মা হলেন দেবতা
মা হলেন দেবতা
বেলা চারটে। মেঘে আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে। এক পশলা বৃষ্টি রাস্তা ভিজিয়ে দিয়েছে। স্কুলের ঘণ্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াতাড়ি বাড়ী ফেরার জন্যে স্কুলের ফটক দিয়ে ছেলের দল ছুটে বেরিয়ে আসতে লাগলো। স্কুলের ফটকের সামনে একজন বৃদ্ধা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে তার দুর্বল, জীর্ণ দেহ ঠান্ডায় কাঁপছিল : একজন কারো সাহায্য ছাড়া পিছল রাস্তায় হেঁটে যেতে সাহস করছিলেন না। কিন্তু পথচারীদের মধ্যে কেউই তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। স্কুলের অনেক ছেলে সেখানে ছিল, কিন্তু, তারা তার দিকে নজর না দিয়ে চলে যাচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত মোহন এলো, তার স্বাস্থ্য দেখেই বোঝা যায় যে সে একজন ভাল খেলোয়াড়। স্কুলের ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন সে। স্কুলের দরজা থেকে বেরিয়েই সে অসহায় বৃদ্ধাকে দেখতে পেলো। তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মোহন খুব চিন্তিত ও বিষন্ন হল। তার বন্ধুরা যে খেলার মাঠে যাওয়ার জন্যে তাকে চেঁচিয়ে ডাকছিল তা পর্যন্ত তার কানে গেল না। সে আস্তে আস্তে বৃদ্ধার দিকে এগিয়ে মিষ্টি কোমল স্বরে বলল, “মা, আপনি ঠাণ্ডায় কাঁপছেন, শরীর দুর্বল। আমি কি কোন সাহায্য করতে পারি? বৃদ্ধার মুখ আশায়, আনন্দে উচ্জল হয়ে উঠল। একটুক্ষণ আগেও তার মনে হয়েছে যে, তিনি একলা, কেউ তাকে দেখার নেই। কিন্তু এখন এই ছেলেটি তাকে ‘মা বলে ডাকছে, তাকে সাহায্য করতেও চাইছে। সে বলল, “বাবা, তুমি আমায় এই পিছল রাস্তাটা পার করে দিতে পারবে ? আমার বাড়ী রাস্তার ওপারেই, ঐ দোকানটার পিছনে। মোহন বৃদ্ধার কাঁপাকাঁপা হাতটা নিজের গলার উপর দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে বলল, “আসুন মা, আস্তে আস্তে হেঁটে চলুন। আমি আপনাকে বাড়ী পর্যন্ত পৌছে দিয়ে যাচ্ছি।”
দুজনে যখন একসঙ্গে হাঁটছিল, বৃদ্ধা স্নেহের সুরে মোহনের সঙ্গে কথা বলছিলেন ; তার প্রশংসা করে, তাকে আশীর্বাদ করে, তার জন্যে প্রার্থনা করে, তার মা বাবা, বাড়ীঘর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে নানান কথা বলছিলেন। মোহন যখন তার বাড়ীর দরজায় এসে বিদায় নিল, বৃদ্ধা দুহাত তুলে তাকে আশীর্বাদ করলেন, কৃতজ্ঞতায় তার দুচোখে জল এসে গিয়েছিল। তিনি বললেন, ভগবান তোমায় আশীর্বাদ করবেন বাবা, তিনি সর্বদা তোমায় সুখে রাখবেন। মোহন তার নিজের ভেতরে এক নতুন শক্তি আর আনন্দ অনুভব করতে লাগল। যখন সে বন্ধুদের কাছে গেল, তারা জানতে চাইল যে, একজন অচেনা বৃদ্ধা মহিলাকে সাহায্য করার জন্যে অত ঝঞ্জাট সে পোহাতে গেল কেন ? মোহন গুরুত্ব দিয়ে বলল, “আমার মনে হল, তিনি নিশ্চয়ই কোন একজনের মা, সেইজন্যে আমি তাকে সাহায্য করলাম। একজন বন্ধু বলল, “তার জন্যে তোমার তাঁকে সাহায্য করার কি দরকার ?”একদিন আমার মার বয়স হলে, তার সাহায্যের দরকারে আমি যদি কাছে না থাকি, তখন কেউ না কেউ তাকে এইভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারে।”
মোহনের এই উত্তরে ছেলেরা অভিভূত হল। বন্ধুটি আবার বলল, মোহন তার মাকে নিয়ে খুব গর্বিত মনে হয়। মোহন বলল,“হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, মার জন্যে যে গর্ববোধ না করে সে কখনই সৎ লোক হতে পারে না।’
প্রশ্নঃ
- মোহনের মতো কেন অন্য কারো মাকে ভালবাসা উচিত?
- কিসে বৃদ্ধা মহিলা সুখী হলেন ? মোহন কিসে সুখী হল?
- বাড়ীতে তোমার মা বাবাকে সুখী করার জন্যে যে কোন সৎকাজ তুমি করেছ তার বর্ণনা দাও।