সংকল্পে অবিচল কর্ণ
সংকল্পে অবিচল কর্ণ
মহাভারতের মহান চরিত্রগুলোর ভিতর অন্যতম হল অঙ্গ রাজ কর্ণ। কর্ণের চরিত্র ছিল। খুবই মহান। নির্লোভী ও দাতা হিসেবে তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন।
তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি কোনও প্রার্থীকে ফেরাবেন না। যে যা চাইবে তাই তিনি দেবেন। অর্জুন ছিলেন কুন্তীর গর্ভে ইন্দ্রের পুত্র। তাই ইন্দ্র অর্জুনকে রক্ষা করতে চাইলেন। সূর্যের পুত্র কর্ণ কবচ ও কুণ্ডল নিয়ে জন্মেছিলেন। এই কবচ ও কুণ্ডল গায়ে থাকলে কেউই তার কোনও ক্ষতি করতে পারত না। তাই ইন্দ্র চাইলেন কবচ ও কুণ্ডল চেয়ে নিয়ে কর্ণকে দুর্বল করে দিতে। ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ইন্দ্র কর্ণের কাছে ভিক্ষা চাইতে এলেন। কিন্তু আগের দিন রাত্রে সূর্য কর্ণকে ইন্দ্রের কুমতলবের কথা বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন। কর্ণ সব বুঝতে পেরেও ব্রাহ্মণকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে মিনতি জানালেন, আমি জানি আপনি ইন্দ্র। আপনি কেন এসেছেন তাও আমি জানি। কিন্তু আমি আমার সত্য রক্ষা করব, প্রার্থীকে কখনই ফিরিয়ে দেব না। বলুন আপনি কি চান।”
ইন্দ্র আর কথা না বাড়িয়ে কর্ণের কাছে তার কবচ-কুণ্ডল চাইলেন। কর্ণ তরবারি দিয়ে কুণ্ডল ও কবচ কেটে ইন্দ্রের হাতে দিয়ে দিলেন। এইভাবে কর্ণ নিজের হাতে তার আর্দ্ধেক শক্তি ও সামর্থ্য দান করে দিলেন। ইন্দ্র তাকে আশীর্বাদ করে নিজের অস্ত্র শক্তি দান করলেন, তবে একবার মাত্র “শক্তি”-অস্ত্র কর্ণ ব্যবহার করতে পারবেন, তারপরেই তা ইন্দ্রের কাছে ফিরে যাবে। কর্ণের কোনও লোভ ছিল না। দুর্যোধন তাকে অঙ্গ দেশের রাজ্য দান করে তাঁকে রাজার মর্যাদা দিয়েছিলেন বলে তিনি দুর্যোধনকে বন্ধু বলে গ্রহণ করেছিলেন।
কোনও প্রলোভনেই তিনি বন্ধুকে ত্যাগ করেন নি। ধৃতরাষ্ট্রের রাজসভায় শান্তির দৌত্য বৃথা হবার পর কৃষ্ণ কর্ণের রাজসভায় গেলেন। কর্ণ তাকে অতি সমাদরে গ্রহণ করলেন এবং এই সৌভাগ্য ও কৃপা বর্ষণের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। কৃষ্ণ তাকে বললেন যে, তুমি আসলে সূর্যের পুত্র, কুন্তীর গর্ভে তোমার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের আগে পুত্র হয়েছিল বলে কুন্তী লোক লজ্জার ভয়ে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সারথি অধিরত তোমাকে পেয়ে বাড়ীতে নিয়ে পালন করেছিলেন। তুমি পাণ্ডবদের সবচেয়ে বড় ভাই। তাই তুমি পাণ্ডব পক্ষে যোগ দিলে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর তুমিই রাজা হবে এবং পাণ্ডবরা তোমাকে সমাদরে জ্যেষ্ঠ ভাইয়ের সম্মান দেবে।
উত্তরে কর্ণ জানালেন যে, স্বয়ং ভগবান পাণ্ডবদের পক্ষে আছেন। তাই তিনি জানেন যে পাণ্ডবরাই যুদ্ধে জয়ী হবে। কিন্তু তা হলেও রাজত্বের লোভে উপকারী বন্ধুকে ত্যাগ তিনি করতে পারেন না। তিনি জানেন যে এই যুদ্ধে তার মৃত্যু হবে, তবুও বন্ধুর সঙ্গেই থাকবেন। রাজত্বের লোভেও কর্ণ বন্ধুকে ত্যাগ করলেন না।
কিছুদিন পর মাতা কুন্তীও কর্ণের সঙ্গে দেখা করলেন। পাণ্ডব পক্ষে যোগ দেবার জন্যে তিনি নিজ পুত্র কর্ণকে অনুরোধ জানালেন। পুত্রের শোক যেন তাঁকে সহ্য করতে না হয়। কর্ণ কিন্তু বন্ধুকে ছাড়তে রাজী হলেন না, তবে কথা দিলেন যে অর্জুন ছাড়া আর কোনও পাণ্ডবকে তিনি মারবেন না। তাহলে যুদ্ধের পর হয় অর্জুন থাকবে না হয় তিনি থাকবেন। তাহলে কুন্তীর পাঁচ ছেলেই থাকবে, কমবে না। যুদ্ধের পর বেঁচে থাকলে তিনি কুন্তীর কাছে যাবেন বললেন। এইভাবে কর্ণ সবসময় তার মহান চরিত্রকে তুলে ধরেছেন।
প্রশ্নঃ
- ইন্দ্র তাঁর পুত্র অর্জুনকে কিভাবে রক্ষা করতে চাইলেন?
- কৃষ্ণ কিভাবে কর্ণকে প্রলুব্ধ করতে চাইলেন?
- কর্ণের চরত্রে কি কি মহৎ গুণ ছিল?