প্রভু গণেশ – গল্প

Print Friendly, PDF & Email
প্রভু গণেশ – গল্প – বাবার দিব্য ভাষণ থেকে
গণেশের প্রথম স্থান

একদিন পার্বতী ও পরমেশ্বর , গণেশ ও সুব্রমণ্যমের মা ও বাবা তাদের ছেলেদের বুদ্ধির পরীক্ষা নিতে চাইলেন। তারা দুই ছেলেকে ডাকলেন ও তাদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে বললেন দুজনের মধ্যে কে দ্রুতগামী তা দেখার জন্য। বড় ছেলে গণেশ তার স্থান ছেড়ে নড়লেন না। ছোট ছেলে সুব্রমণ্যম তার ময়ূরের পিঠে চেপে পৃথিবী প্রদক্ষিণের উদ্যেশে রওনা হলেন। অনেক চেষ্টার পর সে পৃথিবী প্রদক্ষিণ সম্পূর্ণ করে মাবাবার কাছে পৌঁছনোর জন্য এগিয়ে এলো। দূর থেকে তাকে দেখে ,গণপতি মাবাবার চারদিকে গোল করে প্রদক্ষিণ করে নিজেকে জয়ী বলে ঘোষণা করলো। মা পার্বতী গণপতিকে জিজ্ঞাসা করলেন ,” গণপতি , এই যে তোমার ভাই যে পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে এলো আর তুমি এই তুমি তো এই জায়গা ছেড়ে নড়লে না। তুমি তো কাজটি করার কোনো চেষ্টাই করলে না। তুমি কি করে দাবি করছো যে তুমি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে এসেছো ? কি করে আমি তোমায় বিজয়ী বলে মেনে নেবো?

গণেশ উত্তর দিলো, “মা, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড হল বস্তু ও শক্তির সংমিশ্রণ, মা ও বাবার মিলিত রূপ। যখন আমি তোমাদের প্রদক্ষিণ করলাম, তখন আমার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা হয়ে গেলো কারণ তোমরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মা ও বাবা । এমন কোনো স্থান নেই যেখানে তোমাদের দুজনের উপস্থিতি নেই। আমি দেখতে পাই তোমরা সর্বত্র বিরাজমান।তোমাদের দুজনকে প্রদক্ষিণ করে আমি দাবি করতেই পারি যে আমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণ করেছি।” যে মূহুর্তে সে এই কথাগুলো বললো, ঈশ্বর (শিব) তার ছেলের অসম্ভব বুদ্ধিমত্তায় বিষ্মিত হয়ে গেলেন। তার দৈব পিতামাতার বিষয়ে পরম সত্যকে সে চিনতে পেরেছে। ঈশ্বর বললেন, “বিনায়ক, প্রত্যেকের জন্যই তুমি একজন আদর্শ সন্তান। আমাকে পূজো করার আগে সবচেয়ে প্রথমে পৃথিবীতে তোমার পূজো হবে । আমি তোমার মত বুদ্ধিমান নই। আমরা তোমার মা বাবা, কিন্তু আমরা তোমার চেয়ে বুদ্ধিমান নই। “ঈশ্বর ঘোষণা করলেন,” আমার অনেক গুণ আছে কিন্তু তোমার মত বুদ্ধিমত্তা নেই। তাই, আমায় পূজো নিবেদনের আগে সব মানুষ তোমায় পূজো করুক।এই আশীর্বাদ আমি তোমায় প্রদান করলাম।”-সাইবাবা

বিনায়ককে ফুল ও সবুজ ঘাসের নৈবেদ্য

“বিনায়ক খুব সাধারণ মূল্যহীন ফুল (জিল্লেদি ফুল) নৈবেদ্য রূপে পেয়ে খুশি হন । এরকম বলা হয় যে এই ফুল কেউ খেলে সে পাগল হয়ে যায়। এই ফুল বিনায়ককে নিবেদন করা হয়। সবুজ ঘাসের নৈবেদ্য দিয়েও বিনায়কের পূজো করা হয়।” -সাইবাবা

বিনায়ককে ঘাস নিবেদনের গল্প

কোনো এক পৌরাণিক গল্পে আছে যে একদিন শিব ও পার্বতী দাবা খেলছিলেন। যে কোনো খেলায় অবশ্যই একজন মধ্যস্থতাকারী থাকতে হবে যে ঘোষণা করবে কে বিজয়ী হল । শিব ও পার্বতী দুজনেই নন্দীকে ( ঈশ্বরের ষাঢ়) আম্পায়ার হিসেবে মেনে নিলেন। নন্দী শিবের প্রিয় যেহেতু সে শিবের বাহন যদিও শিব খেলায় হেরে গিয়েছিলেন, নন্দী তাকে বিজয়ী ঘোষনা করলো। এরকম বলা হয় যে শিবের প্রতি নন্দীর এহেন পক্ষপাতে পার্বতী নন্দীর ওপর খুব বিরক্ত হয়েছিলেন ও তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে কোনো দূরারোগ্য রোগে তার মৃত্যু হবে। তখন নন্দী পার্বতীর পায়ে পরে ক্ষমা প্রার্থনা করলো, “মা, আমায় ক্ষমা করুন। যিনি আমার প্রভু, তার প্রতি কি আমি এটুকু কৃতজ্ঞতাও কি দেখতে পারি না! আমার প্রভু খেলায় হেরে গেছে এটা ঘোষণা করা কি আমার পক্ষে অপমানজনক নয়? কোন সন্দেহ নেই যে তার সম্মান রক্ষার্থে আমি মিথ্যে বলেছি। তাবলে এই সামান্য অপরাধের জন্য এত কঠিন শান্তি আমি পাবো? “নন্দী এভাবেই ক্ষমা প্রার্থনা করলো। পার্বতী নন্দীকে ক্ষমা করলেন এবং তার অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্তের জন্য একটি উপায় অবলম্বন করতে বললেন। তিনি তাকে বলেন,” ভাদ্র মাসের চতুর্থ দিনে আমার ছেলের জন্মদিন উদযাপন করা হয়।

সেইদিন তোমায় আমার ছেলেকে সেই জিনিস নিবেদন করতে হবে যা তোমার সবচেয়ে প্রিয় বা তোমার কাছে সবচেয়ে সুস্বাদু (সবুজ ঘাস)। “এর অর্থ হল একজন তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে তখনই যখন সে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু বা যা তাকে সবচেয়ে আনন্দ দেয় সেই বস্তু ঈশ্বরকে নিবেদন করে। নন্দীর কাছে সবচেয়ে উপভোগ্য ও সুস্বাদু হল সবুজ ঘাস।” পার্বতীর নির্দেশঅনুযায়ী নন্দী সবুজ ঘাস নিবেদন করে গণপতির পুজো করেছিলো । তারপর নন্দী তার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলো।

তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হল, এবং পার্বতীর করুণায় তার পাপমুক্তি ঘটলো।” সাইবাবা

গল্পটির প্রতীকী অর্থ

এই ঘটনাটি সেই অনুশীলনেরই ভিত্তি যেই অনুশীলনের প্রস্তাব দেওয়া হয় গয়া, বেনারস ও অন্যান্য স্থানের তীর্থযাত্রীদের।

প্রস্তাবটি হল তাদের ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করা উচিত সেই জিনিসটি যা তারা সবচেয়ে ভালোবাসে। এর অর্থ হল তারা ত্যাগ করবে সেই জিনিসটি যেটি তারা সবচেয়ে ভালোবাসে, সেটা নয় যেটা তারা ভালোবাসেনা। সেটা ফল তরকারি যা কিছু হতে পারে তবে ঈশ্বরের কাছে নৈবেদ্য হিসেবে যা তুমি ত্যাগ করবে বলে বেছে নেবে তা যেন তোমার সবচেয়ে প্রিয় হয়। তার অর্থ হল তুমি পরবর্তী কালে সেই তরকারি বা ফল আর গ্রহণ করতে বা খেতে পারবেনা। গঙ্গা যমুনায় পূণ্যস্নানের জন্য বেনারস, প্রয়াগ ও অন্যান্য তীর্থস্থানগামী তীর্থযাত্রীদের মধ্যে এই অনুশীলন প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। লোকেদের উচিত যা সে সবচেয়ে পছন্দ করে ও উপভোগ করে তা ত্যাগ করা ও তা শ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য হিসেবে ঈশ্বরকে নিবেদন করা। কিন্তু তারা নিবেদন করে সেটা যেটা তারা পছন্দ করে না। প্রভু যিনি হৃদয়ে বসে আছেন তিনি ঘোষণা করেন, “তবে তাই হোক।” যেহেতু তুমি তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস নিবেদন করোনি, যা সবচেয়ে অপ্রিয়,তাই নিবেদন করেছো, সেহেতু ঈশ্বরও তোমাকে তাই দেবেন যা তুমি সবচেয়ে অপছন্দ করো। ঈশ্বরের প্রতি এধরনের দ্বিধাগ্রস্ত নিবেদনের ফলস্বরূপ তুমি স্বাস্থ্যের পরিবর্তে রোগব্যাধি পাবে। তুমি যদি ঈশ্বরকে ভালো কিছু দাও, যা তোমার জন্য ভালো তা কি ঈশ্বর তোমায় দেবেন না।”- সাইবাবা

যা তোমাকে আনন্দ দেয় তাই গণেশকে উৎসর্গ কর

“ঈশ্বরকে সেই জিনিসই নিবেদন করা উচিত যা পেলে ঈশ্বর খুশি হন। এই নির্দেশই পার্বতী নন্দীশ্বরকে দিয়েছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন, “আমার ছেলেকে এমন কিছু উৎসর্গ করো যা তাকে খুশি করবে এবং যা তোমার সবচেয়ে প্রিয়।” বিনায়ক উৎসবের পরিকল্পনা করা হয় সেই সব আনন্দদায়ক জিনিসের নৈবেদ্য যা গণেশকে খুশি করে, সেই নৈবেদ্যকে সম্মানিত করার জন্যই ।” -সাইবাবা

গণেশ চতুর্থীতে গণেশকে তোমাদের কি নিবেদন করা উচিত

“বিনায়ক চতুর্থীর এই দিনে কি তোমাদের বিনায়ককে নিবেদন করতেই হবে ? আজকাল মানুষেরা অনেক টাকা খরচ করে নানা রকম ফল ও উপকরণ গণেশকে নিবেদন করে । এই ধরনের নিবেদন ধর্মানুষ্ঠানের আচার মাত্র। অবশেষে মানুষেরা নিজেরাই এসব গ্রহণ করে। এই ধরনের নৈবেদ্য প্রদান করে কোনো মঙ্গলই সাধিত হয় না। পত্রম , পুষ্পম, ফলম, তোয়ম – এগুলো হল সেই চারটে জিনিস যা আমাদের ঈশ্বরকে নিবেদন করা উচিত। এখানে পত্রম(পাতা) মানে শরীর। এই শরীরের যেকোনো সময় বিনাশ ঘটবে। সুতরাং শরীরের ওপর আসক্তি বারিয় তুলো না, পরিবর্তে তা ঈশ্বরকে নিবেদন করো। পুষ্প বা ফুল মানে হৃদয়, ফুল যা কখনও শুষ্ক হবে না। মনকে তুলনা করা হয় ফলম বা ফলের সাথে এবং তোয়ম ( জল) বলতে বোঝায় আনন্দাশ্রু। এইসব কিছুই ঈশ্বরকে নিবেদন করা উচিত। এই নৈবেদ্যই ঈশ্বর তোমাদের কাছ থেকে আশা করেন।”
-সাইবাবা

বিশেষ নৈবেদ্যর গুরুত্ব

“এমনকি যে নৈবেদ্য গণেশকে নিবেদন করা হয় তার একটা গভীর তাৎপর্য রয়েছে কারণ এটা তৈরি করা হয় ছোলার ছাতু এবং গুড় বা গোলমরিচ দিয়ে এবং ময়দার গোলা দিয়ে ওই পুর ঢাকা হয় এবং তারপর তা তেল ছাড়া ভাপে রান্না করা হয়। আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি অনুসারে এটা স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার বলে মনে করা হয়।আধুনিক চিকিৎসকেরাও এই ভাপে রান্না করা ইডলির (চালের কেক) গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন এবং এই খাদ্যই রোগীদের অপারেশনের পরবর্তী কালে গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন যেহেতু তা সহজপাচ্য। গুড়ও গ্যাসের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রন করে এবং এই ধরনের খাদ্য চোখের সমস্যা ও গ্যাসট্রিকের সমস্যা প্রতিহত করে।

প্রাচীন ঐতিহ্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে, এই সকল উৎসবে ভালো স্বাস্থ্যের ওপর ভীষণ গুরুত্ব দেওয়া হত কারণ সুস্থ মন নিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় এগিয়ে যাবার এটাই পূর্বশর্ত। মনুষ্য জীবনের চারটি লক্ষ্য, ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ, আয়ত্ত বা অর্জন করতে গেলে, একজনের প্রথমত একটি সুস্থ শরীর থাকা উচিত। যদি তুমি সৎ পথে অর্থ উপার্জন করতে চাও এবং মোক্ষ লাভের আকাঙ্ক্ষা করো, তোমার অবশ্যই একটা সুস্থ শরীর থাকা উচিত।”- সাইবাবা

এটা দেখা গেছে যে তেলহীন খাদ্য সুপাচ্য। তিল আমাদের শরীরে কফ ও শ্লেষ্মার, পিত্ত, বায়ুর কুপ্রভাবকে কমিয়ে দেয়। এই খাদ্যে গুড় খুব উপকারী ও তা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়। এই সব উপকরণই রাখা হয় স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনের জন্য এবং ঈশ্বরকে প্রসন্ন করার জন্য নয়। এই সব খাদ্য সামগ্রী থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তা দীর্ঘ জীবনের সহায়ক । -সাইবাবা

http://www.ssso.net/ganesh/gan1.htm

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।