তড়িঘড়ি করলেই সব কিছু পণ্ড

Print Friendly, PDF & Email
তড়িঘড়ি করলেই সব কিছু পণ্ড

Hot food burnt Shivaji's hand

এক সময়ে শিবাজী এক দুর্গ থেকে অন্য দুর্গে যাওয়ার পথে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি পর্বতচূড়ার উপর থেকে চারদিক তাকিয়ে দেখলেন, কিন্তু কাছাকাছি কোন গ্রাম দেখতে পেলেন না। রাত ক্রমশঃই এগিয়ে আসছিলো। পাহাড় থেকে তিনি যখন নামতে আরম্ভ করলেন, দূরে একটা অস্পষ্ট আলো দেখতে পেলেন। সেইদিকে লক্ষ্য রেখে ক্রমশঃ তিনি এগিয়ে গিয়ে একটা কুটিরে পৌঁছালেন।

কুটিরের ভেতরে একজন বৃদ্ধা তাকে মারাঠা সৈন্য মনে করে অভ্যর্থনা জানালেন। তাকে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত দেখে বৃদ্ধা হাত মুখ ধোয়ার জন্যে গরম জল দিয়ে, বিশ্রামের জন্যে একটা মাদুর বিছিয়ে দিলেন। শিবাজী ভালোমত বিশ্রাম করে নিলে, ক্ষুদের গরম একথালা খিচুড়ি, তাকে খেতে দিলেন। শিবাজী এত ক্ষুধার্ত ছিলেন যে, একসঙ্গে অনেকখানি খিচুড়ি মুখে তোলার জন্যে, না ভেবেচিন্তেই তার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। গরম খাবারে তার হাত পুড়ে গেল আর সঙ্গে সঙ্গেই হাত নাড়ার ফলে কিছু খাবার মাটিতে পড়ে নষ্ট হলো।

এই কথা শুনে শিবাজী যুগপৎ আশ্চর্য ও কৌতুক বোধ করলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন, আপনি আমার প্রভু শিবাজীকে অধৈর্য আর হঠকারী বলছেন?”

Woman advising to eat food near the edge of the plate

বৃদ্ধা সরল মনে বোঝাতে বসলেন, “আচ্ছা, তুমি দেখ বাবা, শিবাজী তার শত্রুদের ছোট ছোট দুর্গগুলোতে নজর না দিয়ে, শুধু বড় দুর্গ দখল করার চেষ্টা করছেন। ঠিক তোমার যেমন খেতে বসে অধৈর্য হবার দারুণ হাত পুড়ে গেল, খাবার কিছু নষ্ট হলো, শিবাজীরও শত্রু দমন করার জন্যে অধৈর্য হয়ে পড়ায় উদ্বেগ ভোগ করতে হচ্ছে, সেই সঙ্গে তাঁর সাহসী সেনাবাহিনীর কত লোকবল বৃথা ক্ষয় হচ্ছে। তোমার উচিত ছিল, প্রথমে থালার কানার কাছাকাছি খাবারের উপর দিয়ে ঠাণ্ডা যে পরদা পড়েছে, সেটাকে খেয়ে আস্তে আস্তে মাঝখানে হাত দেওয়া। তেমনি, শিবাজীরও শুরুতে ছোট ছোট দুর্গ গুলো দখল করে নিয়ে নিজের অবস্থাকে শক্ত করে নিতে হবে। এ তার বড় দুর্গ জয়ের পক্ষে সহায়ক হতো আর এত সৈন্যও বিনষ্ট হতো না।”

বৃদ্ধার কথার ভেতরে যে জ্ঞান ছিলো, শিবাজী তা হৃদয়ংগম করলেন। কোন কিছু করতে হলে যে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়, তা তিনি উপলব্ধি করলেন। “ভালো করে চিন্তা কর, ভালোভাবে পরিকল্পনা করার পর ধাপে ধাপে এগিয়ে যাও”—এই তার নীতি হলো। আর এইভাবেই শিবাজী তাঁর বিশাল মারাঠা রাজ্য গঠনের স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেন।

প্রশ্নঃ:
  1. তাড়াহুড়া করে কাজ পন্ড হয় কেন?
  2. বৃদ্ধা শিবাজীর সমালোচনা করলে তিনি রাগ করলেন না কেন?
  3. তাড়াহুড়োতে কাজ যে পণ্ড হয়ে যায়, সে সম্বন্ধে তোমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা কিংবা তোমার জানা অপর কারো অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।