মানুষ সচেষ্ট হলে দৈবী সহায় মেলে

Print Friendly, PDF & Email
মানুষ সচেষ্ট হলে দৈবী সহায় মেলে

জনৈক সাধু কয়েকজন গ্রামবাসীর কাছে ঈশ্বর ও তার কৃপা সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন। “ঈশ্বর দয়ালু; ঈশ্বর প্রেমস্বরূপ; ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। যখন কোন বিপদে পড়বে, তোমার শক্তি সামর্থ্যে কুলাবেনা, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাবে। তিনি নিশ্চিত তোমায় সাহায্য করবেন। শ্রোতাদের মধ্যে রামচরণ নামে একজন গাড়োয়ান ছিল, সে হনুমানের খুব ভক্ত ছিলেন। ঈশ্বর তার ভক্তদের সাহায্য করবেন জেনে সে দারুণ খুশি হলো।

Ramcharan's praying Hanuman to push his cart

এক বাদলা দিনে রামচরণ তার চালের বস্তা সমেত গরুর গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিছুদূর যেতেই গাড়ীর দুটো চাকা কাদার মধ্যে বসে গেল। রামচরণ সাধুর কথা মনে করলো। সে দু হাত জোড় করে, চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করতে লাগলো, “হে হনুমানজী, অনুগ্রহ করে এসে কাদা থেকে আমার গাড়িতে তুলে দিয়ে যান।” সে সমানে প্রার্থনা করে যেতে লাগলো, কিন্তু, ঈশ্বর তার সামনে এলেন না। হতাশ হয়ে, সে এমন রেগে গেল যে, হনুমানকে গালমন্দ করতে লাগলো।

Saint advicing him to try with his full energy first

এরপরে তার রাগটা ঘুরে গেল সাধুর দিকে। সে সটান মন্দিরে সাধুর কাছে চলে এলো, বললো, “মহারাজ, আপনি আমাদের সবাইকে বোকা বানিয়েছেন। ঈশ্বর কখনো মানুষকে সাহায্য করে না। আমার গরুর গাড়ি কাদায় বসে গিয়েছে। আমি বারবার ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলাম, কিছুই তো হলো না।” সে রাগত ভাবে যা যা ঘটেছিলো সব বলে গেল।” রামচরণের সমস্ত কথা সাধু ধৈর্য ধরে শুনলেন। তারপর সহানুভূতিতে, সস্নেহে তার পিঠ চাপড়িয়ে বললেন, “বৎস, আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি কি ভাবে হতাশ হয়েছে। কিন্তু আমি কি বলিনি যে, তুমি তোমার সমস্ত শক্তি সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করলে তবেই ঈশ্বর সাহায্য করতে আসবেন? তুমি যদি পাতকুয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বল, হে পাতকুয়া, আমি তৃষ্ণার্ত, আমাকে একটু জল দাও, তাহলে কি পাবে? কিছুই পাবে না। কুয়ার মধ্যে একটা পাত্র নামিয়ে দিয়ে তাকে টেনে তুলতে হবে; তবেই কুয়া থেকে জল পাবে। ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও তাই। তিনি তোমাকে যে শক্তি দিয়েছেন তাকে কাজে লাগাও, তারপরে তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর।”

Ramacharan feels help while pushing the cart

রামচরণ তার গাড়ির কাছে ফিরে গেল। গাড়ির একটা চাকার নীচে তার কাঁধ লাগিয়ে, বলদ দুটোকে গাড়ী টেনে তোলার জন্য ঠেলতে লাগলো, আর নিজেও সমস্ত শক্তি দিয়ে চাকায় ঠেলা দিতে লাগলো। সেই মুহূর্তে তার মনে হলো, গাড়ির আর একটা চাকা কে যেন আরো জোরে ঠেলা দিচ্ছে। রামচরণ ভাবতে লাগলো, “কে এই চাকা ঠেলছে? নিশ্চয়ই যাকে আমি প্রার্থনা করেছিলাম, সেই হনুমানজী করছেন। সে সঙ্গে সঙ্গে তার চাকাটাকে আর একটা ঠেলা দিলো, আর অমনিই, কাদা থেকে চাকাগুলো বার হয়ে এলো, বলদ দুটোও গাড়ি টেনে নিয়ে খুশিতে ছুটতে শুরু করলো। তাদের গলায় বাধা ঘণ্টা বাজতে লাগলো, আর রামচরণ হনুমানজীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্তুতি গান গাইতে লাগলো।

এরপর থেকে রামচরণ, তার বন্ধুদের বিপদ দেখা দিলেই বলে, “নিজের বুদ্ধি আর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, তারপর, ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই ঈশ্বর এসে তোমাকে সাহায্য করবেন। স্বাবলম্বী লোকদের ঈশ্বর সবসময়ে সাহায্য করেন।”

প্রশ্নঃ:
  1. রামচরণ প্রথমে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে তিনি কেন সাহায্য করতে আসেননি?
  2. ঈশ্বর তাকে কখন সাহায্য করলেন?
  3. তুমি কখন ঈশ্বরের সাহায্য চাইবে? তা পাবার জন্য তুমি কি করবে?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: