সুবাক্য ও কুবাক্য

Print Friendly, PDF & Email
সুবাক্য ও কুবাক্য

এক সময়ে এক রাজা ছিলেন। তিনি তার প্রজাদের প্রত্যেকে কিসে সুখী হতে পারে ও জ্ঞান লাভ করতে পারে, তা জানবার জন্যে উৎসুক হয়েছিলেন, আর, সেইজন্যে তিনি এক প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন। প্রত্যেকের জীবনে সুখ এনে দিতে পারে এমন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীতে রাখার জন্য রাজ্যের সমস্ত বিজ্ঞ লোকদের আমন্ত্রণ জানালেন। রাজা নিজে প্রদর্শনী দেখার জন্য এলেন। সেখানে তিনি সারি সারি ভালো জিনিস দেখতে পেলেন; তার মধ্যে ফুল, ফল, সু্ন্দর সুন্দর চারাগাছ, মিষ্টিখাবার, জামাকাপড়, বই, বাদ্যযন্ত্র, সোনার গহনা শিল্পবিদ্যা নানা জিনিস ইত্যাদি সমস্তই ছিল। কিন্তু এর কোনটাই, প্রত্যেকের পক্ষে সুখকর বলে রাজার মনে হলো না। শেষটায় তিনি এক রঙ্গীন মাটির ছাঁচের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। এটা একটা মানুষের মুখ, রাস্তার এক দীন দরিদ্র, ক্ষুধার্ত, কৃশকায় বৃদ্ধর সঙ্গে কথা বলার জন্য তার জিভটা দেখা যাচ্ছে। ঐ ছাঁচের তলায় লেখা আছে, “সু-বাক্য”।

King notices GOOD TONGUE model

রাজা ঐ ভাস্করকে ডেকে পাঠালেন ও এর সমন্ধে আরো কিছু জানতে চাইলেন। সে বলল, “মহারাজ, এই প্রদর্শনীর সব জিনিষ মানুষকে কিছুদিনের জন্যে সুখ দিতে পারে; কিন্তু সহানুভূতি ও ভালবাসা দিয়ে দু’চারটে কথা বললে, সেই সুবাক্য অন্যদের বছরের পর বছর সুখ দিতে পারে। এ আর্তক্লিষ্টকে আশা ও আনন্দ, দুর্বলকে শক্তি ও সাহস, অনাথেকে ভালবাসা দিতে পারে। সমস্ত মানুষকে চিরকালের জন্যে সুখ দিতে পারে।” ভাস্করের কথা শুনে রাজা এত প্রীত হলেন যে, তাকে সোনার পাত্রে মোহর বোঝাই করে পুরস্কার দিলেন।

King notices BAD TONGUE model

এর কিছুকাল বাদে, কিসে প্রত্যেক মানুষকে অসুখী করতে পারে, তা জানার জন্যে রাজার খুব কৌতুহল হলো। তিনি এক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে, তার রাজ্যের বিজ্ঞ লোকের এমন সব জিনিষপত্তর নিয়ে আসতে বলে পাঠালেন যার দ্বারা প্রত্যেকের জীবন দুঃখে ভরে উঠতে পারে। এবারের প্রদর্শনী কক্ষ বোঝাই হলে লাঠি, চাবুক, ছোরা, তরবারী, কাঁটা গাছ, তেতো ফল, মদ, বিষ, কুকুরের ঘেউ ঘেউ চীৎকার, কাকের কান ঝালাপালা করা কা-কা রব ইত্যাদি সম্ভারে। কিন্তু, এর কোনোটাই রাজার কাছে, তার প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর বলে মনে হলো না। শেষকালে, ঠিক আগের বারের মতন এক মাটির ছাঁচের কাছে তিনি এসে পৌছালেন। এই সময়ে কিন্তু দেখা গেল এর বিশাল রক্তবর্ণ চোখ আর কালচে জিভ এক দীন দরিদ্র, ক্ষুধার্ত কৃশকায় বৃদ্ধকে গালাগালি করছে। এর তলায় দুটি শব্দ লেখা আছে: “কু-বাক্য” । ভাস্করকে ডেকে পাঠানো হলো। সে এসে রাজাকে বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে দিলো, “মহারাজ, কুবাক্য অপরের সুখ, আনন্দ বিনষ্ট করে দিতে পারে, তাদের আশা, ভরসা ধূলিসাৎ করে, দুঃখের পাথারে ঠেলে ফেলে দিতে পারে। এ অপরের মনে এমন ক্ষত করে দিতে পারে, যা বছরের পর বছরেও শুকোবে না। কুবাক্য মানুষের সব চাইতে বড় শক্র।”

ভাস্করকে রাজা মণি-রত্ন হীরে বোঝাই করা সোনার এক পাত্র দিলেন। তিনি বললেন, “তোমার মাটির গড়া প্রতিমূর্তি আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, তা এই সব সোনার পাত্র, হীরে-জহরতের একত্রিত দামের চাইতেও অনেক বেশী দামী। প্রত্যেক মানুষের সব চাইতে বড় বন্ধু ও সকলের সুখলাভের সহজতম পন্থা হলো সুবাক্য।”

প্রশ্নঃ:

সুবাক্য সম্বলিত মানুষের বর্ণনা দাও। কি ভাবে সে প্রত্যেককে সুখী করতে পারে?
কুবাক্য সম্বলিত মানুষের বর্ণনা দাও। কি ভাবে সে প্রত্যেকের অবস্থা শোচনীয় করতে পারে?
উদাহরণ দিয়ে দেখাও যে সুবাক্য একজনকে সুখী করলো; অন্য আর একটি উদাহরণে দেখাও যে কুবাক্য একজনকে শোচনীয় অবস্থায় এনে ফেললো।
তুমি কি সব সময়েই সুবাক্য ব্যবহার কর ? না যদি করে থাকো, কেন করো না?
সর্বদা সুবাক্য ব্যবহার করার জন্যে কি করতে হবে বলে তোমার মনে হয়?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: