বন্ধুত্ব ও আত্মত্যাগ
কোলকাতায় এক নামকরা স্কুলে অনিল আর সুনীল দুজনে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো; দুজনেই খুব মেধাবী ছিল। দুজনের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিলো, নিজের ভাইয়ের মতন তারা পরস্পরকে ভালবাসতো। ক্লাসের মধ্যে সুনীল বরাবর প্রথম হতো আর অনিল দ্বিতীয় হতো। প্রত্যেক বছর তাদের পরীক্ষার ফলাফল একই ভাবে চলতো।
হঠাৎ একদিন সুনীলের জীবনে নেমে এলো প্রচণ্ড বিপর্যয়। পৃথিবীতে তার একমাত্র প্রিয়জন, তার বিধবা মা গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সুনীল দিবারাত্র তার মায়ের সেবা করতে লাগলো কিন্তু তিনি দিনে দিনে দুর্বল হতে লাগলেন। দুই মাস রোগভোগের পর তিনি একদিন মারা গেলেন। যাবার আগে, তার প্রিয় সন্তানকে দেখার জন্যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে গেলেন। এরপর থেকে সুনীল তার কাকা কাকির কাছে থাকতে লাগলো।
সুনীল দুই মাস স্কুলে যেতে পারেনি। কাজেই বার্ষিক পরীক্ষার সময় হয়ে আসায়, সে প্রাণপণে খাটতে লাগলো – যাতে কি না প্রথম হতে পারে। কিন্তু তার হারানো মায়ের স্মৃতি মনে ভেসে আসায় সে পড়াশোনায় মন দিতে পারছিলাম না। প্রত্যেকে, এমন কি সুনীলও বুঝতে পারলো, যে এ বছর অনিল প্রথম হবে। পরীক্ষা শেষ হলো। শিক্ষক অনিলের পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখে অবাক হয়ে গেলেন। সব প্রশ্ন সহজ হওয়া সত্ত্বেও অনিল কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর লেখেইনি। শিক্ষক এর জন্য অনিলকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ঐ প্রশ্নের উত্তর দিতে তার কোথায় অসুবিধে লেগেছে!
মুহুর্তের জন্যে চুপ করে থেকে অনিল ভাবতে লাগলো শিক্ষকের কাছে এর গোপন কারণ বলা যায় কিনা। পরে সে দুঃখিত স্বরে বলল, “স্যার, আপনি তো জানেন যে, সুনীল এত বছর ধরে প্রথম হয়ে এসেছে। এ বছর সে মাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে গিয়েছে। পরে যদি সে পরীক্ষায় প্রথম না হতে পারে, সেটা তার পক্ষে আর একটা মর্মান্তিক আঘাত হবে। আমি ঐ দুটো প্রশ্নের উত্তর লিখিনি – যাতে সুনীল আমার চাইতে বেশী নম্বর পেয়ে প্রথম হতে পারে। এতে সে উৎসাহ পাবে, আনন্দ ও পাবে। এই পর্যন্ত বলে অনিল উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠলো, “কিন্তু, স্যার, এই কথাটা দয়া করে কাউকে যেন জানাবেন না। সুনীলের কানে যদি এই কথা যায় তাহলে আমার এই কাজে সে আরো বেশী দুঃখ পাবে। সে আমার বন্ধু, তাকে আমি সব সময়ে সুখী দেখতে চাই। শিক্ষক অনিলের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, “দেখ বাবা, আজ আমি তোমার জন্যে যেমন গর্ববোধ করছি, তেমন আগে করিনি। আমি নিশ্চিত বলতে পারি যে, তোমার বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এই সব মহৎ গুণ তোমাকে একজন মহৎ মানুষ করে গড়ে তুলবে।”
প্রশ্নঃ
- অনিল পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার সুযোগ নষ্ট করলো কেন?
- অনিল তার উত্তরটা গোপন রাখার জন্যে শিক্ষককে অনুরোধ করলো কেন?
- কে প্রকৃত বন্ধু, কে নয়, তা কি করে বুঝবে? তোমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু উদাহরণ দাও।
- তোমার বন্ধু, ভাই কিংবা বোন বা বাড়ির অন্য কারো জন্যে কখনও কি কোন কিছু ত্যাগ করেছে? করে থাকলে, তোমার সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।