জীবের প্রতি দয়া (১)

Print Friendly, PDF & Email
জীবের প্রতি দয়া (১)

ছোট বড় যা কিছু হোক না,
তাকে মনে প্রাণে ভালবাসে যে বা,
শ্রেষ্ঠ তার ভজন পূজন।
কেন জানো? আমাদের যে প্রিয় ঈশ্বর,বাসিছেন ভালো,
তাঁরই সৃষ্ট সর্বজীব, ভালবাসা সর্বজীবে তাঁর।

সমস্ত মহৎ লোক জীবের উপরে দয়ালু ও সহনশীল হয়ে থাকেন। দক্ষিণ ভারতের মহান সাধু মহর্ষি রমণ ও ব্রিটিশ মহাবৈজ্ঞানিক স্যার আইজাক নিউটন এই দুজন মহাত্মার উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। রমণ মহর্ষির প্রেম শুধু যে তার কাছের ও দূরের থেকে ভক্তদের টেনে নিয়ে এসেছে তাই নয়, পশু-পাখিদেরও টেনে এনেছে। তার আশ্ৰম কুকুর, গরু, বাঁদর, কাঠবেড়ালী, ময়ূর ও আরো অনেক পশু পাখির বাসস্থল হয়েছিল। তার দর্শনের ও আশীর্বাদের জন্য উপস্থিত মানুষকে তিনি যেভাবে দেখাশোনা করতেন ও ভালবাসতেন, তাদের দিকেও ঠিক সেইভাবে লক্ষ্য রাখতেন। কোন প্রাণী সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গেলে তিনি মানুষ সম্বন্ধে যে ভাবে বলা হয় ঠিক সেইভাবে বলতেন। কুকুরদের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে তিনি স্নেহভরে জিজ্ঞাসা করতেন, “ছেলেদের আজ খাবার দেওয়া হয়েছে তো?” বস্তুতঃ, আশ্রমে এই নিয়মটাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো যে, খাওয়ার সময় হোলে কুকুরকে প্রথমে খেতে দিতে হবে, তারপরে ভিক্ষুকদের, সব শেষে ভক্তদের।

একদিন এক বাঁদর তার বাচ্চাকে নিয়ে মহর্ষির দিকে এগিয়ে আসছিল। প্রার্থনাকক্ষের শাস্তি পাছে বিঘ্নিত হয় সে কথা ভেবে, ভক্তেরা বাঁদরকে তাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলে মহর্ষি তখন বললেন, “ওকে আসতে দাও, বাঁধা দিও না। তোমাদের মতনই ও ওর মেয়েকে আমায় দেখিয়ে আশীর্বাদ নেবার জন্য আসতে চাইছে।”

আশ্রমের ভিতরে একটা গরু ছিল। মহর্ষি তার নাম দিয়েছিলেন লক্ষ্মী। ভক্ত সমাবেশের মধ্যেও সে কারো দিকে দৃকপাত না করে, সোজা মহর্ষির কাছে চলে যেত। সে নিশ্চিত জানতো, তার জন্যে তিনি কলা বা অন্য কোন না কোন ফল রেখে দিয়েছেন। আশ্রমের প্রত্যেকের কাছে সে প্রিয় ছিল। মহর্ষির জন্মজয়ন্তীতে লক্ষ্মী অন্ততঃপক্ষে তিনটে বাছুরের জন্ম দিয়েছিল। বুড়ো বয়সে লক্ষ্মীর অসুখ করলে, একদিন তার যাবার সময় ঘনিয়ে এলো। সেই মুহূর্তে, মহর্ষি তার কাছে এসে বললেন, “মা, আমি কি তোমার কাছে বসবো?”, তিনি তার পাশে বসে তার মাথাটা কোলের উপর তুলে নিলেন। এর একটু পরেই সে শান্তিতে তার দেহ ত্যাগ করলো। মানুষের যেমনভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়, সে সব কিছু করে তাকে আশ্রমের উঠানে কবর দেওয়া হলো; ওরই কাছাকাছি ছিল এক হরিণ, এক কাক ও এক কুকুরের সমাধি। লক্ষ্মীর সমাধির উপর এক চৌকো পাথর বসিয়ে দেওয়া হলো আর তারই উপরে লক্ষ্মীর এক ছোট প্রতিকৃতি রেখে দেওয়া হলো।

প্রাণীদের উপরে মহর্ষির এই ধরণের দয়া, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল।

প্রশ্নঃ :
  1. মহর্ষি তাঁর দৃষ্টান্ত দেখিয়ে ভক্তদের কি শিক্ষা দিয়েছিলেন?
  2. প্রাণীদের মৃত্যু হলে তাদের সমাধি দেওয়া হতো কেন?
  3. মানুষের প্রাণীর প্রতি ভালবাসার যে কোন অন্য উদাহরণ-তুমি যা পড়েছো বা শুনেছো বা দেখেছে, তার সবিস্তার বর্ণনা লেখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: