আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাস
বুদ্ধিকে তীক্ষ্ণ করতে হয়, তবেই এই প্রকৃতির মধ্যে যে ঐক্য রয়েছে তা বুঝতে পারা যায়। এই কারণে আমাদের বেদে যে সর্বোচ্চ মন্ত্র, গায়ত্রী মন্ত্র বলছে, “আমার বুদ্ধিকে আলোকিত করো।” এই মন্ত্র অন্য কিছু চায়নি, চেয়েছে যাতে বুদ্ধি আলোকিত হয়।
তেনালী রামকৃষ্ণ অন্ধ্রের বিখ্যাত কবি। তিনি একাধারে কবি এবং দার্শনিকও ছিলেন। একদিন তিনি বনে পথ হারালেন। তিনি ষোড়শ শতাব্দীর অন্ধ্রের বিখ্যাত রাজা কৃষ্ণদেব রায়ার রাজসভার এক পণ্ডিত ছিলেন। তাঁর তীক্ষ্ণ শ্লেষ, বিচার ও রসজ্ঞানের জন্য তিনি খুব বিখ্যাত ছিলেন। এই তেনালী রামকৃষ্ণ বনে পথ হারিয়ে ঘুরতে ঘুরতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তখন এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর চরণে পড়ে রামকৃষ্ণ বললেন, “আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি, আমায় একটু সাহায্য করুন।” এই সন্ন্যাসী বললেন, “আমাকে যে রহস্যময় শক্তি এখানে এনেছিল সেই রহস্যময় শক্তিই তোমায় এখানে এনেছে। আমার শরীর জীর্ণ হয়ে গেছে। এই শরীর ছাড়বার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু তার আগে যে মন্ত্র আমি এতদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে জপ করে চলেছি সেই মন্ত্র আজ আমি তোমায় দিয়ে যেতে চাই। এই মন্ত্রটি তোমার রক্ষা কবচ হবে। তোমার পরম সম্পদ হবে।” বলে তিনি মা কালী নামের এই ইষ্ট মন্ত্র তিনি রামকৃষ্ণের কানে জপ করে দিলেন।
রামকৃষ্ণ এই মন্ত্রটি পেয়ে মহানন্দে মাতোয়ারা হয়ে গেলেন। তিনি মন্দিরের এক কোণে বসে মায়ের ধ্যান করতে করতে ক্রমাগত এই মন্ত্র জপ করে যেতে লাগলেন। তিনি এই রকম অনবরত জপ করে যাচ্ছেন। একদিন মাঝরাতে তিনি হঠাৎ দেখলেন, একদল কোয়া জাতীয় আদিবাসী একটি ছাগলকে মায়ের উদ্দেশ্যে বলি দিতে নিয়ে এল। যখন তারা এই ছাগলটিকে বলি দিতে যাচ্ছে এমনসময় রামকৃষ্ণ যিনি এতক্ষণ মায়ের ছবির পিছনে লুকিয়ে সব লক্ষ্য করছিলেন, বলে উঠলেন, “আমি সকল জীবেরই মা। তুমি যদি আমার সন্তান ঐ ছাগলটিকে মেরে ফেলো, তাহলে কিন্তু আমার আশীর্বাদ পাবেনা।” এই কোয়া আদিবাসীরা ভাবল মা যখন বারণ করছেন যার বলি দেবে না। তারা ছাগলটিকে রেখে দিয়ে চলে গেল।
এই ঘটনার পর মা কালী তেনালী রামকৃষ্ণকে দেখা দিলেন, বললেন, “তিনি রামকৃষ্ণর কাজে খুব সন্তুষ্ট হয়েছেন।”বললেন, “রামকৃষ্ণ, তুমি কি নেবে আমার কাছে প্রার্থনা করো।” সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল তার দুই হাতে দুই থালা। এক হাতের থালায় রয়েছে দই মাখানো ভাত আর অপর থালাটিতে রয়েছে দুধ মাখানো ভাত। রামকৃষ্ণ মাকে বললেন, “মা, এই দই মাখানো ভাত আর দুধ মাখানো ভাত রয়েছে, কোনটির কি ফল?” তখন দেবী উত্তর দিলেন, “এই দই ভাত তোমাকে অনেক সম্পদ, টাকা পয়সা দেবে, আর এই দুধ ভাত তোমাকে জ্ঞান দেবে। তুমি এর মধ্যে যেটি বেছে নিতে চাও বেছে নাও।
রামকৃষ্ণ নিজের মনে চিন্তা করলেন, “আমার যদি অনেক টাকা পয়সা হয় কিন্তু গাধার মত বুদ্ধি হয়, তাহলে এই টাকা পয়সায় লাভ হবে না, আবার আমি যদি শুধু পণ্ডিতই হই আর পেটে খাবার না থাকে তাহলেও কিছু লাভ হবে না।” তখন তিনি একটি বুদ্ধি বের করলেন। তিনি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মা, এই দুটির মধ্যে কোন্টির কিরকম স্বাদ?”
মা একটু হেসে উত্তর দিলেন, “কোন্টির কিরকম স্বাদ—আমি কি করে বলব? সে তো বোঝানো যাবে না। তোমাকে নিজেকে আস্বাদ করে দেখতে হবে।”
রামকৃষ্ণ এই সুযোগটির সদ্ব্যবহার করলেন। তিনি দুটি থালা থেকেই খেতে লাগলেন এবং আস্তে আস্তে সবটাই খেয়ে নিলেন।
রামকৃষ্ণের এই চালাকী দেখে মা ক্ষুব্ধ হবার ভান করে বললেন, “রামকৃষ্ণ, তুমি এটা কি করলে? এরজন্য তোমাকে ফল ভোগ করতে হবে।”
রামকৃষ্ণ মাথা নিচু করে বললেন, “হ্যাঁ, মা, তুমি যে শাস্তি আমায় দেবে, আমি মাথা নিচু করে তা নেবো।” রামকৃষ্ণ জানতেন, মা এত ক্রুদ্ধ হতে পারেন না আর মা সন্তানকে শাস্তিও দিতে পারেন না।
মা কালী প্রসন্ন হয়ে বললেন, “রামকৃষ্ণ, তুমি ওঠ, তুমি একজন বিখ্যাত কবি হবে। তুমি রাজসভার পণ্ডিতদের আসন অলংকৃত করবে এবং সেইভাবে তুমি অনেক সম্পদ সঞ্চয় করবে। শুধু তাই নয়, তোমার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তুমি অনেককে সাহায্য করতে পারবে।
প্রশ্নঃ
উপযুক্ত শব্দের দ্বারা শূণ্যস্থান পূরণ কর।
- রামকৃষ্ণ __________________রাজসভায় এক পন্ডিত ছিলেন।
- তাঁকে___________________ মন্ত্র দেওয়া হয়েছিল।
- মা কালীর হাতের থালায় _____________ এবং_______ ছিল।
এগুলি ভক্তকে __________ও __________ দিতে পারে। - রামকৃষ্ণ _____________ প্রার্থনা করলেন।
- রামকৃষ্ণ একজন_____________ছিলেন।