ঈশ্বরের কৃপা
ঈশ্বরের কৃপা
অনেক, অনেককাল আগে প্যারিসে ফ্রান্সিস নামে একজন যাদুকর ছিল। তার যাদু বিদ্যা ও ভেলকি ছেলে, বুড়ো, জোয়ান সবাইকেই আনন্দ দিত। খেলা দেখানোর পরে, যখন সে তার টুপি টা নিয়ে সকলের কাছে ঘুরতো, তারা এটা ভর্তি করে টাকা পয়সা দিয়ে তাকে খুসী করে দিতো। দিনের শেষে ফ্রান্সিস মেরী মাতার গির্জায় গিয়ে, প্রত্যহ তার খাবার জুগিয়ে দেবার জন্যে তাকে ধন্যবাদ জানাত।
একদিন সন্ধ্যায়, ফ্রান্সিস গির্জায় গিয়ে দেখল যে, কয়েকজন সন্ন্যাসী হাঁটু গেড়ে, উচ্চৈঃস্বরে মেরী মাতাকে প্রার্থনা জানাচ্ছেন। এই সরল, নির্মল মন মেরী মাতার প্রতি প্রেমে ভরপুর হয়ে উঠলো। সে উপরের দিকে তাকিয়ে দুঃখিত স্বরে বলল, “হায়, আমি তো ঐসব প্রার্থনা জানি না। মেরীমাতা, আমি কি করে আপনাকে খুসী করি? কিন্তু তার নির্মল অন্তঃকরণ তখনই তাকে পথ দেখিয়ে দিল। সমস্ত সন্ন্যাসী চলে যাওয়া পর্যন্ত সে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করল। যখন সমস্ত নিস্তব্ধ হয়ে গেল, তখন সে আস্তে আস্তে গির্জার ভেতরে ঢুকে পড়ল, যাতে কেউ গোলমাল না করে, তার জন্যে সে এর বড় বড় দরজাগুলো বন্ধ করে দিল।
ফ্রান্সিস তার থলের ভেতর থেকে ছুরি, কাঁচের প্লেট, সীসার বল, আরো অনেক জিনিষপত্র বার করে তার খেলা শুরু করে দিল। মধ্যে মধ্যেই সে আনন্দে চীৎকার করে বলতে লাগলো, “মেরি মাতা আপনি এই যাদুবিদ্যা দেখে খুসী হচ্ছেন তো?” সন্ন্যাসীদের একজন কাছাকাছি থাকতেন। তিনি এই সব অদ্ভুত শব্দ শুনে ছুটে গির্জায় এলেন। সব দরজা বন্ধ দেখে, তিনি তার গা তালার ফুটো দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে লাগলেন। তিনি কি দেখলেন?
ফ্রান্সিস মাটিতে মাথা আর শূন্যে পা রেখে দাড়িয়ে আছে। পা দুটো দিয়ে সে ঘুর পাক খাচ্ছে আর দুটো সীসার বল নিয়ে একটার পর একটা ছুঁড়ে যাচ্ছে। উৎফুল্ল ভাবে সে মেরীমাতাকে বলছে, মেরি মাতা, এই খেলাটা আপনার কেমন লাগছে? ঠিক সেই সময়ে, ভারী সীসার বলের একটা, তার পা থেকে সরে গিয়ে কপালে এসে সজোরে ধাক্কা মারলো। ফ্রান্সিস অজ্ঞান হয়ে মাটির উপরে পড়ে রইলো।
সন্ন্যাসী, গা-তালার ফাঁক দিয়ে সমস্ত দেখলেন; তিনি কি করবেন কিছু বুঝতে পারলেন না। ঠিক তখনই তিনি ভেতরে একটা আলোর ঝলক দেখতে পেলেন। সেই আলো থেকে মেরী মাতা আবির্ভূতা হলেন ও বেদী থেকে নেমে এলেন। তিনি ফ্রান্সিসের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলেন ও তার রেশমী পোষাকের কোণ দিয়ে তার কপালের ঘাম মুছিয়ে দিলেন। সন্ন্যাসী দরজা খুলে ঢুকতে ঢুকতে কুমারী মেরী অন্তর্ধান হলেন। সন্ন্যাসী বললেন, চিত্ত যার শুদ্ধ, সে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করে।
প্রশ্ন:
- ফ্রান্সিসের কাছে থেকে সন্ন্যাসী কি শিক্ষা পেলেন?
- চিত্তশুদ্ধি কাকে বলে, তোমার নিজের ভাষায় লেখো।
- ধরো, তোমার ঈশ্বরকে খুশি করার ইচ্ছা হয়েছে।তুমি কি করবে?