আন্তরিক প্রার্থনা
আন্তরিক প্রার্থনা
ব্যস্তসমস্ত জগত থেকে দূরে, অনেক দূরে এক নির্জন দ্বীপে তিন জন খ্রীষ্টান সন্ত থাকতেন। তারা ঈশ্বর চিন্তা, ঈশ্বর বিষয়ক আলোচনা ও মহিমা কীর্তন করে তাদের সময়ের বেশিরভাগ কাটিয়ে দিলেন। তারা বাইবেল থেকে পরম পিতা, ঈশ্বরপুত্র ও আত্মারূপী ঈশ্বর সম্বন্ধে পড়তে ভালবাসতেন।
তাদের সরল হৃদয়ে একটি মাত্র প্রার্থনা তারা ঈশ্বরকে নিবেদন করতেন, “হে প্রভু, আমরাও তিন, আপনিও তিন। আমাদের কৃপা করুন। এই প্রার্থনায় ঈশ্বর অত্যন্ত প্রীত হতেন! তিনি তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর দেখাশোনা করতেন ও সবরকম আপদ বিপদ থেকে রক্ষা করতেন। তারা ক্ষুধার্ত হলেই তাদের খাবার জন্যে টেবিলের উপরে দুধ, ফল পেয়ে যেতেন। প্রখর সূর্যতাপে কিংবা বৃষ্টিতে তারা সব সময়েই তাদের মাথার উপরে আচ্ছাদন পেয়ে যেতেন, কারণ তারা কাউকে ঘৃণা করতেন না, সকলকে ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব বলে ভালোবাসতেন।
একদিন, সমুদ্র তীরে এক শহরের একজন বিশপ এই সন্ত ও তাদের সরল প্রার্থনার কথা শুনলেন। বিশপ মনে মনে বললেন, “ওরা নিশ্চয়ই বাইবেলের কথা ঠিকমতো বুঝতে পারেনি। ঈশ্বরকে প্রত্যহ যে প্রার্থনা করতে হবে, তা, আমি গিয়ে ওদের শিখিয়ে দিয়ে আসবো।
বিশপ নৌকো করে দ্বীপে এলেন। তিনি সন্তদের বললেন যে, ওদের প্রার্থনা, ঈশ্বরের ভালবাসা আর কৃপালাভের পক্ষে খুবই ছোট আর সহজ সরল। তিনি সকাল-সন্ধ্যায় প্রত্যহ বলার জন্যে অনেক প্রার্থনা ও সেই সঙ্গে এক দীর্ঘ প্রার্থনাও শেখালেন। অন্ধকার হয়ে আসছে দেখে, বিশপ তাড়াতাড়ি তার নৌকায় উঠে দ্বীপ ছেড়ে শহরে দিকে রওনা হলেন।
নৌকোটা বেশ খানিক দূর এগিয়ে গিয়েছে, বিশপ দেখলেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন জলের উপরে দিয়ে একটা উজ্জ্বল জলের তরঙ্গ দ্বীপের দিক থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি যখন ঢেউয়ের ঝলকানো সারির দিকে তাকালেন, সেখানে এক আশ্চর্য ঘটনা দেখতে পেলেন। সন্ত তিনজনে হাত ধরাধরি করে, উজ্জ্বল ঢেউয়ের উপর দিয়ে ছুটতে ছুটতে তার দিকে এগিয়ে আসছেন।তাঁরা নৌকার কাছাকাছি এসে চেঁচিয়ে উঠলেন, “আপনি যে বড় প্রার্থনা শিখিয়েছেন, তার কয়েকটা লাইন ভুলে গেছি। ওটা আর একবার আমাদের বলে দিন।”
বিশপ যা দেখলেন তাতে স্তম্ভিত হয়ে রইলেন। তিনি, একমাত্র প্রভু যিশু সাগর-ঢেউয়ের উপর দিয়ে হাঁটতে পারেন শুনেছেন। এখন, নিজের চোখের সামনে দিয়ে, সন্তদের সেই কাজ করতে দেখলেন। তিনি নিজের মনে বলে উঠলেন, “এই সন্তরা নিশ্চয়ই পবিত্র আত্মা। ঈশ্বর এদের আশীর্বাদ করে, নিজের করে নিয়েছেন। আমি এদের কি শেখাবো?
এই ভেবে বিশপ মাথা নাড়লেন ও বিনীত ভাবে বললেন, প্রিয় ভাই সব, তোমাদের নিজেদের ছোট প্রার্থনা তোমরা করে যাও। ঈশ্বর তোমাদের উপর তুষ্ট রয়েছেন।” বিশপ সন্তদের কাছ থেকে শিক্ষা পেলেন, যে, প্রকৃত প্রার্থনা মুখ থেকে আসে না, তা আসে অন্তরের অন্তস্থল থেকে।
প্রশ্নঃ
- বিশপের কি ভুল হয়েছে?
- তিনি সন্তদের কাছে কি শিক্ষা পেলেন?
- তুমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে যে প্রার্থনা প্রায়ই কর, সেটি বল। একে কি তুমি প্রকৃত প্রার্থনা বলতে পারে? ব্যাখ্যা কর।