কৃষ্ণের দৌত্য
কৃষ্ণের দৌত্য
অনেকেরই ধারণা যে কৃষ্ণ হলেন যুদ্ধপ্রিয়। তিনি অর্জুনকে যুদ্ধ হতে নিবৃত্ত হতে দেন নি, যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাই কৃষ্ণকে যুদ্ধবাজ বলে অনেকের ধারণা। আসলে কৃষ্ণ নিজে যুদ্ধ এড়াতে কৌরবদের রাজসভায় গিয়েছিলেন। শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি পাণ্ডবদের দূত হিসেবে কৌরবদের কাছে যাবার জন্যে স্থির করলেন।
সাত্যকিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি হস্তিনাপুরে উপস্থিত হলেন। তাকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্যে কৌরবরা খুব জাকজমকের ব্যবস্থা করলেন। কৌরবরা তাদের ঐশ্বর্য দেখাতে চাইলেন। স্বয়ং দুর্যোধন ভাইদের নিয়ে হস্তিনাপুরের প্রবেশ পথে কৃষ্ণকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে এলেন। রাজপ্রাসাদে অতিথিশালায় থাকবার জন্যে। দুর্যোধন কৃষ্ণকে অনুরোধ জানালেন। কিন্তু কৃষ্ণ বললেন যে তিনি শত্রুপক্ষের দূত হিসেবে এসেছেন, তাই মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত তিনি দুর্যোধনের আতিথ্য গ্রহণ করতে পারেন না। এই বলে তিনি বিদুরের বাড়ীতে চলে গেলেন। স্বয়ং ভগবানকে নিজের বাড়ীতে পেয়ে বিদুর ত’ আনন্দে আত্মহারা। আশাতীত কুপাতে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করলেন। কৃষ্ণও ভক্তের বাড়ীতে থেকে ভক্তিপূর্ণ আপ্যায়ণে খুবই আনন্দ পেলেন।
অনুপযুক্ত দুষ্ট কৌরবদের কাছে শান্তির প্রস্তাব নিয়ে আসাতে কোনও ফাঁকে জানালেন। উত্তরে কৃষ্ণ বিদুরকে জানালেন যে তিনি প্রত্যেকের অন্তরের কথা জানেন। তাই দুর্যোধন যে কোনও প্রকারের মীমাংসা সূত্র মানতে রাজী হবে না তা জেনেও তিনি এসেছেন কারণ মীমাংসার চেষ্টা ও রক্তক্ষয় বন্ধ করবার চেষ্টা করাটা হল তার কর্তব্য। শেষ চেষ্টা করবার জন্যেই তিনি এসেছেন। এরপর কৃষ্ণ বিশ্রাম নিয়ে ধৃতরাষ্ট্রের রাজসভায় উপস্থিত হলেন। ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, কৃপাচার্য সকলেই তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে উপযুক্ত একটি আসনে বসবার জন্যে অনুরোধ জানালেন। সকল গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসন গ্রহণ করলে তবে তিনি তাঁর আসনে বসবেন বলে কৃষ্ণ জানালেন।
সকলে আসন গ্রহণ করলে পরে কৃষ্ণ তার আগমনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বললেন, “এই সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে আমি ধৃতরাষ্ট্রকে পাণ্ডবদের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার পালন করে তাদের রাজত্ব ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি। পাঁচ ভাইকে পাঁচটি গ্রাম দিয়ে দিলেই এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে।”
ভীষ্ম, দ্রোণ, এরা সকলে কৃষ্ণের কথা সমর্থন করলেও দুর্যোধন কিন্তু জানিয়ে দিল যে রাজত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। একটি সূচের ডগায় যতটা মাটি উঠতে পারে, ততটুকু জায়গাও তিনি ছাড়বেন না। দুর্যোধন জানালেন যে যুদ্ধের জন্যে তিনি প্রস্তুত আছেন।
ধৃতরাষ্ট্র ভিতরে ভিতরে আনন্দ পেলেও বাইরে কৃষ্ণকে সমর্থন করলেন। গান্ধারীও দুর্যোধনকে মীমাংসা করতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু কর্ণ ও শকুনির পরামর্শে দুর্যোধন একচুলও সরে আসতে রাজী হলেন না। কৃষ্ণ তখন বললেন, “আপনারা মনে করবেন না যে পাণ্ডবরা দুর্বল। ভীম ও অর্জুনের বীরত্বের কথা সকলের জানা। শান্তির জন্যে তারা চেষ্টা করছে। কেবলমাত্র মানব জাতির কল্যাণের জন্যে ও রক্তপাত বন্ধ করবার জন্যে। আমি আবার অনুরোধ করছি আমার এই শান্তির প্রচেষ্টায় রাজী হতে।” কিন্তু এতে কোনও কাজ হল না। বরং উল্টে দুর্যোধনরা কৃষ্ণকে বেঁধে রাখতে চাইলেন। এতে কৃষ্ণ একমুহূর্তের জন্যে তাঁর বিশ্বরূপ দর্শন করালেন। এমনকি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকেও দিব্যচক্ষু দিয়ে ঐ বিশ্বরূপ দর্শন করালেন। সকলে ভয় পেয়ে পাথরের মত স্থির হয়ে গেল। কৃষ্ণ সাত্যকি ও বিদূরকে নিয়ে রাজসভা ত্যাগ করলেন। এইভাবে ভগবান অধর্মকে বিনাশ করতে ও ধর্মকে রক্ষা করতে।
প্রশ্নঃ
- কৃষ্ণ কি উদ্দেশ্যে হস্তিনাপুরে এসেছিলেন?
- কৌরবদের কাছ থেকে তিনি কিরূপ অভ্যর্থনা পেলেন?
- কৃষ্ণ কিভাবে দেখালেন যে তিনিই পরমেশ্বর? </li